শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগকে সচল করতে ভাত খাওয়ার দাওয়াত এমপিদের

অনলাইন ডেস্ক : তাণ্ডব ঠেকাতে ব্যর্থতার দায়ে এরইমধ্যে বদলি হয়েছেন একদল পুলিশ কর্মকর্তা। থানার ওসি, এএসপি, এডিশনাল এসপি, এস আই মিলিয়ে এই সংখ্যা ২০। অন্যদিকে তাণ্ডবের ৫৫ মামলায় গ্রেপ্তার ৫০০ ছাড়িয়েছে। এবার তাণ্ডব ইস্যুতে জেলায় সরকারি দলের নেতৃত্বের দায়-দায়িত্ব নিরূপণ, সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। জেলার সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে আগামীকাল রোববার সংসদ ভবনে বৈঠকে বসছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সায়ীদ আল মাহমুদ স্বপন। জেলার সংসদ সদস্যদের একজন বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সংসদ অধিবেশন শেষে দুপুরে ভাত খাওয়ার দাওয়াত দেয়া হয়েছে তাদের। খাওয়ার পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দলের বর্তমান পরিস্থিতি এবং দলকে গতিশীল করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানান তিনি।
তবে অন্য সূত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের একটি বর্ধিত সভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি জেলার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর বিষয়ে আলোচনা হবে ওই বৈঠকে।

তাণ্ডবের ঘটনার পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে ধরনা দিয়ে কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। ওই ঘটনায় জেলা নেতৃত্বের ব্যর্থতার সমালোচনা ছাড়াও আরও নানা অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ২৭শে মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের একটি মিছিলের কারণে পরিস্থিতি বেসামাল হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। ওই মিছিল থেকে শহরের কান্দিপাড়াস্থ বড় মাদ্রাসা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় বলে জেলা নেতাদের কাঁধে দোষ চাপানো হয়। যদিও এই অভিযোগের জবাবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলে আসছেন, তার নেতৃত্বে হওয়া মিছিলটি যদি উস্কানির কারণ হয় তাহলে ২৬শে মার্চ শহরে যে তাণ্ডব হয়, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন অফিস আগুনে পুড়ানো হয় এর উস্কানি দিয়েছিলো কে? আর মিছিল থেকে কোথাও কোনো হামলা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে ২৭শে মার্চের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংগঠিতভাবে আর মাঠে নামতে দেখা যায়নি। দলের এই নির্জীব দশার জন্য জেলা নেতৃত্বকে ঘুরেফিরে কেন্দ্রে দায়ী করে চলেছে একটি পক্ষ। ঘটনার পর নির্লিপ্ত থাকা, সদরে এসে সহানুভূতি প্রকাশ না করার সমালোচনায় গায়েল করা হয় জেলার অন্যান্য আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদে জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের এই সমালোচনা সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এমনি অবস্থায় জেলার ৪টি আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের সামনে রেখে একটি গ্রুপ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বের জোরালো বিরোধিতায় নামে। এরপর থেকেই জেলা নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে, মোকতাদির চৌধুরী ও আল মামুন সরকার মাইনাস হচ্ছেন, আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে, এমন নানা আলোচনা ছড়াচ্ছে প্রতিদিন।
দলীয় সূত্র জানায়- জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা দলে দলে ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। তাদের কেউ কেউ মোকতাদির চৌধুরীর, কেউ কেউ আল মামুন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছেন। গত বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, তাজ মো. ইয়াছিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম খোকনের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এই গ্রুপের একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম খোকন বলেন, আমরা শুনছি ঢাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কমিটি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। এডহক কমিটি হবে, নাকি সম্মেলন হবে। এই প্রেক্ষিতে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্মেলনের মাধ্যমে দ্রুত কমিটি করার দাবি জানিয়ে এসেছি।

কারো বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। জেলার নেতাদের এই তৎপরতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। তিনি বলেন, তারা গিয়ে থাকলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেই গিয়েছেন। যেকোনো বক্তব্য কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাতেই পারেন। এটা দোষের কিছু নয়। অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বরাবরই সক্রিয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান আনসারী, শাহজাহান সাজু, আবদুল হান্নান রতন। ২০১৪ সালের ২৯শে ডিসেম্বর সম্মেলন হয় জেলা আওয়ামী লীগের। এরপর ২০১৫ সালের মে মাসে জেলা কমিটি কেন্দ্রীয় অনুমোদন পায়। দলের সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার তোড়জোড় শুরু হয়েছিলো। এ লক্ষ্যে ওই বছরের জুলাই মাসে জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় আশুগঞ্জ, সরাইল, আখাউড়া, কসবা, সদর, শহর ও বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরমধ্যে বিজয়নগর, সদর উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগ এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়। পরে ওই বছর আর সম্মেলন হয়নি। পরের বছর করোনা সংক্রমণের কারণে একেবারেই চাপা পড়ে সম্মেলনের বিষয়টি। কসবা, আখাউড়া এবং নবীনগর উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেও করোনার কারণে সম্মেলন সম্পন্ন করা যায়নি বলে দলের সূত্র জানায়। এরপর পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে এলে সম্মেলনের বিষয়টি আবারো চাপা পড়ে। গত ২৬, ২৭ ও ২৮শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত ইসলামের ভয়াবহ তাণ্ডবের পর দলের সাংগঠনিক শক্তির দুরবস্থার বিষয়টি সামনে আসে। অর্ধশত সরকারি-বেসরকারি অফিসে হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয় হেফাজত সমর্থকরা। কিন্তু এর প্রতিবাদ-প্রতিহতে দলের নেতাকর্মীদের কেউই মাঠে নামেননি। বরং আত্মগোপনে চলে যান।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/ব্রিজ

Categories: জাতীয়

Leave A Reply

Your email address will not be published.