মঙ্গলবার ৩ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ মঙ্গলবার

আদালত বিচারপতি এসকে সিনহার মামলার রায় ৫ অক্টোবর

অনলাইন ডেস্ক:- বিচারপতির বিচারের রায় জানা যাবে আগামী ৫ অক্টোবর। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে। দুদকের দায়েরকৃত সেই দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহন, আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি গড়িয়েছে রায়ের পর্যায়ে। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুদক ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ওইদিন ধার্য করে দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার পরই জানা যাবে বিচারপতি সিনহাসহ ১১ আসামি দণ্ডিত হয়েছেন কিনা।

বিচারপতি এসকে সিনহা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। এই মামলায় পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা রয়েছে। পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারান তিনি। কোন মামলায় দেশের সাবেক কোন প্রধান বিচারপতি এই প্রথম বিচারের মুখোমুখি হলেন। বিচারপতি সিনহা ছাড়াও অপর আসামিরা হলেন: ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম শামীম, ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায় ও সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তাঁর স্ত্রী সান্ত্রী রায়। এর মধ্যে বিচারপতি সিনহাসহ মোট চার আসামি পলাতক রয়েছেন।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে বিচারপতি সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলা করেন। তদন্ত শেষে দাখিলকৃত মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ফারমার্স ব্যাংকে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার নামে মঞ্জুরীকৃত ঋণের ৪ কোটি টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সুপ্রিমকোর্ট সোনালী ব্যাংক শাখার হিসাবে জমা হয়। একটি সঞ্চয়ী হিসাবে জমা হওয়ার পর ওই টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর করে উত্তোলন করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করতে এ ধরনের অপরাধ করেন। তারা অবৈধভাবে ভুয়া ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন পে-অর্ডারের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়র নামীয় হিসাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। পরে সেই অর্থ নিজেদের ভোগদখলে রেখে তার অবৈধ প্রকৃতি, উৎস অবস্থান গোপন বা এর ছদ্মাবরণে পাচার করেছেন মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হয়। যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই মামলায় গত বছরের ১৩ আগস্ট সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিশেষ জজ আদালত। ওই বছরের ১৮ আগস্ট থেকে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২১ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।

দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন সাজা চেয়ে আদালতে আবেদন জানান। আদালতে উপস্থিত থাকা সাত আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ও শাহীনুর ইসলাম যুক্তিতর্ক পেশ করেন। তারা আসামিদের খালাস দাবি করে ন্যায় বিচার চান। এরপর বিচারক ৫ অক্টোবর রায়ের জন্য দিন ধার্য করে দেন বলে জানান আইনজীবীরা।

২০১৭ সালের অক্টোবরে ছুটিতে যান বিচারপতি সিনহা। ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/ব্রিজ

Categories: আইন-আদালত

Leave A Reply

Your email address will not be published.