শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

আপনি সঠিক বেতন পাচ্ছেন তো?

অনলাইন ডেস্ক:-আপনি হয়তো সঠিক বেতন পাচ্ছেন না- এ ধরনের ভাবনা আপনার কাজে অনেকটাই নিরুৎসাহিত করতে পারে।

মার্কিন কর্মস্থল বিশেষজ্ঞ ও লেখক লিন টেইলরের ভাষায়, ‘অনেক ক্ষেত্রে, আপনার কাজের দক্ষতা ও অগ্রগতি যাচাইয়ের জন্য এবং আপনাকে কতখানি মূল্যায়ন করা হচ্ছে তা বোঝার জন্য পারিশ্রমিকই সবচেয়ে ভালো মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।’

যদি আপনি টের পেয়ে থাকেন যে, আপনাকে কম পারিশ্রমিক প্রদান করা হচ্ছে, তাহলে এ ব্যপারে নির্বাক বসে না থেকে সরব হওয়াটা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যথাযথ পারিশ্রমিক পাচ্ছেন কিনা বেশ কিছু লক্ষণ দেখে তা বুঝতে পারেন।

* একই রকম পদের জন্য অন্যকে অধিক বেতন দেয়: ‘কোম্পানিতে যদি আপনার মতো একাধিক পদ থাকে, তাদের কাজও আপনার মতোই হয় অথচ তাদের বেতন আপনার থেকে বেশি হয়, তবে সেটি একটি স্পষ্ট লক্ষণ,’ টেইলর বলেন।

মাঝে মাঝে কোম্পানির পোস্টিংগুলো দেখুন, যেন নতুনদের বেতনের উপর নজর রাখতে পারেন এবং কোম্পানিতে অন্যদের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা ও ভূমিকা যাচাই করে দেখতে পারেন। 

* কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি সত্ত্বেও আপনার বেতন সামান্যই বেড়েছে: সরকারি কোম্পানি না হলে তার মুনাফা-বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে পারা ভার। কিন্তু আপনি এতটুকু আঁচ করতে পারবেন যে, কোম্পানির ক্রমবর্ধমান উন্নতি হচ্ছে নাকি লোকসান হচ্ছে। প্রথমটি হয়ে থাকলে আপনার উচিত বেতন বৃদ্ধির জন্য আলোচনা করা।

* বাজার অনুসারে আপনার প্রথম চাকরির বেতন থেকে এখনকার বেতন বেশি বৃদ্ধি হয়নি: প্রথম চাকরিতে আপনি যে বেতন পেয়েছিলেন সেটি খেয়াল করুন। তখন হয়তো আপনি খুব অল্প বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন, কারণ সেই সময়ে আপনি চাকরি পেতে খুবই মরিয়া ছিলেন। 

এখন ভাবুন আপনার বর্তমান বেতন সেই সময় থেকে কতখানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি এটা খুব বেশি না হয় তবে আপনি সম্ভবত সঠিক বেতন পাচ্ছেন না। 

আর শুরুটা যদি খুব কম থেকে হয়ে থাকে তবে আপনার খাপ খাইয়ে নিতে বেশ কষ্ট হবে।

* সমান অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সহকর্মীদের থেকে আপনার বেতন কম: মানুষ সাধারণত তার ব্যক্তিগত আয় সম্পর্কে খোলামেলা আলাপ করতে চায় না, আবার অনেক কোম্পানিতে বেতন নিয়ে আলোচনা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু কিছু সমিতি কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের আলোচনা কিছুটা উন্মুক্ত। যদি আপনার সমান দায়িত্ব ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চাকরিজীবীদের বেতন বেশি হয়ে থাকে তবে সেদিকে মনোযোগ দিন।

* সহকর্মীদের তুলনায় আপনার সুবিধাসমূহ কম হবে: আপনার সম্পূরক প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো হিসাব করুন, যেমন- হেলথ ইন্সুরেন্স, অবকাশযাপন, মোবাইল ফোন কিংবা চাইল্ড কেয়ার প্রভৃতি।

আপনার সহকর্মীরা তাদের বেতন সম্পর্কে আলোচনা করতে আগ্রহী না হলেও, তাদের অবকাশ, মোবাইল ফোন সুবিধা কিংবা অন্যান্য সুবিধাগুলো দেখেও বুঝতে পারেন তাদের থেকে আপনার পারিশ্রমিক কম।

* আপনার দায়িত্বভার বেড়েছে কিন্তু বেতন বাড়েনি: কের বলেন, ‘আপনার বস যদি আপনাকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নিতে থাকে এবং আপনার কোনো সুবিধা না বাড়িয়ে অথবা আপনার সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই আপনার উপর অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় তবে বুঝবেন আপনি সঠিক বেতন পাচ্ছেন না।’

অন্য একটি লক্ষণ হলো- আপনার পদবি পরিবর্তিত হলো কিন্তু আপনার চেকের উপর টাকার অঙ্কে কোনো পরিবর্তন আসল না।

