শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

অবশেষে আবদুল মান্নান বীরবিক্রমের কবর স্থানান্তরের অনুমোদন

অনলাইন ডেস্ক:-মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘বীরবিক্রম’ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা পুলিশের কনস্টেবল শহীদ আবদুল মান্নানের কবর অবশেষে চট্টগ্রাম থেকে তাঁর পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নোয়াগ্রামে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-১) দেবাশীষ নাগ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে নোয়াগ্রামবাসীসহ বিভিন্ন মহলে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ অক্টোবর পাকিস্তানি বাহিনীর এক বর্বরোচিত হামলায় অকুতোভয় সৈনিক পুলিশ কনস্টেবল আবদুল মান্নান চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার আবুরখিল গ্রামে যুদ্ধরত অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন। এরপর সেখানেই এক গহিন অরণ্যে তাঁকে দাফন করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতস্বরূপ তিনি ‘বীরবিক্রম’ খেতাব লাভ করেন।

এরপর গত ৫০ বছরেও তাঁর কবর চট্টগ্রামের রাউজান থেকে নিজ জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের নোয়াগ্রামে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ কারো পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় সম্প্রতি  নবীনগর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক, লেখক এম এস কে মাহাবুব বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। বীরবিক্রম আবদুল মান্নানের মরদেহ রাউজান থেকে তাঁর জন্মভূমি নবীনগরে ফিরিয়ে আনতে লেখক মাহাবুব নোয়াগ্রাম ও চট্টগ্রামসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এ সময় তাঁকে  সহায়তা করেন নোয়াফের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী প্রদীপ আচার্য ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক, লেখক মাহাবুব মোর্শেদ।

জানা যায়, এ সময় বীরবিক্রমের কবর স্থানান্তর করার এই মহান কাজের সঙ্গে স্বয়ং স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল, উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসী পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন যুক্ত হন।

পরে গত ৭ অক্টোবর প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা বীরবিক্রম আবদুল মান্নানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেয় নোয়াফ। ওই দিন নোয়াফ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে নবীনগর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম নোয়াফের পক্ষ থেকেও তাঁর কবর নবীনগরের পৈতৃক নিবাসে ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানানো হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় খেতাবপ্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ছোটভাই নুরুল মোমেন আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বড় ভাই শহীদ কনস্টেবল আবদুল মান্নান বীরবিক্রমের কবরটি চট্টগ্রাম থেকে নবীনগরে স্থানান্তরের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সদাশয় সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁর কবরটি স্থানান্তরের আনুষ্ঠানিক  অনুমোদন দেয়।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বীর এই মুক্তিযোদ্ধার কবরটি তাঁর পৈতৃক বাড়ি নবীনগরের নোয়াগ্রামের কোথায় স্থানান্তর করা হবে, সেটি সরেজমিনে দেখতে উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির ও মেয়র অ্যাডভোকেট শিব শংকর দাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ বিকেল ৪টায় নোয়াগ্রাম যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে নবীনগরের উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির কালের কণ্ঠকে জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিমের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাধীনতার ৫০ বছর পর  একজন বীরবিক্রমের কবর স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়ায়, আমরা নবীনগরবাসী সদাশয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

তিনি আরো জানান, কবরটি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে সংসদ সদস্য এবাদুল করিম প্রাথমিকভাবে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার অনুদানও দিয়েছেন।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.