বৃহস্পতিবার ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

অন্যরকম জন্মদিন: ষাটে পা রাখলেন মাইক্রোফাইবার গ্রুপের শ্রষ্টা ইঞ্জিনিয়ার নাসিম

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: যেন রূপকথার গল্প। দেশের স্বনামধন্য মাইক্রোফাইবার শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার ইঞ্জিনিয়ার নাসিমের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে অবাক করা এক গল্প।

৬০ এ পা রাখলেন এই শিল্প সাম্রাজ্যের চীফ ক্যাপটেন সিআইপি ইঞ্জিনিয়ার নাসিম🌹 বাইশ হাজারেরও অধিক লোকের জীবিকার ভাগ্যনিয়ন্তা ও অন্নদাতা হিসেবে গর্বিত দেশের অন্যতম বানিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শামসুজ্জামান নাসীম এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে
প্রথমেই বিষেরবাঁশী মিডিয়া পারিচালিত চ্যানেল নিউজ২৪.ওয়েবসাইট এর পক্ষ সৎ এই কর্মবীরকে জানাচ্ছি উষ্ণ অভিনন্দন ও গভীর কৃতজ্ঞতা।

অসাধারণ প্রজ্ঞা,মেধা ও তারূণ্যের অহংকার প্রথিতযশা উদ্যোক্তা মানবিক গুণে সমৃদ্ধ শামসুজ্জামান নাসিম গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০,
৬০ বছরে পা রেখেছেন।

এ উপলক্ষে গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার কাওরান বাজারে অবস্থিত মাইক্রোফাইবার গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অনেকটা পারিবারিক আবহে ছোট্ট পরিসরে কেক কেটে স্বপ্নবাজ এই উদ্যোক্তার জন্মদিনের মহেন্দ্রক্ষণটিকে কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন শিল্পগোষ্ঠীর শ’দুয়েক নিবেদিত সুযোগ্য কর্মকর্তা -কর্মচারি।

সংক্ষিপ্ত আয়োজনে মাইক্রোফাইবার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃশামসুজ্জামান নাসিমের সহোদর ডাইরেক্টর ফাইনান্স ড.কামরুজ্জামান কায়সারের অনবদ্য সঞ্চালনায় কেক কাটার শুভ মুহূর্তটি পাশে থেকে উপভোগ করেন- জনাব শামসুজ্জামান নাসিমের সহধর্মিণী ও মাইক্রোফাইবার গ্রুপের চেয়ারম্যান মিসেস ফেরদৌস আরা,
পরিচালক জ্যাষ্ঠ পুত্র শরিফ হাসানসহ …
পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ,
উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শামসুজ্জামান নাসিমের মুখ থেকে জীবনের কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনেন উপস্থিত সবাই।

যেমন :
(এক) ছয় ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় শামসুজ্জামান নাসিম ও তাঁর পিতা মরহুম
মাওলানা মোঃ লুৎফুর রহমানের (দুই জনেরই)
জন্ম একই তারিখে ৫ ই সেপ্টেম্বর।
(দুই) ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জামান নাসিম ও তাঁর
পিতা মরহুম মাওলানা লুৎফুর রহমানের বয়সের পার্থক্য ৩২ বছর।

অন্যদিকে
ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জামান নাসিম ও তাঁর পুত্র শরিফ হাসানের বয়সের পার্থক্য ৩৩।

ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জামান নাসিমের পিতা স্কুল শিক্ষক মরহুম মাওলানা লুৎফুর রহমান পেশাজীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি পঞ্চাশের দশকে একটি হ্যান্ডলুম ফ্যাক্টরি গড়লেও শেষপর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার সমপরিমান লোকসান দিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেন।

*ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জামান নাসিম বাবার দেখানো পথেই হ্যন্ডলুম ফ্যাক্টরির আধুনিক সংস্করণ রফতানিমুখী একাধিক নীট গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন।
সবমিলিয়ে প্রায় ১২ টি রফতানিমুখি ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন ২২ হাজারের অধিক শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মচারি।

*এভাবেই
ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ বীরবিক্রম রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক জ্ঞানতাপস
মরহুম আলহাজ মাওলানা লুৎফুর রহমানের সেই স্বপ্ন পুরন করেন পুত্র ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জামান নাসিম।

শামসুজ্জামান-
আসসালামুয়ালাইকুম,
আজকের এই সুন্দর অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমাদের কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালকবৃন্দ, কর্মকর্তা কর্মচারি ও অতিথিবৃন্দ সবাইকে সালাম এবং শুভেচ্ছা।

আমার ৬০তম জন্মদিন বেসিক্যালি এটা বলা যায় যে,আল্লাহ যে এ সময় পর্যন্ত এখনো আমাদেরকে সুস্থ রেখেছেন এবং কাজ করার মতো,কর্মক্ষমতা রেখেছেন,এজন্য
মহান আল্লাহতালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

আজ আমার ৬০ তম জন্মদিন,
আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি কারণ,তিনি আমাদের এতদিন পর্যন্ত সুস্থসুবল এবং কর্মক্ষম রেখেছেন।

আমি মনে করি যে, সবচেয়ে বড় জিনিস হল যে,….
আমার এক বন্ধু আমাকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিলেন যে,
Who is the happiest person?
তার উত্তরে সেই লিখেছিল-
The person who can eat & can sleep,
যে খেতে পারে এবং ঘুমাতে পারে, সেই হচ্ছে Happiest person.

