মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

প্লাস্টিকের কাপে চা, বাড়ছে ক‌্যানসার ঝুঁকি

অনলাইন ডেস্ক:-সারাদেশে ফুটপাত থেকে শুরু করে পাড়ার ছোট-বড় চা-দোকান—সব জায়গায় বেড়েছে প্লাস্টিকের কাপের ব‌্যবহার। দোকানিরা কাচের কাপের পরিবর্তে গ্রাহকদের সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন গরম চা-ভর্তি এসব কাপ। আর ব‌্যবহার শেষে সেগুলো ছুড়ে ফেলা হচ্ছে রাস্তা, ফুটপাত ও ড্রেনে। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব কাপের কারণে স্বাস্থ‌্যহানি ঘটতে পারে, আছে ক‌্যানসারের ঝুঁকিও। আর পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্লাস্টিকের কাপ ও পলিথিনে পরিবেশের ভারসাম‌্য নষ্ট হচ্ছে। 

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ‌্যে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকেই ছয়টি প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার ও আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। পাশাপাশি ২০২২ সালের মধ্যে প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়ার পরিকল্পনাও করেছে দেশটি। 

বিপরীতে বাংলাদেশে ওয়ান টাইম ব‌্যবহারের প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের জয়জয়কার। বিয়ে, জন্মদিনসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে এসব পণ্যের অবাধ ব্যবহার বেড়েছে। আর ব্যবহারের পর সেগুলো ছুড়ে ফেলা হচ্ছে যেখানে-সেখানে। প্রায় দেড় যুগ আগে নিষিদ্ধ হলেও আজও এখনো পলিথিন দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরন্তু বেড়েছে ওয়ান টাইম ব‌্যবহারের প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট-গ্লাসও। আইন প্রয়োগের শিথিলতা ও পরিবেশ রক্ষার প্রতি চরম উদাসীনতাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপে চা

সচেতন মহল বলছে, পলিথিন ব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি করোনাকালে আরেকটি পণ্য ক্রমে স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চা খাওয়ার ওয়ান টাইম প্লাস্টিক গ্লাস। করোনার ভয়ে কাচের কাপ নিতে চায় না অনেকেই। তারা প্লাস্টিক কাপে চা খেতে চান। বাধ্য হয়ে দোকানিও এসব গ্লাসে চা দেন। তাতে চায়ের দামের সঙ্গে গ্লাসের দাম এক টাকা যোগ করে দেন দোকানি।

প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘প্লাস্টিক ক্ষতিকর জানার পরও আমরা ব্যবহার করছি। পরিবেশদূষণের তোয়াক্কা না করে ছুড়ে ফেলছি রাস্তায়, ড্রেনে, নদীতে, পার্কে, সাগরে। আমাদের উচিত, নিজে থেকেই এসবের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া। অভ্যস্ত হতে হবে পাটের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ব‌্যবহারে।’

প্লাস্টিকের গ্লাস প্রসঙ্গে কাকরাইলের চা-দোকানি মোতালেব মিয়া বলেন, ‘আমার দোকানে দুই ডজনের মতো কাচের কাপ আছে। কিন্তু কাস্টমাররা বেশিরভাগই প্লাস্টিকের কাপে চা চান। আমিও বাধ্য হয়ে দেই। এই কাপে চা খাওয়া শরীরের জন্য খারাপ, তারপরও কাস্টমার চাইলে কী করবো? কাস্টমারের চাহিদা মতো বাধ্য হয়ে প্লাস্টিকের কাপে চা দেই।’

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক কাপসহ বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিক পণ্য বিক্রেতা কারওয়ান বাজারের ভাই ভাই স্টোরের মালিক হানিফ বলেন, ‘প্লাস্টিকের বিভিন্ন আকারের ১০০ কাপের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা। কাগজের কাপের ১০০ টির দাম ৯০ থেকে ১২০ টাকা। তবে প্লাস্টিকের কাপের চাহিদা বেশি। আর এসব প্লাস্টিক কাপের ক্রেতা চা-দোকানিরা।’ 

প্রতিদিন ৫-৭ হাজার প্লাস্টিক চায়ের কাপ বিক্রি করেন বলেও জানান হানিফ। তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট এসে জরিমানা করেন।’ 

এই প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আবু নাসের খান বলেন, ‘ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন পলিথিন ব্যবহারের পরিমাণ ২ কোটি পিস। এসব পলিথিন ব্যবহারের পর যাচ্ছে কোথায়? অধিকাংশই ফেলা হচ্ছে ড্রেনে। ফলে ড্রেনেজ সিস্টেমে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শিগগিরই পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আর এজন্য যারা পলিথিন উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে সম্পূর্ণভাবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পলিথিনের ব্যবহার রোধে বহু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তেমন সুফল আসেনি বলে জানালেন সংস্থাটির পরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. মোকছেদ আলী। তিনি বলেন, ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। তবু দিন-দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলছে। আমরা এসব কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। এরপরও নির্মূল করা যাচ্ছে না। কারণ মানুষের কাছে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছেন কারখানা-মালিকরা।’

ড. মো. মোকছেদ আলী আরও বলেন, ‘২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে আইনে বলা আছে, সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাক অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।’                                                                         

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ সংশোধিত ২০১০ সালের আইনের ৭(১) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তির কারণে পরিবেশ বা প্রতিবেশের ক্ষতি হলে সেই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে তা পরিশোধ করতে হবে। সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া বা উভয় ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

প্লাস্টিক কাপে করে গরম চা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বলে জানালেন অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘সাধারণত চা-দোকানে যে প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ফুড গ্রেডেড নয়। ফলে এই কাপে চা পান করলে শরীরে বিভিন্ন রকমের ক্যামিক্যাল রি-অ্যাকশন হয়। পরবর্তী সময়ে যা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই প্লাস্টিকের কাপে শুধু চা নয়, কোনো গরম খাবারই খাওয়া উচিত নয়।’

এই বিষয়ে প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ বাঁচাতে পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জনের বিকল্প নেই। নিজে সচেতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও সচেতন হতে হবে। পলিথিন-প্লাস্টিক উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কঠোর হাতে দমন করা গেলে এসবের ব্যবহার কমে আসবে। ’ এই ব্যাপারে বিদ‌্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগেরও আহ্বান জানান তিনি। 

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা

Categories: স্বাস্থ্য

Leave A Reply

Your email address will not be published.