বুধবার ৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ বুধবার

৭ খাতে ফি না নেয়ার নির্দেশ স্কুল-কলেজকে

অনলাইন ডেস্ক:- করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ৯ মাস ধরে বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠান পাঠদান করেনি। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। আর বছরের শেষের দিকে এসে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ (বাড়ির কাজ) কার্যক্রমে যুক্ত করে সক্রিয় করেছে সরকার।

পরিস্থিতি এমন হলেও শতভাগ প্রতিষ্ঠানই নিতে পারবে টিউশন ফি। তবে ৭ ধরনের ফি নিতে বারণ করা হয়েছে। কোনো অভিভাবক আর্থিক সংকটে পড়ে থাকলে তার সন্তানের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। এটি কেবল স্কুল ও কলেজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। 

বুধবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এতে টিফিন, পুনঃভর্তি, লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন খাতে ফি না নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া সম্প্রতি লেখাপড়ায় যুক্ত ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ খাতেও কোনো ফি নেয়া যাবে না।

বলা হয়, এসব খাতে ফি আদায় করে থাকলে ফেরত দিতে হবে অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো ফি নিয়ে থাকলে সেসব ফিও সমন্বয় করতে হবে। আর ২০২১ সালের শুরুতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এসব খাতে ফি নেয়া যাবে না।

পাশাপাশি যেসব খাতে আদায়ের অর্থ শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করা যাবে না, সেসব খাতে টাকাও নেয়া যাবে না। মাদ্রাসা বা কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।

মাউশির বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবশ্য ইতোমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অভিভাবকরা বলছেন, যেসব খাতে ফি নিতে বারণ করা হয়েছে সেগুলোয় যদি স্কুল-কলেজ ফি নেয় কিংবা সমন্বয় না করে, তাহলে কী ব্যবস্থা নেবে বা কোথায় অভিযোগ করা যাবে, তা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়নি।

ফলে যেসব প্রতিষ্ঠানে দুষ্ট ব্যক্তিরা বসে আছেন, তারা নির্দেশনা উপেক্ষা করতে পারে। তাছাড়া করোনায় অভিভাবকদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারি চাকরিজীবী আর বড় ব্যবসায়ী বাদে বাকিদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ফ্রি বা হাফ ফ্রির নির্দেশনা দেয়া উচিত ছিল। অবশ্য শিক্ষকরা বলেছেন, একটি আদর্শ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এতে উভয়কূল রক্ষা পাবে।

এ প্রসঙ্গে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সর্বাধিক স্বার্থ সামনে রাখা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন কোনো কারণে ব্যাহত না হয়, সেটা নিশ্চিত করা। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক উভয়কে যত্নশীল হতে হবে। সমস্যাগ্রস্ত অভিভাবকদের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করবেন। সাড়া না দিলে তা আমাদের জানানো যাবে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নিজে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। অর্থাৎ, নির্দেশনা পরিপন্থী কাজ করা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ করা যাবে। অপরদিকে শিক্ষার্থীর স্বার্থেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে হবে।

যার সামর্থ্য আছে, তিনি টিউশন ফি না দিলে প্রতিষ্ঠান চলবে কী করে কিংবা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের জীবন যেন সংকটে না পড়ে, সেটাও সরকারকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে।

কিছু প্রতিষ্ঠান বছরের শুরুতে মোটা দাগে সরকার নির্ধারিত ৮ বা ১০ হাজার টাকা আদায় করে। তাতে খাত উল্লেখ থাকে না। যেমন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বকশিবাজার মোড়ে অবস্থিত অগ্রগামী বিদ্যানিকেতন এভাবে অর্থ আদায় করে।

প্রতিষ্ঠান দুটি সারা বছর কেবল টিউশন ফি আর পরীক্ষার ফি আদায় করে। এখন এই প্রতিষ্ঠান দুটির কাছ থেকে অভিভাবকরা কীভাবে ফি ফেরত পাবে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আছে বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা মাউশির নির্দেশনাকে অপূর্ণাঙ্গ বলেও মনে করেন।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, আমরা এমন নির্দেশনা চাইনি। যেসব খাত উল্লেখ করা হয়নি, সেগুলোয় ফি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। আমাদের দাবি, টিউশন ফি মওকুফ বা ফুল ফ্রি বা হাফ ফ্রি করতে হবে।

নির্দেশনায় শাস্তির কথা থাকতে হবে। ভর্তি বাণিজ্যের কারণে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষের তিনবার এমপিও বাতিল হয়েছে আবার ফেরত পেয়েছে। সুতরাং অপরাধের জন্য চাকরিচ্যুতির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অপরাধ বন্ধ হবে।

যা আছে বিজ্ঞপ্তিতে : কভিড-১৯ এর কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবকদের মতদ্বৈততা দেখা যাচ্ছে। অভিভাবকদের অনেকে বলছেন, স্কুল এখন বন্ধ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বাপর বিষয়গুলো বিবেচনা করে এ অধিদফতরের আওতাধীন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না বা করা হলে তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। এছাড়া অন্য কোনো ফি যদি অব্যয়িত থাকে, তা একইভাবে ফেরত দেবে বা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে।

মাউশি আরও বলেছে, ২০২১ সালের শুরুতে যদি কভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন ফির নামে অর্থ নিতে পারবে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আগের মতো যৌক্তিক ফি নেয়া যাবে।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/রূপা

Categories: শিক্ষা

Leave A Reply

Your email address will not be published.