মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

মন্দির মাটির নিচে, পঞ্চাশ বছর! হায় সম্প্রীতির বাংলাদেশ!

অনলাইন ডেস্ক:- আমাদের সম্প্রীতির এই বাংলাদেশ মসজিদ, মন্দির গির্জা সহ প্রতিটি উপাসনালয়ের ওপর সরকারের শুভ দৃষ্টি কামনা করছি। বাংলাদেশের ধর্মীয় উপাসনালয় রাজনীতির বাইরে থাকুক, এটাই আমাদর কাম্য। ঝালকাঠি জেলা সদরের শেখের হাটের মানুষের বুক ফাটলেও, মুখ খোলেন না। শেখের হাট এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বিরাজ করছে আজো। মাননীয় সাংসদশেখের হাট এলাকার সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষের চাপা কান্না আপনি কি শুনতে পান? শেখের হাটের সনাতন ধর্মের মানুষরা, ভালো নেই।

নানা সংকটে জর্জরিত এই সম্প্রদয়ের নারী-পুরুষ। তাঁরা বেঁচে আছেন দৈবক্রমে। দৈনতা তাঁদের নিত্য দিনের সাথী। এক সময় শেখের হাটের তাঁতীপল্লী ছিলো জমজমাট। দিন-রাত তাঁতের শব্দ, কীর্তন-পূজা সব মিলিয়ে মানুষের কোলাহল ছিলো। পরিবেশ ছিলো আনন্দ মুখোরিত।আজ তাঁত নেই। তাঁতী পাড়াও নেই। কতিপয় মৃতপ্রায় তাঁতী পরিবার থাকলেও, তাঁরা পেশা পরিবর্তন করে বেঁচে আছেন কোন প্রকার। তাঁদের কোনো উপাসনালয় নেই। মঠ-শ্মশান ও মন্দিরের চিহ্ন টুকুও নেই। ঢাক-ঢোল, শাখ-শঙ্খের আওয়াজ নেই, পূজো নেই, কীর্তন নেই, প্রসাধও নেই। কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই।আছে শুধুই ক্ষুধার যন্ত্রনা।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীনতা লাভের আগেই শেখের হাট বাজারের ঋৃষি পল্লীর মন্দিরটি ধ্বংস করে দেয়া হয়। নর ঘাতক পাক হায়নাদের তান্ডবে সনাতন ধর্মের উপাসনালয় গুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হায়েনার দল এসব মন্দিরের স্মৃতি চিহ্নটুকুও রাখেনি। আমাদের মহান স্বাধীনতার প্রায় দুই যুগ পূর্বে শেখের হাট বাজারে একটি সুন্দর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন ঋৃষি পল্লীয় রামখেলাবন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর তান্ডবে মন্দিরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। শেখের হাট বাজারের পোষ্ট অফিসের পাশের মাটি খুড়লেই মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাবে।

মন্দিরের ছাদ, দেয়াল, ইট সবই এখন মাটির নিচে। মাননীয় সংসদ, দেশে সরকার যায়, সরকার আসে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্প্রীতির বাংলাদেশের এ যাবৎ কোনো সরকার শেখের হাট বাজারের মন্দিরটি পুনঃ নির্মান করেনি। আজো কোনো জনপ্রতিনিধির নজরে আসেনি মন্দিরটি । শেখের হাট বাজারের ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরটি আমি আপনার মাধ্যমে একজন অতি সাধারন নাগরিক হয়ে, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে মুন্দির পুনঃ নির্মানের দাবি জানাই। আমাদের সোনার বাংলা, সম্প্রীতির বাংলাদেশ। মাননীয় সংসদবাংলাদেশ বিশ্বের কাছে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। তবে আপনার সংসদীয় এলাকা ঝালকাঠি সদরের শেখের হাটে উন্নয়নের ছোঁয়া কতোটা লেগেছে, তা হয়তো আপনার জানা নেই। কেননা, আপনার তো, এই এলাকায় পদার্পন নেই। আপনার সংসদীয় এলাকা শেখের হাট একটি অবহেলিত এলাকা, অবহেলিত জনপদ। আমাদের শেখের হাটের ইউ,পি চেয়ারম্যান সাহেবেও ইদানিং এলাকায় বসবাস করছেন না। তিনিও বসবাস করেন জেলা শহরে। শেখের হাটের ইউ,পি চেয়ারম্যান এবারও সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমার্থন পেয়ে নির্বাচন করছেন। তাঁেক অভিনন্দন

মাননীয় চেয়ারম্যান সাহেব আপনার এলাকায় কেনো সন্ত্রাস চলছে? কেনো এই নারকীয় তান্ডব? তৃণমূলে, বিশেষ করে শেখের হাটের মানুষ আজ অশান্ত। আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সরকারকে বিতর্কীত করে ফেলেছেন, যা আমাদের কাম্য নয়। আপনার বিতর্কীত কর্মকান্ডের দ্বায়ভার সরকার গ্রহন করবে কি??? ইদানিং আপনার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠি জেলার শেখের হাটে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, তা বিগত দিনে শেখের হাটবাসী দেখেননি। এটা শেখেরহাট বাসীর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। মননীয় চেয়ারম্যান সাহেব, আপনি জন প্রতিনিধি, দয়া করে জন কল্যান মূলক কাজে অংশ নিন। নোংরা রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন। মসজিদ, মন্দির, তথা ধর্মীয় উপাসনালয়ের দিকে দৃষ্টি দিন। আপনার এম.পি সাহেবকে অবহেলিত মানুষের কথা বলুন। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই, রাস্তা ভাঙ্গা, যানবাহন চলাচলে ঝুকি এসব নিয়ে রাজনীতি করুন। এতে জন সাধারণ উপকৃত হবেন।

গত ৩১ মার্চ সকালে আমার জন্মস্থান শেখের হাটে পৌছি। পড়ন্ত বিকেলে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দিন খাঁন স্যারের বাড়ীতে যাই। স্যারের পায়ের ধূলা নিয়ে কিছুটা সস্তি পেলাম। শৈশবের অনেক স্মৃতি হৃদয়ে ভীড় করলো। খায়ের হাট এফ হক উচ্চ বিদ্যালয়ের আমার শ্রদ্ধেয় সকল শিক্ষকের অবয়ব স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠলো। আমার প্রধান শিক্ষক শ্রী মাখন লাল দাস, সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ মকবুল আহমেদ সরুজ স্যার, শ্রী জগদীস স্যার, শ্রী মিন্টু লাল সাহা স্যার প্রমুখ। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরুজনদের মধ্যে অনেকেই আজ আমাদের মাঝে নেই। এ পৃথিবী থেকে চিরনিদ্রার চলে গেছেন। আমি সকল শিক্ষা গুরুর আত্নার শান্তি কামনা করি। নাসির উদ্দিন স্যার সহ যাঁরা বেচেঁ আচেন, তাঁেদর সুস্বাস্থ কামনা করি।জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন খাঁন স্যারকে আমি শৈশবেই পেয়েছিলাম। স্যার পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানাধীন সেহাংগলে জন্মগ্রহন করলেও, শেখের হাটে বসতি স্থাপন করেন। ১৯৭৬ ইং সালে মোঃ নাসির উদ্দিন খাঁন স্যার খায়ের হাট এফ হক উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। শেখের হাটে শিক্ষকতার শুরুতেই তিনি, শেখের হাট বাজারেই বসবাস করতেন। স্যার একজন ধার্মীক মানুষ। তিনি তাবলীগ জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলেন। মোঃ নাসির উদ্দিন স্যার স্কুল ছুটির পর থেকে শেখের হাট বাজারে, মোজাম্মেল হক খাঁন ছাবু সাহেবের সঙ্গেই কাটাতেন। মোজাম্মেল হক খাঁন ছাবু সাহেবও তাবলীগ জামায়াতের সাথে জরিত ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জনাব মোজাম্মেল হক খাঁন ছাবু সাহেব ধর্মীয় কাজ করে গেছেন। তিনি দেশ-বিদেশের তাবলীগ জামায়াতের মেহমানদের খেদমত কার গেছেন।শেখের হাটের ঘরে ঘরে তিনি ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিতেন।

স্বাধীনতার পূর্বে শেখের হাট বাজারে কোনো মসজিদ ছিলো না। কয়েকজন ধর্মপ্রান মানুষ এবং মোঃ নাসির উদ্দিন স্যার শেখের হাট বাজারে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠির জন্য মোজাম্মেল হক খাঁন ছাবু সাহেবের সাথে কাজ শুরু করেন। বাজার মসজিদ প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নে, মোঃ নূর মোহাম্মদ খাঁন নুরুমিয়া, মোঃ সুলতান আহমেদ খাঁন ছুনু মিয়া এবং তাঁর পুত্র মোজাম্মেল হক খাঁন ছাবু মিয়া অগ্রনী ভূমিকা পালক করেন। মসজিদের ভূমি দান থেকে শুরু করে নানা নির্মান কাজ করতে থাকেন। কাঠ এবং টিনের একটি মসজিদ বাজারে নির্মান হলে, শেখের হাট বাজারের মুসুল্লিগন আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ পান। সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায় সহ, দোয়া মাহফিল এবং তাবলীগের বয়ান হতো। শেখের হাট বাজারের বর্তমান নতুন আধুনিক জামে মসজিদটি দেখে আমার ভীষন ভালো লাগেছে। আমাদের শেখের হাটের গর্বীত সন্তান, জিয়াউল আহসান সাহেবের নিজস্ব অর্থায়নে শেখের বাজারের মসজিদটি আধুনিকায়ন করা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে নেক হায়াত দান করুন।

বিষেরবাশী.কম / ডেস্ক / নাসিম আনোয়ার / রূপা

Categories: খোলা বাতায়ন,জাতীয়,রাজনীতি

Tags:

Leave A Reply

Your email address will not be published.