শুক্রবার ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

মনোনয়ন নিয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগ

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে—এমনটি ধরে নিয়ে খুবই সতর্কতার সঙ্গে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। মাঠের ভোট নিশ্চিত করতে প্রার্থী নির্বাচনে জনপ্রিয় ও যোগ্যতার ব্যাপারে ন্যূনতম ছাড় দেয়নি দলটি। বিশেষ করে প্রার্থী নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কেই যেতে চাননি দলের নীতিনির্ধারকরা। প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি যেমন দেখা হয়েছে; তেমনি স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্কও গুরুত্ব পেয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকায় বিগত সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেও আমলে নিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

দলীয় মনোনয়ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসীন হতে আওয়ামী লীগ এবার পুরনোদের ওপরই বেশি আস্থা রেখেছে। তবে পুরনোর মধ্যে যাদের মনোনয়ন দিলে সেসব আসনে দলীয় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারত এবং স্থানীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মধ্যে বিরূপ মনোভাবের আশঙ্কা ছিল; সেসব আসন খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে দল। এ জন্য দলীয় কোন্দলে জড়িত, এলাকায় যোগাযোগ কম থাকা এবং নানা কারণে বিতর্কিতদের এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। সেসব আসনে আনা হয়েছে নতুন মুখ।

আসন নিয়ে জটিলতা দূর করতে না পারায় অন্তত ১০ আসনে দুজন করে প্রার্থীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রার্থী বদলাতেও হতে পারে। অন্য প্রার্থী বেশি শক্তিশালী হলে দলের প্রার্থী বিবেচনা করা হবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় এ ধরনের আসনগুলোয় প্রার্থী নির্দিষ্ট হবে। সে জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের চিঠির সঙ্গে প্রত্যাহারের চিঠিতেও স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনকে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, প্রার্থী নির্বাচনে একটু ভুল হলেই ওই আসন খোয়াতে হবে। সে কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন তৃণমূলে সম্ভাব্য দলীয় কোন্দল ও বিশৃঙ্খলা এড়ানো এবং প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নির্বাচন পরিচালনায় বর্তমান সংসদ সদস্যরাই বেশি সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নতুন প্রার্থী দিলে এসব সংসদ সদস্য নির্বাচনে কী ধরনের ভূমিকা নেবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ জন্য সর্বশেষ গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের চেয়ে এবার মনোনয়ন থেকে পুরনোদের মধ্যে বাদ পড়েছে কম। সেবার দলের ৪৮ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন পাননি।

গত রোববার ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৩০ আসনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। বাকি ৭০ আসনসহ ৩০০ আসনে গতকাল একক প্রার্থী ঘোষণা করার কথা ছিল দলের। কিন্তু কৌশলগত কারণে তা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘কৌশলগত কারণে’ এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে না। যাচাই-বাছাই শেষে জোটগতভাবে তালিকা প্রকাশ করা হবে। যাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

এবার দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই বর্তমান সংসদ সদস্য। অর্থাৎ পুরনোদেরই গুরুত্ব দিয়েছে দল। সেই সঙ্গে আনা হয়েছে ৪৬ জনের মতো নতুন মুখ। এ ক্ষেত্রে বাদ পড়েছেন কমপক্ষে চারজন হেভিওয়েট প্রার্থী। বাদ পড়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে মুহিতের ছোট ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের পরিবর্তে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক সচিব মঞ্জুর হোসেন বুলবুলকে। বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ঢাকা-১৩ আসনে নানকের স্থলে মহানগর উত্তর অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এবং মাদারীপুর-৩ আসনে বাহাউদ্দিন নাছিমের বদলে দলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) তিনটি আসন ইতোমধ্যে বাদ পড়েছে। ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) সালমা ইসলাম বর্তমান সংসদ সদস্য। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। চট্টগ্রাম-৯ আসনে জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কুমিল্লা-২ আসন জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আমির হোসেন। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সেলিমা আহমেদকে। মনোনয়নের মধ্য দিয়ে এবারই প্রথম সংসদী রাজনীতিতে আনা হয়েছে শেখ পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীনের একমাত্র ছেলে শেখ সারহান নাসেরকে (তন্ময়) মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বাগেরহাট-২ আসনে।

এবারের নির্বাচনে অন্তত ৪৬ জন নতুন মুখকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক সচিব, সাবেক আইজিপি, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এবারই প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—কিশোরগঞ্জ-২ আসনে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ, সিলেট-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন, মাগুরা-১ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস-২) এবং ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান শিখর, নড়াইল-২ আসনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল নেত্রকোনা-৩ আসনে, কেন্দ্রীয় দুই সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক (শামীম) শরীয়তপুর-২ ও প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) চট্টগ্রাম-৯ আসনে, শরীয়তপুর-১ আসনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন (অপু), মাদারীপুর-৩ আসনে দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান (গোলাপ), পিরোজপুর-১ আসনে শ ম রেজাউল করিম, ঢাকা-১৩ আসনে ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ছেলে নিজামউদ্দিন জলিল নওগাঁ-৫ আসনে ও টাঙ্গাইল-৬ আসনে ঢাকার সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে আহসানুল ইসলাম (টিটু)।

গত নির্বাচনের বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীকেও এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তারা ওই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেন এবং তাদের অনেকেই বিজয়ীও হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঢাকা-৭ আসনে হাজী মো. সেলিম ও যশোর-৫ আসনে স্বপন ভট্টাচার্য। মনোনয়নের তালিকায় রয়েছেন ১৬ নারী। তাদের মধ্যে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ ও রংপুর-৬ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২, সভাপতিম-লীর সদস্য সাহারা খাতুন ঢাকা-১৮, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি চাঁদপুর-৩, সিমিন হোসেন রিমি গাজীপুর-৪, মাহাবুব আরা বেগম গিনি গাইবান্ধা-২, ইসমাত আরা সাদেক যশোর-৬, হাবিবুন্নাহার বাগেরহাট-৩, মুন্নুজান সুফিয়ান খুলনা-৩, রেবেকা মোমনি (নেত্রকোনা-৪), সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি মুন্সীগঞ্জ-২, মেহের আফরোজ চুমকি গাজীপুর-৫, জয়া সেনগুপ্তা সুনামগঞ্জ-২, মমতাজ বেগম মানিকগঞ্জ-২, সেলিমা আহমেদ কুমিল্লা-২ ও শাহীন আকতার চৌধুরী কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নৌকার টিকিট পেয়েছেন।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/ইলিয়াছ

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.