* চাকরি করতে পেরেই আপনি সন্তুষ্ট: ইতিবাচক মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত বাহ্যিক প্রকাশভঙ্গিতে আপনাকে খুব বেশি আত্মতৃপ্ত দেখালে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনাকে যদি কোম্পানির প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত এবং খুবই কর্তব্যনিষ্ঠ মনে হয় তবে অধিকাংশ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এটা বুঝতে পারে এবং তারা আপনাকে তাদের চিরাচরিত পন্থায় ‘অর্থহীন হাশিখুশি’ একজন কর্মীতে পরিণত করবে।

* আপনি কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে চাকরি করেন: কিছু কিছু চাকরি বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সাইবার নিরাপত্তা এবং এসইও বা এসইএম মার্কেটিং অন্যান্য চাকরির তুলনায় অনেক বেশি বিশেষায়িত, যেখানে অন্যান্য চাকরি কিছুটা সবার জন্য উন্মুক্ত। অথবা অন্যান্য চাকরি ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় যোগান অনেক বেশি। এইসব চাকরির কোথাও যদি আপনি থাকেন এবং আপনাকে অন্যান্য সাধারণ চাকরির মতো বেতন দেওয়া হয় তবে তা অবশ্যই সঠিক বেতন নয়।

* কোম্পানি সম্পর্কে আপনার ভেতর দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে: নিয়োগকর্তার সম্পর্কে আপনার অনুভূতি লক্ষ্য করুন। কখনো কখনো আপনার মনে হতে পরে আপনি তার দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছেন। কের বলেন, ‘যদি নিজের অজান্তেও আপনার ভেতরে কিছু অতিরিক্ত সুযোগ গ্রহণের প্রবণতা থাকে তবে এটি একটি স্পষ্ট লক্ষণ। কারণ কখনো কখনো আপনার মনে হতে পারে আপনি হয়তো সঠিক পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন না।’

* আপনার বেতন বেড়েছে কিন্তু তা খুব সামান্য: এমন হতে পারে যে, গত দুই-এক বছর যাবত আপনার বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু তা মাত্র ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ এর মধ্যে। এই ধরনের বৃদ্ধি আপনার ক্রমবর্ধমান অভিজ্ঞতা বা দক্ষতার জন্য নয়, শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার জন্য।

* আপনার বস আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা শুনতে চায় না: আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতি সম্পর্কে শুনতে আপনার বস কতখানি আগ্রহী তা লক্ষ্য করুন। তারা এ ধরনের আলোচনা করতে অনিচ্ছুক হবে, কারণ এটা একসময় বেতনের আলোচনার দিকে ধাবিত হতে পারে।

* আপনার কোম্পানিতে অনেক বেশি কর্মী কাজ করে: অনেক বেশি কর্মী নিয়োগ করা থেকে বোঝা যেতে পারে যে, আপনার কোম্পানি সঠিক পারিশ্রমিক দিচ্ছে না, কের বলেন। কাজের অনুকূল পরিবেশ আপনার অনেক সহকর্মীকে অল্প বেতন সত্ত্বেও কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

* অন্যরা বোনাস পেলেও আপনি পান না: ছুটি উপলক্ষে কিংবা ভালো পারফরম্যান্সের জন্য আপনার সহকর্মীরা বোনাস পেলেও আপনি কখনো এই ধরনের উৎসাহব্যঞ্জক অর্থ পাননি। কখনো কখনো কর্তৃপক্ষের এ ধরণের ভুল হতে পারে। কিন্তু এটি যদি ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে, তবে কেন আপনি এগুলো পাচ্ছেন না তা জানা উচিত।

* আপনি কখনো বেতন বৃদ্ধির কথা তোলেননি: বেতন বৃদ্ধি হোক বা না হোক আপনি বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করুন। স্যালারি ডটকমের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেতন বৃদ্ধির জন্য কথা না বলার কারণে আপনি পুরো চাকরিজীবনে মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

* বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায়: যদি উপরের কোনো একটি লক্ষণ আপনি ধরতে পারেন, তবে তা তলিয়ে দেখার সবথেকে ভালো উপায় এটি।

আজকাল হাতের নাগলেই অনেক অনলাইন ওয়েবসাইট রয়েছে, যাদের মাধ্যমে সহজেই বাজার দর অনুসারে আপনার বেতন ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে পারেন। পে-স্কেল, গ্লাসডোর, ইনডিড, স্যালারি এসব ওয়েবসাইটে আপনি আপনার কর্মস্থল, পদবী, কাজের ধরন প্রভৃতি তথ্য প্রদান করে বাজার দরের সঙ্গে আপনার বেতনের ব্যবধান দেখতে পারেন।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা

Categories: লাইফস্টাইল

Leave A Reply

Your email address will not be published.