বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যাত্রীবাহী রেল যাবে শিলিগুড়ি

অনলাইন ডেস্ক:-মুজিববর্ষে ভারতের সঙ্গে একের পর এক সংযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের। এরই মধ্যে রুদ্ধ জলপথ, রেলপথ ও সড়কপথ সচলের মধ্য দিয়ে সভ্যতা উঁকি দিচ্ছে। স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে পা দেওয়া কোন দেশের অর্থনীতি, যোগাযোগসহ নানা ক্ষেত্রে এতটা উত্থানের কথা জানা নেই। বন্ধু রাষ্ট্র উত্তরপূর্বাঞ্চলের পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর সঙ্গে কানেক্টিভিটি তথা সংযোগের এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।  এরই মধ্যে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় সাশ্রয়ী পণ্য পরিবহনে ১০টি জলপথ ছাড়াও রেলপথ উন্মুক্ত হয়েছে।  গত ১৭ ডিসিম্বের চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেনের হুইসেল বাজলো ৫৫ বছর পর।  এগুলো সচল হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই।

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যাত্রীবাহী ট্রেন যাচ্ছে শিলিগুড়ি। বাংলাদেশ থেকে শিলিগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল নিয়ে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর শিলিগুড়িতে ৮, ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি আন্তঃদেশীয় বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। 

রেলভবন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশি বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তার (ডিআরএম) নেতৃত্বে ৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ৭ ফেব্রুয়ারি শিলগুড়ি পৌঁছানোর কথা রয়েছে।  বৈঠকে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে যাত্রীবাহী যে ট্রেনটি শিলিগুড়ি যাবে, তার সফল যাত্রা নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। পাশাপাশি চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে নিয়মিত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের বিষয়টিও ওঠে আসবে আলোচনার টেবিলে।  ভারত চায় এই রুটটি ব্যবহার করে উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেন চলাচল সহজ করতে।  তাতে করে কোন যাত্রীবাহী ট্রেন কোলকাতার শিয়ালদাহ স্টেশন ত্যাগ করে দর্শনা সীমান্ত গলিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এবং গোটা পথ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে চিলহাটি পয়েন্ট দিয়ে হলদিবাড়ি পৌঁছে যাবে।  এতে ২০০ কিলোমিটার পথ সাশ্রয় হবে।

মোদির বাংলাদেশ সফর

মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রবন্ধ পাঠের কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ব নেতাদের।  কিন্তু কোভিড-১৯ প্রার্দুভাবের কারণে সেই অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়।  এরপর বছর গড়িয়ে ফের মার্চ মাস আসছে।  এর মধ্যে দাপট কমেছে মহামারি।  বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষ এবং ভারতের সঙ্গে কূটনীতি সম্পর্কের ৫০ বছর এক সঙ্গে পালনের কথা ভারত বরাবরই বলে আসছে।  সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ ও ২৭ মার্চ দুই দিনের ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  নিজের আগ্রহ থেকেই নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ২৬ মার্চ টুঙ্গীপাড়া যাবেন। সুবর্ণজয়ন্তীতে হুইসেল বাজিয়ে সেদিন যাত্রীবাহী যে ট্রেনটি শিলিগুড়ি যাবে, যৌথভাবে তার উদ্বোধনের কথা রয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে এখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষ এবং ভারতের সঙ্গে কূটনীতি সম্পর্কের ৫০ বছর পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।

যাত্রীবাহী ট্রেনের উদ্বোধন ছাড়াও অন্যান্য প্রকল্পেরও উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।  মুজিববর্ষে ভারতের সঙ্গে উন্মুক্ত হচ্ছে একের পর এক রেল, সড়ক ও জলপথ।  মুজিববর্ষে উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরার সোনামুড়ায় নতুন জলপথ উন্মুক্ত হয়েছে। সিমেন্ট বোঝাই জাহাজ গিয়েছে অসমের করিমগঞ্জ ও সোনামুড়ায়।  চুক্তির চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে উত্তরপূর্ব ভারতে পণ্যের ট্রায়ালরান সম্পন্ন করেছে ভারত। রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ও ভারতের ময়া জলপথও চালু হতে যাচ্ছে এই মুজিববর্ষেই।

বাংলাদেশ-ভারত কানেক্টিভিটি

বাংলাদেশ-ভারত কানেক্টিভিটির আওতায় মুজিববর্ষেই সমপন্ন হতে চলেছে আখাউড়া-আগারতলা রেলপথ এবং কুলাউড়-শাহবাজপুর রেলপথের কাজ। এ দুই রেলপথের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় ঠিকাদার।  কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটির কাজ শেষ হলে মোংলা বা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে কোন ট্রেন সরাসরি অসমের মহিষাশন দিয়ে উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় পণ্যপরিবহন করবে।  আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ সম্পন্ন হলে আগরতলা থেকে মাত্র ৮ ঘণ্টায় কলকাতা পৌঁছানো যাবে।  বর্তমানে ত্রিপুরাবাসীকে ১ হাজার ৭০০ কেলোমিটার ঘুরে ৩৮ ঘণ্টায় কলকাতায় যেতে হচ্ছে।  

অন‌্যদিকে চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল সহজ হবে।  জানা গেছে, মুজিববর্ষেই চালু হতে পারে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১।  এটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী কোন ট্রাক মাত্র চার ঘণ্টায় ত্রিপুরায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।  এরই মধ্যে মৈত্রী সেতুর কাজ শেষ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড় মৈত্রী সেতুর দূরত্ব মাত্র ৯২ কিলোমিটার।  সেতুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় উভয় দেশের মানুষ। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.  এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এসে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং এ নিয়ে কাজ চলছে। নরেন্দ্র মোদি মুজিববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কেও ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা সফর করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন ২৭ মার্চ।

ড. মোমেন জানিয়েছেন, ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রানজিট  চেয়েছে। যা ভারতের বিবেচনা রয়েছে।  ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড রোডের সংযুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাবের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা

Categories: জাতীয়,শীর্ষ সংবাদ

Leave A Reply

Your email address will not be published.