বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগরে গ্রাম্য মোড়লের অতীত ও বর্তমান

অনলাইন :- ।। সুভাষ সাহা।

গ্রাম্য মোড়লদের হ্যারিটেজ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন নবীনগর অনলাইন একটিভিস্ট ফোরাম এর সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান।ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগরে সাংস্কৃতিক হ্যারিটেজের যেমন স্বর্ণযুগ ছিল,তেমনি আদিমযুগের মল্ল যুদ্ধের নিষ্ঠুর চর্চাও ছিল। দুই গ্রামবাসীর মধ্যে মুলির বাঁশ,বর্শা,টেঁটা,বল্লম ও গুলতিসহ দেশিয় অস্ত্রের ‘শৈল্পিক’ ব্যবহারও দেখেছি।

ছোটবেলায় এসব ‘উপভোগ’ করেই বড় হয়েছি।ধাঁরালো মুলির বাঁশ-বর্শা প্রতিপক্ষের উপর নিক্ষেপে পারদর্শীদের অন্যরকম ‘মর্যাদা’ ছিল গ্রামের মোড়লদের কাছে।এক গ্রামের বিরুদ্ধে আরেক গ্রামের শক্তির মহড়া ছিল প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ‘পেশাদার’ ধান্দাবাজ মোড়লরা এসব সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহামলা থেকে মওকা নিতো।মাথায় গোল টুপি,জিন্নাহ টুপি হাতে ছাতির ইউটাইপ বেতের লাঠি,পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত এক নম্বর-দুই নম্বর মোড়লদের শালিস বিচারের নামে বহু নাটকীয়তাও দেখেছি।

গোপন ‘কন্টাক্ট বেসিস’ বিচার শালিস ছিল কিছু মোড়লের উপার্জনের মোক্ষম উপায়।ছোটখাটো নোটের বান্ডেল কায়দা করে মোড়লের পাঞ্জাবির পকেটে গুঁজে দেয়ার পর রায় পাল্টে দেয়ার ‘অভিনব ক্ষমতাও’ দেখেছি। পেশাদার মোড়লদের আঙুলের ইশারায় সেসময়কার সমাজ শাসিত হতো।মুলির বাঁশ বর্শার ‘নান্দনিক মল্ল যুদ্ধের’ ক্ষেত্রও তৈরি করতেন দুই পক্ষের মোড়লরাই!তবে,সময়ের বিবর্তনে গ্রাম্য মোড়লপনার চরিত্র বদলায়নি। বরং নিকটবর্তী থানা-পুলিশের দুর্নীতিবাজ সদস্য ও দালালদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে মুলিবাঁশ বর্শা ও টেঁটাযুদ্ধের ব্যপকতা বেড়েছে! প্রতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগরে এধরনের নৃশংসতায় নিহত ও আহতের পরিসংখ্যানে হয়তো এরই প্রমান মিলবে?কারো চরিত্র হরণ করার উদ্দেশ্যে নয়,বরং সৎ ও অসৎ মোড়লদের চরিত্র নির্ণয়নের আলোকে অতীত – বর্তমান নিয়ে গবেষণার দাবি রাখে।

বিকাশমান সভ্যতার আধুনিক সমাজেও কেন সেই আদিমতম বর্বরতা? শেকড়ে যেতে হবে।গভীর তদন্ত সাপেক্ষে নেপথ্য ‘মওকাভোগীদের’ খোঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে মূল উৎপাটন আবশ্যা। অন্যথা নুরনগরের আলোচিত আদিম বর্বরতার অবসান সম্ভব নয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগরের কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির দায় এড়াতে পারেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা!গ্রাম্য মোড়ল তথা সমাজপতিদের একাল-সেকাল নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনার উদ্যোক্তাকে সফল করতে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন এলাকাবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বংশপরম্পরায় মোড়লরা এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বজায় রাখতে কলকাঠি নাড়া অব্যহত রেখেছেন! তাঁদেরই বীজ থেকে ফলন দিচ্ছে। সাম্প্রতিককালে পা কেটে বিচ্ছিন্ন করার নৃশংস ঘটনা থেকে সর্বশেষ গতকাল আশি বছর বয়সী এক মোড়লের দুই চোখ উপরে ফেলার ঘটনাসমূহ এরই ধারাবাহিকতা।

তাই সেই অভিশপ্ত হ্যারিটেজ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে,প্রজন্মকে হ্যারিটেজও জানাতে হবে।নবীনগর অনলাইন একটিভিস্ট ফোরামের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান এর প্রশংসনীয় উদ্যোগটি সফলতা কামনা করছি। সবশেষে বিটঘরে সেসময়কার গ্রাম্য মুরুব্বি,মোড়ল তথা সমাজপতিদের অন্যতম লালমিয়া ও ফুল মিয়া চাচাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।

বিষেরবাঁশী.কম  / ডেস্ক / সুভাষ সাহা

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.