বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

পারিবারিকভাবেই মানব পাচার চক্র গড়ে তুলেছিলো রুবেল সিন্ডিকেট

অনলাইন ডেস্ক :- বাংলাদেশের একশ্রেণীর অসাধু দালাল চক্র স্বল্প আয়ের মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগসাজশে বিদেশে অবৈধভাবে মানব পাচার করছে। ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে মানব পাচারের আন্তর্জাতিক চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট ‘রুবেল সিন্ডিকেট’ এর প্রধান সমন্বয়ক ইউরো আশিকসহ ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

রবিবার ( ১১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেফতারকৃতদের নিকট হতে উদ্ধার করা হয় ১৭টি পাসপোর্ট, ১৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ০২টি এটিএম কার্ড, ১৫টি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা প্রদানের বই, ০২টি হিসাব নথি, ০২টি এনআইডি, ১০টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৫৬ হাজার ৬৭০ টাকা।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে শনিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ আশিক (২৫), মোঃ আজিজুল হক (৩৫), মোঃ মিজানুর রহমান মিজান (৪৩), নাজমুল হুদা (৩১), সিমা আক্তার (২৩), হেলেনা বেগম (৪২), পলি আক্তার।

কমান্ডার মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মানব পাচারের ঘটনায় র‌্যাব মানব পাচার চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রটি বিদেশী চক্রের যোগসাজশে অবৈধভাবে ইউরোপে মানবপাচার করে আসছে। সিন্ডিকেটটি ৩টি ধাপে মানবপাচারের কাজ করে আসছিল।

সম্প্রতি গত ২৮ ও ২৯ জুন অবৈধভাবে ইউরোপে গমনকালে ভূমধ্যসাগরের তিউনেশিয়া উপকূলে নৌকা ডুবিতে প্রায় ৪৩ জন নিখোঁজ হয়। তিউনেশিয়ার উপকূল থেকে বিধ্বস্ত নৌকা হতে ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়। তারমধ্যে বাংলাদেশ, সুদান, মিশর, ইরিত্রিয়া ও চাঁদের নাগরিক রয়েছে বলে জানা যায়। আজও ৪৯ বাংলাদেশী উদ্ধারের সংবাদ জানা গিয়েছে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চক্রটি দেশীয় এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে গমনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। গমণেচ্ছুকদের বিদেশে গমনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকেট ক্রয়সহ যাবতীয় কাজ সিন্ডিকেট নিজস্ব চেইনে সম্পন্ন করতো। তবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি পাচার চক্রের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেয়। পরবর্তীতে তাদেরকে এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপ গমনে তারা ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার অধিক অর্থ নেয়। সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় গমনের পূর্বে এবং বাকি টাকা লিবিয়ায় গমনের পর ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে নেয়।

গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, চক্রটি ভূমধ্যসাগরে নিহত গত কয়েকটি নৌকা ডুবি ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত বাংলাদেশীদের পাচার করেছিলো। চক্রটির মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ বাংলাদেশী অবৈধপথে ইউরোপে পাচারের শিকার হয়েছেন অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, রুবেল ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত লিবিয়া অবস্থানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সাথে বিশেষ যোগসাজশ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়াতে মানব পাচারসংক্রান্ত রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় রুবেল দুবাইয়ে অবস্থান করে সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করছে। রুবেল বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মূল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/ব্রিজ

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.