শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

আ.লীগ-বিএনপিতে ‘চমক’ কৌশলী জাতীয় পার্টি

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ, গণসংযোগ শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণে রাজনৈতিক অঙ্গন এখন মুখর। এ আসনের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৃণমূলে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি কেন্দ্রে বাড়ছে লবিং-তদবির।

নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও অনেক প্রার্থী সরব রয়েছেন প্রচারে।

সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসন। দশম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগ চার, বিএনপি চার এবং জাতীয় পার্টি দুবার জয়ী হয়েছে। দেশের সংসদীয় নির্বাচনে এ আসনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গণমুখে প্রচলিত আছে, সিলেট-১ আসনে যে দল জয়লাভ করে, সেই দল সরকার গঠন করে।

এদিকে বিভাগীয় শহরকে কেন্দ্র করে সিলেট-১ আসন নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। এই আসনে ভোটার ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৮১ হাজার ৮০০ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৭ জন। ভোটাররা চাচ্ছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে যিনি এ এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সফল হবেন।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতে, সিলেটের উন্নয়নে বর্তমান সরকার যা করেছে, তা বিগত ৫০ বছরেও হয়নি। তাই জনগণ আবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের দাবি, এ আসনে কোনো উন্নয়নই হয়নি। তারা চান নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।

আওয়ামী লীগ : এ আসনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে চলছে জটিল সমীকরণ। তবে মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনে চমক থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আর সেই চমক হতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন। এমটি ধারণা ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল নেতাদের। ফরাসউদ্দিন এর আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনায় থাকলেও নির্বাচনের ব্যাপারে কখনো আগ্রহ দেখাননি তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে তিনি এবার নির্বাচন করবেন বলে প্রতিদিনের সংবাদকে জানিয়েছেন।

এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিকবার বলেছেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। এমনকি সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে নিজের ছোট ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেনকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে বেশ কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ড. আবদুল মোমেন।

এ ছাড়া নগরীর কাজীটুলার বাসিন্দা সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। সাম্প্রতিক সময়ে ছহুল হোসাইন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি ঘন ঘন নির্বাচনী এলাকায় আসা-যাওয়া করছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।

প্রার্থিতার ব্যাপারে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সম্ভাব্য আরো যারা আলোচনায় আছেন, তারাও ভালো। সুযোগসন্ধানী কিছু মানুষ আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে, তারা সবাই ভালো মানুষ।

আ.লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা মিসবাহ সিরাজ বলেন, সরকারের নানা উন্নয়ন চিত্র আমি জনগণের সামনে তুলে ধরছি। মাঠে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি দলীয় মনোনয়ন পাব বলে আশাবাদী।

দলের প্রার্থী প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দেবেন, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই মাঠে কাজ করবেন।

বিএনপি : এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। তবে তিনি বাংলাদেশের ভোটার না হওয়ায় প্রার্থী হওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। আলোচনায় রয়েছেন জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার ইনাম আহমদ। এ ছাড়া সাবেক বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, দলের হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিয়মিত চষে বেড়াচ্ছেন সংসদীয় এলাকা। তিনি বলেন, দল আমার প্রতি আস্থাশীল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একাদশ নির্বাচনে এ আসনে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব বলে আশাবাদী। জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার ইনাম আহমদ বলেন, দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুত রয়েছেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এ আসনে বিএনপি থেকে চমক থাকতে পারে। এ আসনে জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হতে পারেন বলে ধরণা করা হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সিলেট বিএনপি তার পক্ষে কাজ করবে।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। দলের অনেক নেতাই মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার আছে। তবে নেতাকর্মীদের পছন্দ জিয়া পরিবারের কেউ এখান থেকে নির্বাচনে অংশ নেক।

জাতীয় পার্টি : জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যদি জোটগত নির্বাচন হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি এ আসনে প্রার্থী দেবে না। তবে এককভাবে নির্বাচন হলে তার দল এ আসনে প্রার্থী দেবে। তবে কে হচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপেক্ষা করুন; সময় হলে জানতে পারবেন। জেলা জাপার সদস্য সচিব উছমান আলী বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী মোর্চা থেকে সিলেট ও রংপুরে বেশি আসন চাইবে জাপা।

এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে দলের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা জিয়াউদ্দিন নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.