বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

ভোটযুদ্ধে আ.লীগ-বিএনপি, মাঠে জাপাসহ বহু দল

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: পাঁচটি সংসদীয় আসনের গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গাজীপুর-৫ আসন। গত দুই নির্বাচনের জয়ের ধারায় আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এ আসনে গত চারবারের বিজয়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। জয়ের ধারায় ফিরতে চায় এ আসনটিতে একবার জয়লাভ করা জাতীয় পার্টিও।

তবে কার্যত এ আসনে ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই। কালীগঞ্জ পৌরসভা, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪টি ওয়ার্ড (৩৯, ৪০, ