শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

ধর্ষণের শিকার, স্কুল শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন; অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই মৃত্যুর কারণ

অনলাইন ডেস্ক:- রাজধানীর কলাবাগান এলাকার ডলফিন গলিতে ধর্ষণের পর স্কুল-শিক্ষার্থীর (১৭) মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ৮ই জানুয়ারি, শুক্রবার দুপুরের পর শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলাবাগান পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র।

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করলে আজ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুরের পর তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। ময়নাতদন্তের পর তার বক্তব্যে তিনি আলামত এবং ময়নাতদন্ত থেকে প্রাপ্ত তথ্য বর্ণনা করেন।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। যোনিপথ ও পায়ুপথে গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং ময়নাতদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে এ আঘাত থেকে সৃষ্ট রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার। তবে শরীরের অন্য কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বিধায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়নি বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়েছে কিনা সেটি তদন্তে নমুনা পাঠানো হয়েছে। কেমিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। একইসাথে একাধিক ব্যাক্তি কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা এটি স্পষ্ট হবার জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ স্বজনদের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। আগামীকাল মৃতার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় তার দাফনকার্য সম্পন্ন হবে।

 এদিকে ধর্ষক ফারদিন ইফতেখার দিহান (১৮) কে ঘটনার পরপরই আটক করে কলাবাগান পুলিশ। নিহতের বাবা আল আমীন কলাবাগান থানায় ৯(২) ধারায় (সংশোধিত) মামলা দায়ের করলে গ্রেফতার দেখানো হয় দিহানকে। শুক্রবার দুপুরে আদালতে নেওয়া হলে স্বেচ্ছায় নিজের অপরাধ স্বীকার করেন আসামী দিহান। এরপরই তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। তদন্তকারী রমনা থানার ডিসি সাজ্জাদুর রহমান জানান, আসামীর ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের দাবীতে তাকে আদালতে নেওয়া হয়, তবে সম্পূর্ণ দোষ স্বীকার করায় রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি এবং তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে আদালতের রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি। নিহতের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট, তদন্ত রিপোর্ট এবং আসামী দিহানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী খতিয়ে দেখে আদালতের রায় ঘোষণা হবে।

দিহানের পক্ষে কোনো আইনজীবীর দেখা পাওয়া যায়নি তবে রাষ্ট্র-পক্ষের আইনজীবী হেদায়েত উদ্দিন খান হিরণ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ৯(২) ধারায় (সংশোধিত) মামলা হয়েছে যার রায় হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। দিহানের সম্পৃক্ততা এবং তদন্তের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞ আদালত মৃত্যুদণ্ড এর রায় পর্যন্ত দিতে পারেন।

ধর্ষণের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে গুঞ্জন উঠেছে সমাজবাদীদের মধ্যেও। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক এ ঘটনার প্ররোচনা হিসেবে দায়ী করেছেন বেশ কিছু বিষয়কে। জেন্ডার ইকুয়ালিটি কিংবা সেক্স এডুকেশনের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। একইসাথে প্রতিটি পিতামাতাকে সন্তানকে সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সন্তানদের সাথে বন্ধু-ভাবাপন্ন মানসিকতা গঠনে আগ্রহী হওয়ার আহ্বান করেন তিনি।

উল্লেখ্য, মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ও লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে গত ৭ই জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার ফোন কলের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে যান আসামী ফারদিন ইফতেখার দিহান। বাসা থেকে ওই শিক্ষার্থী গ্রুপ স্টাডির কথা বলে রাজধানীর পান্থপথ কলাবাগান এলাকার ডলফিন গলিতে অবস্থিত দিহানের বাসায় যান। দিহানের পরিবারের কেউ বাসায় না থাকার সুযোগে ধর্ষণের ঘটনাটি সংঘটিত হবার পরপরই নির্যাতিতা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অচেতন হয়ে পড়লে আসামী নিজ উদ্যোগে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর নির্যাতিতার মৃত্যু হয়। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মকর্তা দিহানকে আটকে রেখে কলাবাগান থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ ঘটনায় আরো ৩ জন যুবকের সম্পৃক্ততার খবর মিললেও ব্যাপারটি এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানা গেছে।

বিষেরবাঁশী.কম / ডেস্ক / রূপা

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,সারাদেশ

Tags:

Leave A Reply

Your email address will not be published.