শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

বাইডেনকে লজ্জায় পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক :-মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তান দখল করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান। এ ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার (১৫ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, ‘জো বাইডেন আফগানিস্তানে যা ঘটতে দিয়েছেন তার জন্য লজ্জায় তার পদত্যাগ করা উচিত।’ তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার আরও ভিন্নভাবে এবং আরও সফলতার সঙ্গে হতো বলে দাবি করেন।

এমন সংবাদের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের তরফ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা সমালোচনা করে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর ট্রাম্পের আমলেই হয়েছে। তবে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সেনা প্রত্যাহার কিভাবে হবে তার দায়িত্ব বাইডেন প্রশাসনের উপর ছিল।

দুই দশক পর তালেবান যে গতিতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন স্বীকার করছেন যে তারা আফগান বাহিনীর সামর্থ্য আরও বেশি বলে অনুমান করেছিলেন।

রোববার (১৫ আগস্ট) আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে চতুর্দিক থেকে ঢুকতে শুরু করে দেশটির অপ্রতিরোধ্য সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।

আফগানিস্তানের বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানায়, পতনের মুখে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। আগে থেকেই সেখানে সব দপ্তর খালি করে দিয়েছে আশরাফ গনি সরকার।

সে সময় আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এক টুইট বার্তা বলেছিলেন, ’আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। কাবুলে কোনো সমস্যা হয়নি। কাবুল এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

রাজধানী কাবুল ঘেরাও করার পর তালেবান ও আফগান সরকারের কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আলোচনা করেন। সেখানে তালেবান সৈন্যরা কাবুল ঘেরাওয়ের পর ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনা চলছিল বলে হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

গোষ্ঠীটি বলেছিল, তারা তালেবান সেনাদের নির্দেশ দিয়েছে যে তারা যেন সহিংসতা না করে এবং কেউ যদি কাবুল ত্যাগ করতে চায় তাকে যেন বাধা না দেওয়া হয়।

গোষ্ঠীটির একজন মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় বলেন, ট্রানজিশন (ক্ষমতা হস্তান্তর) প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব আফগান সরকারের।

এরপরেই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন। তিনি তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন। এর বেশি কিছু প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার স্বার্থে বলা হয়নি।

তালেবান কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা প্রেসিডেন্টের বিদেশ গমনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ত্যাগ করার পর আফগানিস্তানের কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নেওয়ার দাবি করে তালেবান।

স্থানীয় সাংবাদিক বিলাল সারওয়ারির মতে, চুক্তির একটি অংশ ছিল যে গনি প্রাসাদের অভ্যন্তরে ক্ষমতা পরিবর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি ও তার জ্যেষ্ঠ সহযোগীরা দেশ ছেড়ে চলে যান।

এরপর তালেবানরা প্রাসাদের কর্মচারীদের চলে যেতে বলে এবং প্রাসাদটি তখন খালি ছিল। প্রাসাদ দখলের খবর কোনো সরকারি কর্মকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে জানানো হয়।

দেশত্যাগ করার প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে রোববার (১৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, রক্তপাত এড়াতে তিনি দেশ ছেড়েছেন তার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না।

বিবৃতিতে আশরাফ গনি জানিয়েছেন, তালেবানরা জিতেছে তাই সম্পদ, সম্মান এবং নিজ দেশের জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব এখন তাদের। এ ছাড়া তিনি সংঘাত এড়ানোর জন্য কাবুল ছেড়েছেন কারণ, সেখানে লাখ লাখ মানুষ ঝঁকির মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমার উচিত ছিল সশস্ত্র তালেবানদের মুখোমুখি হওয়া। অথবা আমি গত ২০ বছর ধরে যে দেশকে রক্ষা করতে জীবন উৎসর্গ করেছি, সেই প্রিয় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। আর আমি যদি মুখোমুখি হতাম এতে অগণিত দেশবাসী মারা যেত। ধ্বংসের মুখোমুখি হতো কাবুল শহর। তালেবানরা কাবুলের লোকদের ওপর হামলা করত। তাই রক্তপাত এড়াতে দেশ ছাড়াকে শ্রেয় মনে করেছি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘তালেবানরা তলোয়ার ও বন্দুকের বিচারে জিতে গেছে। ইতিহাস কখনো অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়নি এবং দেবেও না। আমি সব সময় আমার জাতির সেবা করে যাব।’

এদিকে, তালেবানরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ প্রায় সব প্রদেশ দখল করে নেওয়ার পর এখন চলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা। এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আহমাদ জিলালির নাম উঠেছে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে জালালির নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন তালেবান দেবে কিনা, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের জন্য এখন পর্যন্ত জালালিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা

Categories: আন্তর্জাতিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.