শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

সাত শিশুর মৃত্যুর পর প্রশাসনের টনক নড়ল

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় বেলুনে গ্যাস ফোলানোর সময় বিস্ফোরণে সাত শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টনক নড়েছে। এখন থেকে প্রকাশ্যে আর কেউ বেলুনে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস ভরে বিক্রি করতে পারবে না। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এক জরুরী বৈঠকে সকল থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, গ্যাস ফোলানোর সময় বিস্ফোরণে শিশু মৃত্যুর ঘটনা খুবই দু:খজনক। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে আর ঘটে সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এভাবে প্রকাশ্যে বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করলে তার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র জানিয়েছে, থানা পুলিশ গতকাল থেকেই এ বিষয়ে কঠোর হতে শুরু করেছে। ডিএমপির প্রতিটি থানা পুলিশ এরই মধ্যে এ বিষয়ে নজরদারি শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমেও এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া বুয়েটসহ সংশিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি’র এক কর্মকর্তা। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম বলেন, সিলিন্ডার থেকে এভাবে গ্যাস ভরার অনুমোদন নেই। বিষয়টি নিয়ে তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, এভাবে যারা বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, বাজার থেকে সিলিন্ডার বা লোহার পাইপ কিনে তা কেটে প্রথমে একটি পাত্র তৈরি করে বেলুন কারবারীরা। এরপর ওই পাত্রের ভিতর এ্যানোড ও ক্যাথোড দুইটি দন্ড স্থাপন করে তাতে কস্টিক সোডা ও অ্যালুমিনিয়ামের কুচি দেয়। এতে পানি দিলে হাইড্রোজেন গ্যাস সৃষ্টি হয়। এই গ্যাস পাইপ দিয়ে বেলুনে ভরে বিক্রি করে। এক সময় পাত্রে ক্ষয় ধরে সিলিন্ডার পাতলা হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। এদিকে প্রকাশ্যে বেলুন ফুলিয়ে বিক্রির সময় শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবাইকে ভাবতে বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের আকৃষ্ট করে, এমন প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে বেলুন ফুলিয়ে বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধে সরকারকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বলে এসেছি যে, এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের আরেকটু সতর্ক থাকা উচিৎ। এই জায়গায় একটি স্পষ্ট দিক নির্দেশনা আসা প্রয়োজন। বাচ্চাদের আকৃষ্ট করতে প্রকাশ্যে বেলুন ফুলিয়ে বিক্রি বন্ধ করতে হবে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে লিখেছি, যাতে পুলিশ অবশ্যই এই বিষয়ে মনিটরিং করে। আরেক শিশুর মৃত্যু: গত বুধবার বিকালে মনিপুর স্কুলের রুপনগর শাখার বিপরীত দিকে ১১ নম্বর সড়কে বস্তির পাশে ভ্যানে করে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত আরেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম নিহাদ (৮)। সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিল। গত বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নিহাদ এর পিতার নাম সারোয়ার হোসেন। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহে। নিহাদের মা হালিমা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, ‘বস্তির পাশে বেলুনওয়ালা আইলেই আমার ছেলে ছুইটা যাইত। তয় এমন হইবো কহনো ভাইবা দেহি নাই। পোলাডার লাইগা পরানডা ফাইডা যায়।’ নিহত অন্যদের মত নিহাদও পরিবারের সঙ্গে শিয়ালবাড়ি বস্তিতে থাকত। ওই ঘটনায় এই নিয়ে মোট সাত শিশুর মৃত্যু হলো। বাকি শিশুরা হলো, ফারজানা (৭), নূপুর (১১), রুবেল (১০), রমজান (৮), শাহিন (৯) ও রিয়া মনি (১০)। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপর তাদের লাশ গত শুক্রবার প্রত্যেকের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। মরদেহ হস্তান্তরের সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। এছাড়া এ ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ থেকে ১৫ হাজার করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসক। এ ঘটনায় বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদও আহত হয়েছে। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। গতকাল হাসপাতালে আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি তো ইচ্ছে করে বিস্ফোরণ ঘটায়নি। এটা একটা দুর্ঘটনা। শুনলাম অনেকে মারা গেছে। এ জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। যারা আহত আছে, তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়। বিস্ফোরণের পর ৫ মিনিট আমারও জ্ঞান ছিল না।’ গত শুক্রবার দুপুরে শিয়ালবাড়ি বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। সবার মুখে ঘুরে ফিরে একই কথা। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। এলাকায় এভাবে প্রকাশ্যে গ্যাস ভরে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না বলেও তারা সিদ্ধান্ত নেয়। মামলা দায়ের : ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় রুপনগর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় সেও (আবু সাঈদ) আহত হয়েছে। পুলিশ প্রহরায় তার চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এভাবে প্রকাশ্যে যাতে কেউ বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করতে না পারে সেদিকে নজরদারি শুরু করেছি আমরা। যেহেতু শিশুরাই এই বেলুনের বড় ক্রেতা তাই স্কুলের সামনেসহ বিভিন্ন জনসমাবেশ স্থলে নজরদারি চলছে। বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস/আহসান শিপু

Categories: সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.