.Normally দেখা যায় যে,মানুষের জীবনে যখন টাকা পয়সা আসে,বা ভাল job করে,ভাল পজিশনে থাকে, অনেক দায়িত্ব থাকে এবং সে দায়িত্বের কারণে কিন্তু মানুষ নির্ঘুম থাকে,ঘুম কম হয়,ফলে, তাদের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, যেমন ডায়েবিটিস হয়,ব্লাডপ্রেসার হয়,বিভিন্ন ধরনের problem দেখা দেয়।
কাজ করতে পারেন না।

সেইজন্যই আমাদের সবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা থাকবে, যাতে আল্লাহ আমাদেরকে Happiest men বানায়।আমরা যাতে খেতে পারি এবং ঘুমাতে পারি সেটা যেন আমাদের বানায় আরকি। সময় খুব দ্রুত চলে যায়,আমার এখনো যখন মনে পড়ে যে, আমি যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, তখন বয়স ছিল ১৮ বছর, যখন ভর্তি হই ১৯৭৮ সাল,
এই মনে হয় সেদিন।

কিন্তু জীবন থেকে প্রায় ৪২ বছর চলে গেছে। এই মনে হয় সেদিন চাকরি করলাম, এবং চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় স্টার্ট করেছি,সেটাও প্রায় ২৯ বছর। এই ২৯ টা বছর যে কিভাবে গিয়েছে মনেই হয় না। এখন ৬০ বছর যখন হয়েছে তখন আমার কাছে কিন্তু কিছুটা ভয়ই লাগছে।
যে ৬০ থেকে-৭০ এর মধ্যে মানুষের অনেক কিছুই হয়ে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ শোক দেখা দেয়।

আমি সবার কাছে দোয়া চাইব, আপনারা সবাই দোয়া করবেন,আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখেন, আমি যাতে আপনাদের পাশে থাকতে পারি।

যেভাবে আমাদের কোম্পানিটা বিল্ডাপ করেছি,আমাদের পরবর্তী যে নেক্সট জেনারেশন যারা আসতেছে,তারা যেন ঠিক একইভাবে এই কোম্পানি টা ধরে রাখতে পারে। কারন একটি কোম্পানি তৈরি করা এবং কোম্পানিটাকে ধরে রাখা খুবই কঠিন কাজ। কোম্পানি তৈরি করা যত সহজ, তারচেয়ে অনেক কঠিন কোম্পানি টাকে ধরে রাখা। সব ভালো কলিগদেরকে দিয়ে একটা কোম্পানি রান করা কিন্তু অনেক কঠিন।

আমরা খুবই গ্রেস’ড যে
এখন পর্যন্ত সুস্থ আছি,আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন।
আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমাদের সব কলিগ যারা আছেন,যেন সুস্থ থাকেন, অনেক হায়াত পান,অনেক বেশি হায়াত পাই।
এবং আল্লাহ তালা আমাদের যেন সেই শক্তি দেয়।
সবাইকে টেক কেয়ার রার জন্য।

আমি আজকে সবাইকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকের এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য। ১০ বছর আগেও আমরা এই ভাবে সেলিব্রেট করেছিলাম এখানেই। আর আজকেও আমরা ঠিক একই ভাবে সেলিব্রেট করতেছি। আসলে এই করোনার মধ্যে সেলিব্রেশনটা ওয়াইজ না।

*একটা জিনিস আমার অবাক লাগে,
আমি মাঝে মাঝেই খুবই অবাক হই,
এই একইদিনে আমার বাবার জন্মদিন। একই দিনে বাবা ও ছেলের জন্মদিন এইটা খুবই রেয়ার।

বাবার সাথে আমার অনেক বেশি আত্মিক সম্পর্ক ছিল।
বেশিরভাগ দেখা যায়, ছেলের সাথে মায়ের সম্পর্ক ভাল থাকে,
আর মেয়ের সাথে বাবার।
কিন্তু আমার ক্ষেত্রে কিন্তু উল্টা টা হয়েছে।

বাবার সাথে আমার আলাপ বেশিড় হতো। মায়ের সাথেও হতো কিন্তু বাবার সাথে একটু বেশি। আসলে আমার প্রতি বাবার একটু বেশি দুর্বলতার একটা কারণ শুনেছি।

