অনলাইন ডেস্ক:- ২০১৯ সালের শেষের দিকে কোভিড আক্রমণ শুরু হয়। তার পর থেকে দেড় বছর অতিক্রান্ত হলেও কোভিডের আক্রমণ কমেনি। শুধু কোভিড নয়। কোভিডের পাশাপাশি আরও অনেক সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। নারীদের ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। কেন এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে? কীভাবে বোঝা যাবে যে নারীরা হৃদরোগে আক্রান্ত
হার্ট ভালো রাখার জন্য নারীদের কী কী করণীয়?
হার্টের কোনও সমস্যা থাকলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে। বর্তমান সময়ে এটি অত্যন্ত সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে ভুগছেন। এক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সমান।
কিন্তু শারীরভাবে বিভিন্ন কারণে হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী সময়ে নারীদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের যে উপসর্গ দেখা যায় তা পুরুষদের থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। এমনকী নারীদের ক্ষেত্রে উপসর্গ অনেক সময় বোঝাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে কোনো নারী হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে তা বুঝতে বেশ কিছুটা সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসকদের। রোগীর চিকিৎসা পেতেও দেরি হচ্ছে।
হার্টের গঠনে পার্থক্য
নারীদের হৃদয় তুলনামূলকভাবে পুরুষদের থেকে ছোট হয়। ফলে ভিতরের প্রকোষ্ঠগুলোও ছোট হয়। এছাড়াও হার্টের দেওয়ালগুলো তুলনামূলক পাতলা হয়। এ কারণে প্রতিবার পাম্পের জেরে পুরুষের হৃদয় থেকে যে পরিমাণ রক্ত পাম্প করা হয় নারীদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ রক্ত কম পাম্প করা হয়। নারীরা যখন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করেন তখন তাদের হৃদয় অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করে। ফলে রক্তচাপ অনেকটা বেড়ে যায়। এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে। কীভাবে এ সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া সম্ভব? জেনে নেওয়া যাক…
যে সব সমস্যা নারীর ওপর বেশি প্রভাব ফেলে
বেশ কিছু হার্টের সমস্যা এবং অন্য শারীরিক সমস্যা শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। সেগুলো হার্টের জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে এন্ডোম্যাট্রিওসিস, পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিস, মধুমেহ এবং গর্ভাবস্থার সময়ে যদি রক্তচাপ তৈরি হয় তাহলে তা হার্টের জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও যদি নারীদের উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ব্লাড সুগার, কোলেস্টরলের মাত্রা বেশি থাকলে এবং নারীরা যদি ধূমপান করেন তাহলেও তাদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি থাকে।
নারীরা বুকে যন্ত্রণা অনুভব করেন না
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত সাধারণ উপসর্গ হলো বুকে যন্ত্রণা। রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা দেখা হলে যখন হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা দেখা দেয় তখন বুকে যন্ত্রণা হওয়া স্বাভাবিক। এমন অনেক বিষয় সামনে এলেও বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে যন্ত্রণা হয় না। বরং তাদের ক্ষেত্রে অন্য বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।
কিন্তু সেগুলো দেখে সাধারণভাবে বোঝা সম্ভব নয় যে সেগুলো হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ। এবং সঠিক সময়ে উপসর্গ না বুঝতে পারায় চিকিৎসা শুরু হতে অনেক দেরি হয়। ফলে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু হয়। তবে এটাও ঠিক অনেক ক্ষেত্রে নারীরা বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয়।
বয়স
নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একটু বেশি বয়সীদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে বেশি। তুলনামূলকভাবে পুরুষদের কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কারণ নারীদের শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের জন্য মেনোপজের পরেও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থেকে রক্ষা হয়। কিন্তু ৬০ বছর পর এস্ট্রোজেনের পরিমাণ যখন কমে যায় তখন হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এমনকী এ বয়সের পরে একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হন নারীরা। যেমন উচ্চ রক্তচাপ। এ সমস্যাগুলোর জন্যও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে।
নারীদের ক্ষেত্রে কী কী উপসর্গ প্রকাশ হতে পারে?
নারীদের ক্ষেত্রে সব সময় পুরুষদের মতো হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলো প্রকাশ পায় না। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ৫টি ভিন্ন উপসর্গ থাকে। যা দেখে বোঝা সম্ভব কোনো নারীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
৫টি উপসর্গ কী কী?
বুকে অস্বস্তি অনুভব হতে পারে- নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে যন্ত্রণা হয় না। তার পরিবর্তে তারা বুকে অস্বস্তি অনুভব করেন। বুকের মধ্যে চাপ দিলে যেমন অনুভব হয় সেই একই চাপ অনুভব করেন তারা।
হাত, ঘাড় এবং পিঠে ব্যথা অনুভব হওয়া- নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হলে হাত, ঘাড় এবং পিঠে ব্যথা অনুভব হতে পারে। এগুলো অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হয়।
পাকস্থলীতে ব্যথা- পাকস্থলী এবং গোটা পেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে। জ্বালা পোড়া অনুভব হতে পারে।
শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা- আচমকা শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে। তাই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
ক্লান্তি- ক্লান্তি এবং বমি ভাব নারীদের হার্ট অ্যাটাকের দেখা গেছে। এক্ষেত্রেও আচমকা ক্লান্তি ভাব আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এ ধরনের সমস্যা উপেক্ষা করলে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে এ ৫টি উপসর্গ দেখা দিলে হার্ট আট্যাকের আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এ উপসর্গগুলোকে কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
বাঁচার উপায় কী?
বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তার মধ্যে একটি হলো সঠিক খাদ্যাভাস। জাঙ্ক ফুড ও বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। খাদ্য তালিকায় খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ এমন খাবার রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রতিদিন সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও কাঁচা লবণ খাওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে শারীরিক যোগব্যায়ামের কথা বলেছেন তারা। দৈনিক নির্দিষ্ট দূরত্বে হাঁটতে হবে। এবং সমতল রাস্তায় হাঁটা প্রয়োজন। এর সঙ্গে যোগব্যায়াম এবং অন্য শরীরচর্চার ওপর জোর দিতে হবে। তার সঙ্গে ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। কারণ ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ।
বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা