মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

রূপগঞ্জে বিদেশে চাকরির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ১৫ পরিবার

অনলাইন ডেস্ক:-  নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রতারকের ফাঁদে পড়ে ১৫টি কৃষক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। বিদেশে চাকরি দেয়ার নামে এক প্রতারক চক্র এ প্রতারণা করেন। প্রতারকরা ওই পরিবারগুলো থেকে ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুধু রূপগঞ্জেই নয়, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ওই প্রতারকচক্র প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। প্রতারকদের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলাও রয়েছে। রয়েছে তিন বছরের সাজাও।

নিঃস্ব এসব পরিবার মামলা করে এখন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করা হলেও প্রতারকরা মামলার বাদীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলার বাদীসহ অভিযোগকারীরা।

প্রতারক চক্রের মূল হোতা গ্রেফতার মোজাম্মেল হক হৃদয় (৪৬) কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার দেওয়াতলী গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর থানার ঢাকা হাউসিং এলাকায় বসবাস করেন।

অভিযোগ রয়েছে, মোজাম্মেল হক হৃদয় ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে সেখানে চাকরিরত বাংলাদেশের সহজসরল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন। শুধু তাই নয়, মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন মোজাম্মেল। দেশের বড় বড় নামীদামি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অবশ্য গত মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার আদাবর থানার উপ-পরিদর্শক পরিক্ষিতের নেতৃত্বে মোজাম্মেল হক হৃদয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রতারণার শিকার রফিজ উদ্দিন জানান, তার ছেলে নাসির উদ্দিন মিয়া পড়াশুনা করতেন চীনের গোয়াংজু সিটিতে। দুই বছর আগে সেখানে প্রতারক মোজাম্মেল হক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় নাসির উদ্দিন মিয়ার। দেড় বছর আগে নাসির উদ্দিন মিয়া গ্রামের বাড়ি রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন এলাকায় আসেন। পরে প্রতারক মোজাম্মেল হক হৃদয় ঢাকার অফিসে যেতে বলেন নাসিরকে। বনানী ও গুলশানে নামিদামি অফিস ভাড়া নিয়ে নিজের বলে পরিচয় দিতেন মোজাম্মেল।

অফিসে গেলে নাসির উদ্দিন মিয়াকে বলা হয়, কুয়েত আল-জাহারা মার্কিং ভার্জিনিয়া ক্যাম্পে শতাধীক লোক নেয়া হবে মাত্র ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এরপর নাসির তার বাবা রফিজ উদ্দিন মিয়াকে বললে ছোট দুই ভাই সোহেল মিয়া ও আল-আমিন মিয়ার জন্য ৯ লাখ টাকা জমা দেন। এ খবর আশপাশের আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারাও বিদেশে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন।

এমন করে চুক্তির করে কাঞ্চন এলাকার সোহেল মিয়া, আল-আমিন মিয়া, আরমান, মিলন, সমির বর্মণ, সজিব চন্দ্র বর্মণ, দয়াল বর্মণ, সবুজ, ইসমাইল, সোহানুর ভুইয়া, মুহাইমিন, জামান, ইছরাফিল, সোনারগাঁয়ের টুটুল চন্দ্র বর্মণ ও ভোলাব এলাকার মানিক মিয়া পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ লাখ টাকা দেন প্রতারক মোজাম্মেল হক হৃদয়কে। টাকা নেয়ার পর থেকেই প্রতারক মোজাম্মেল হক হৃদয় ওই ১৫ জনকে বিদেশে না নিয়ে গাঢাকা দেন।

ঘর বাড়ি, জমি-জমা বিক্রি ও ধার-দেনা করে টাকা দিয়ে বিদেশে না যেতে পেরে এসব পরিবার এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতারণার অভিযোগ এনে সোহেল মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি ও নাসির উদ্দিন মিয়া বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ওই দুটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি প্রতারক মোজাম্মেল হক হৃদয়।

অভিযোগ রয়েছে, কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে ৭০ জনের কাছ থেকেও এমন করেই লাখ লাখ আত্মসাত করেছেন তিনি। কুমিল্লার আদালতে প্রতারণার মামলায় (মামলা নং-১১২/১০) তিন বছরের সাজাও হয়েছে মোজাম্মেল হক হৃদয়ের। বনানি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। বনানি এলাকায় মাদক বিক্রির অভিযোগে এসআই আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন।

বিদেশে লোক পাঠানোর নামে কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে প্রতারণার অভিযোগে বনানি থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার বাদী হলেন পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান।মামলা রয়েছে, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানাতেও। প্রতারক মোজাম্মেল হক হৃদয়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই। নিঃস্ব হওয়া নিরীহ পরিবারগুলো তাদের কাছ থেকে আত্মসাত করা ৪২ লাখ টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, যেহেতু অভিযুক্ত আসামি গ্রেফতার হয়েছেন, সেহেতু ওই আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করে রূপগঞ্জ থানার মামলাসহ অন্যান্য থানার মামলাগুলো আদালতে উত্থাপন করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আদালত।

বিষেরবাঁশী.কম/ ডেস্ক /রূপা

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,নারায়ণগঞ্জের খবর

Leave A Reply

Your email address will not be published.