শুক্রবার ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

জেনে রাখা ভালো! পোশাক নিয়ে যতো কথা…

যে কোনো পোশাক কামুক পুরুষকে সিডিউস করে,এমনকি আলখেল্লাও। তা না হলে শিশু শিক্ষার্থীরা কেন ধর্ষিত হয় ধর্মীয় বিদ্যালয়ে? দশম-একাদশ শতকে পালযুগের ভাষ্কর্য ও চিত্রকলায় নারীর পোশাক শাড়ি নয়। 

যাই হোক,শাড়ি যদি আবহমান বাংলার পোশাক হয়েও থাকে,গত এক দেড়শো বছরে এর অন্দরমহলে ঢুকে গেছে দুটি পাশ্চাত্য পোশাক: ব্লাউজ ও পেটিকোট। প্যান্ট/ট্রাউজার মূলত মোঙ্গল পোশাক, ইওরোপে গিয়ে বিবর্তিত হয়ে এশিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেছে! 

একটি পোশাকও পুরোপুরি আমাদের নয়, একটি পোশাকও সম্পূর্ণ শালীন নয়। শালীনতা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার।

যে কোনো পোশাক কামুক পুরুষকে সিডিউস করে,এমনকি আলখেল্লাও….তা না হলে শিশু শিক্ষার্থীরা কেন ধর্ষিত হয় ধর্মীয় বিদ্যালয়ে?  

ওড়না, শাড়ি, হিজাব, টি-শার্ট সব পোশাকই নারী শরীরের বন্ধুরতা কিছুটা ঢেকে অধিকতর কৌতুহলের সৃষ্টি করে।

পোশাকের নিরাপত্তা এবং সুবিধার দিকটাও দেখতে হবে। জেল্লাবা-আলখেল্লা সবচেয়ে ধর্ষণবান্ধব পোশাক,তারপর শাড়ি, তারপর সালোয়ার-কামিজ। 

টি-শার্ট-জিন্স তুলনামূলকভাবে নিরাপদ পোশাক।

।। মূল লেখা।।

“হিজাব-নিকাব যদি সেলাই করা হয়ে থাকে, তবে সেটা আরবে এসেছিল পারস্য থেকে। গ্রীকরা সেলাই করা কাপড় পরতো না, আরবদের মতোই। মুহম্মদের (স.) মক্কা বিজয়ের সময়েও সেলাই করা কাপড়ের ফ্যাশন চালু হয়নি মক্কায়। তখনও হজের মতো সেলাইবিহীন কাপড়ই পরতো নারীপুরুষ। পারসিকদের কাছ থেকেই সম্ভবত রোমান এবং আরবেরা সেলাই করা আলখেল্লার ফ্যাশন পায়। হজরত ওমর (রা.) প্রথম দিকে সীবিত বসনের পারসিক ফ্যাশনের সমালোচনা করেছেন। 

মহাভারতের যুগে নারী দুই খণ্ড কাপড়ে শরীর ঢাকতো এবং রজস্বলা হলে এক বস্ত্রে থাকতো। খ্রিষ্টীয় প্রথম-দ্বিতীয় শতকে পুরুষের গায়ে চাদর, পরনে ধুতি। এর হাজার বছর পরে অজন্তা-ইলোরায়ও শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ দেখা যাচ্ছে না। সালোয়ার-কামিজও সেলাই করা পোশাক এবং তুর্ক-মোগলদের সঙ্গে ইরান থেকে ভারতবর্ষে আসার কথা।

দশম-একাদশ শতকে পালযুগের ভাষ্কর্য ও চিত্রকলায় নারীর পোশাক শাড়ি নয়। যাই হোক, শাড়ি যদি আবহমান বাংলার পোশাক হয়েও থাকে, গত এক দেড়শো বছরে এর অন্দরমহলে ঢুকে গেছে দুটি পাশ্চাত্য পোশাক: ব্লাউজ ও পেটিকোট। প্যান্ট/ট্রাউজার মূলত মোঙ্গল পোশাক, ইওরোপে গিয়ে বিবর্তিত হয়ে এশিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেছে! 

একটি পোশাকও পুরোপুরি আমাদের নয়, একটি পোশাকও সম্পূর্ণ শালীন নয়। শালীনতা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। যে কোনো পোশাক কামুক পুরুষকে সিডিউস করে, এমনকি আলখেল্লাও, তা না হলে শিশু শিক্ষার্থীরা কেন ধর্ষিত হয় ধর্মীয় বিদ্যালয়ে?  ওড়না, শাড়ি, হিজাব, টি-শার্ট সব পোশাকই নারী শরীরের বন্ধুরতা কিছুটা ঢেকে অধিকতর কৌতুহলের সৃষ্টি করে।

পোশাকের নিরাপত্তা এবং সুবিধার দিকটাও দেখতে হবে। জেল্লাবা-আলখেল্লা সবচেয়ে ধর্ষণবান্ধব পোশাক, তারপর শাড়ি, তারপর সালোয়ার-কামিজ। টি-শার্ট-জিন্স তুলনামূলকভাবে নিরাপদ পোশাক। 

(সম্ভবত) ষাটের দশকে ইতালিতে এক ধর্ষণের মামলায় ধর্ষিতা হেরে গিয়েছিলেন, কারণ বিচারকের মতে, ধর্ষণের সময়ে তিনি জিন্স প্যান্ট পরা ছিলেন এবং এমন একটি পোশাক স্বেচ্ছায় খুলে না দিলে ধর্ষণ করা অসম্ভব। বিশ্বব্যাপী তুমুল প্রতিবাদের মুখে বেশ কয়েক বছর পর কর্তৃপক্ষ এই রায় বদলাতে বাধ্য হয়েছিল।”

লিখেছেন ভাষাতাত্ত্বিক ও অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য

Categories: খোলা বাতায়ন

Leave A Reply

Your email address will not be published.