মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

খুলনায় মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব

অনলাইন ডেস্ক:-খুলনার মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার উৎসব। মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের সমারোহ। পাকা ধানের শীষ দুলছে বৈশাখী বাতাসে। ধানের ম ম ঘ্রাণে খুশির ঝিলিক কৃষকের চোখে-মুখে। ধান কাটতে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবার বীজতলা থেকে শুরু করে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পুরো মৌসুমই সেচের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। তারপরও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার খুলনা জেলায় ধানের আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান শেখ বলেন, ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার সুরভী-১ নামে একটি নতুন জাতের ধান লাগিয়েছি। এর আগে ২৮ ধান লাগাতাম। তবে রোগবালাই, পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে সুরভী ধান চাষ করেছি। ধানটি খুব পুষ্ট হয়েছে। দেড় বিঘা জমিতে ধান লাগাতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে ধানের মণ ১ হাজার টাকা। এবার ৪০ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

একই মাঠে ধান কাটছিলেন মো. রাকিবুল হাসান শেখ। তিনি বলেন, আমি কৃষি, ঘের ও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এখন ধান কাটার মৌসুমে ধান কাটছি। আশপাশের অনেক মাঠের ধান বৈশাখের ১৫ তারিখ পর্যন্ত কাটা হবে। সুরভী ধানটি খুবই সুন্দর। ভালো ফলন হয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরোর আবাদ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ বেশি হয়েছে।

তিনি জানান, গত বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরোর আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টরে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৯২ টন। আর চালের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ হাজার ৬৩২ টন। উপজেলায় চালের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ৫৫ হাজার টন। এর মধ্যে আউশ আবাদ হয় ৩২০ হেক্টরে এবং আমন ১৫ হাজার ৬২৫ হেক্টরে।

মোছাদ্দেক হোসেন জানান, এ বছর ৮ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় ২ কেজি করে হাইব্রিড এসএলএইটএইচ বীজ, ৫৪০ জন কৃষককে ২ কেজি হাইব্রিড ধান বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মাঠে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। আর ১০-১৫ দিন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক অন্যবারের তুলনায় বাম্পার ফলন পাবেন।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এবার ৫৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে হাইব্রিড ধানের ফলন ভালো হয়। তবে লবণাক্ততা ও পানি সংকটে কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েন। ফলে মধ্য অক্টোবর থেকে ধান রোপণ শুরু হলেও কেউ কেউ দেরি করে বীজতলা প্রস্তুত করেছেন। যে কারণে এবার কৃষকের গোলায় ধান উঠতে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত লেগে যাবে। তারপরও আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.