সুভাষ সাহা: সিলেটের প্রাচীনতম ‘মুরারি চাঁদ’ কলেজ কবে থেকে ‘এম সি’ কলেজ হলো? কে করলো? এবং কেন?

অবিভক্ত ভারতবর্ষে শিক্ষানুরাগী জমিদার ও শিক্ষানুরাগী অনেক ধানাঢ্য ব্যাক্তি শিক্ষা বঞ্চিত বাঙালিদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বহু স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
যেমন; হরগঙ্গা কলেজ,দেবেন্দ্র কলেজ,কুমুদিনী স্কুল,ভারতেশ্বরী হোমস,গুরুদয়াল কলেজ,তোলারাম কলেজ,রাধানাথ উচ্চ বিদ্যালয়, জয় গোবিন্দ স্কুল,
মুরারি চাঁদ কলেজ,কৃষ্ণ ধন স্কুল… এরকম শতশত স্কুল কলেজ বাংলাদেশের শহর বন্দর ও প্রত্যন্ত গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে অনাদিকাল ধরে।
শিক্ষানুরাগী অনেক মুসলমান জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের দানেও শিক্ষা ও ধাতব্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,হিন্দুদের দানে গড়ে উঠা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কিছু কিছু জায়গায় ধাতব্য প্রতিষ্ঠানের নামও অজ্ঞাত কারণে পরিবর্তন করা হয়েছে!
যেমন,সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজ পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয়েছে ‘এম সি কলেজ’ নওগাঁর কৃষ্ণ ধন স্কুলের নাম পরিবর্তন করে নাম করণ করা হয়েছে ‘কে ডি স্কুল’ এরকম বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিন্দু নামের হয় সংক্ষেপ করা হয়েছে অথবা পুরো নামটাই বদলে ফেলা হয়েছে!
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ‘হরকান্ত ডিসমেনচারি’ বদলে অধুনা হয়ে গেছে ‘ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল’!
উল্লেখ্য,পাকিস্তান আমলে মানিকগঞ্জে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার প্রতিষ্ঠিত ‘দেবেন্দ্র কলেজ’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘মানিকগঞ্জ কলেজ’ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তখনকার অসাম্প্রদায়িক আমজনতার প্রতিবাদের মুখে তা সম্ভব হয়নি।
এ তথ্য জানান,দেবেন্দ্র কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষা ঊর্মিলা রায়।
কোন মহৎ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠাতার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে একথা কেউ বিশ্বাস করেননা।
বিজ্ঞজনদের মতে,সাম্প্রদায়িক ভাবনা থেকেই শুধুমাত্র হিন্দু প্রতিষ্ঠাতার নামগুলো মুছে বা পরিবর্তন করা হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠীর এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করে সচেতন মহল।
বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে,১৮৯২ সালে অর্থাৎ ১২৮ বছর আগে এই ‘মুরারি চাঁদ কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার।
প্রতিষ্ঠাতার নাম গন্ধ মুছে ফেলা হলো!
কে দেবে এসব প্রশ্নের উত্তর??
১২৮তম বছরে এই মুরারি চাঁদ কলেজ হোস্টেলে কলেজেরই নরপশু একদল শিক্ষার্থী এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে কলংকের তীলক এঁকে দেয়ার ঘটনায় যেমন মানুষ লজ্জিত,
তেমনি কলেজের আদি নাম মুছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের জন্যও লজ্জিত হওয়া সমীচীন কি না ভাববার সময় এসেছে। মানুষের মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের ধারাবাহিকতায় ই আজকের ধর্ষণ ঘটনা বলে মনে করা কী অন্যায়??
নিউজ২৪ ডেস্ক/সংবাদাতা/হৃদয়