[১৯৬০ সালে আমি যখন জন্মগ্রহণ করি বাবা ভৈরবের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতেন,শিক্ষকতার সুবাদেই তিনি সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই একটা উইভিং ফ্যাক্টরি ছিল। সেখানেই তিনি কাজ শিখেন। কিভাবে সুতায় রং করতে হয়, কিভাবে ওয়াস করতে হয়,কিভাবে ফিনিসিং দিতে হয়। সেখানে থাকাকালীন ওখানেই উনি কাজ শিখেছেন।
তারপর তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চাঁদপুরে এসে ১২টি লুম নিয়ে একটি ফ্যাক্ট্রি শুরু করেন এবং ফ্যাক্টরির নাম ছিল আমার বড় ভাইয়ের নামে,”শামীম হ্যান্ডলুম ফ্যাক্টরি।

কিন্তু ওই ফ্যাক্ট্রিতে বেশি সুবিধা করতে পারেন নি কারন, তিনি ভৈরব_থেকে উইভার তাতি নিয়ে আসতেন।
কাজ করে মুজুরি নিয়ে আবার রাতেই চলে যেতেন।

ফ্যাক্টরিটা যদি ভৈরবে করতেন তাহলে হয়তো সুবিধা হতো,ফ্যাক্টরিটা টিকে থাকতো,উন্নতি হতো।।

যাইহোক তিনি successful হতে পারেন নি।
এবং ফাইনালি ফ্যাক্টরি টি বন্ধ হয়ে যায়।

তার কাছ থেকে আমি শুনেছি, তখনকার দিনে নাকি প্রায় ৩০ হাজার টাকার মত তার লস হয়।
তখনকার দিনে ১৯৫৮ সালের দিকে এইটা অনেক বড় অঙ্কের মানি।

আমাকে যখন উনি প্রথম কোলে নেন তখন আমার বয়স সাড়ে তিন মাস।,

আমি যতটুকু শুনেছি আমাকে বিলম্বে কোলে নেয়ার কারণে নাকি তার গিল্টি ফিল হচ্ছিল!
যে ছেলের জন্মের সময় বাবা কাছে থাকতে পারেননি এই গিল্টি ফিলিং নাকি তাঁর মধ্যে ছিল !!

আমার মাঝে মাঝে যা মনে হয় আমার যে সাকসেসটা সেটা আমার বাবার ব্যর্থতার জন্য হয়েছে।

বাট he was a very good entrepreneur… কিন্তু অনেক সময় অনেক ভাল ইন্ট্রেপেনারও সফলতা পায় না।
কিন্তু উনি যখন আমার সফলতা দেখে গেছেন তখন তিনি আমাকে দোয়া করেছেন,আমাদের মাইক্রোফাইবার গ্রুপের জন্য।
তিনি আমাদের এই ফ্যাক্টরিটা দেখে গেছেন,ফতুল্লা ফ্যাক্টরি টা দেখে গেছেন,ভুলতা ফ্যাক্টরি দেখে গেছেন। বাকীগুলো পারেননি।
তো উনার দোয়া ছিল,প্রচন্ডরকম দোয়া ছিল।
আমি এখনো ফিল করি।
উনার অস্তিত্ব আমি এখনো আমার মধ্যে পাই।
আজকে বাবা বেঁচে থাকলে ওনার বয়স হতো ৯২।
উনার যখন বয়স ৩২ বছর বয়স,
আমার তখন জন্ম।
মানে বাবার আর আমার বয়সের মধ্যে পার্থক্যটা অলমোস্ট ৩২ বছর।

উনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯২৮ সালে, আর ইন্তেকাল গিয়েছিলেন ২০০৯ সালে।,

সিমিলারলি আমাদের যে পরিচালক জনাব শরিফ হাসান সাহেব(পুত্র),
ওনার আর আমার বয়সের ডিফারেন্স ৩৩ বছর।

আমি উনাকে চেষ্টা করেছি আমাদের প্রোফেশনে এডুকেট করার জন্য।এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার জন্য।

এখন উনাদের সময়,আমাদের রিটায়ার্ড এর সময়।
কিছুদিন পরই we have to retire.. ওনাদের হাত ধরেই এই ফ্যাক্টরি এগিয়ে যাবে।
আপনাদের সহযোগিতায়,আপনারা সবাই ওনাদের সাহায্য করবেন।
আমি মনে করি ওনারা আমাদের থেকে আরো অনেক বেশি Successful হবেন।

আমরা ফ্যাক্টরিটা একটা সারটেইন জায়গায় নিয়ে এসেছি।
আমি আশা করছি ওনারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সাকসেস হবেন।
ভাল কাজ করবেন।
আমি দোয়া করছি।
আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমাদের জন্য আমরা সবাই যাতে ভাল থাকি।

আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করি,
আমরা যেন এই করোনা মহামারির সময় আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখেন।,

আমরা যাতে সুন্দরভাবে এই করোনা মহামারী কাটিয়ে উঠতে পারি,আল্লাহ তালা যাতে আমাদের সেই শক্তি দেন। আমি আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাদের আজকে এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য, এতক্ষন ধরে আমার বক্তব্য শোনার,আমি আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Thank you so much…

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: খোলা বাতায়ন,নারায়ণগঞ্জের খবর,লাইফস্টাইল,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.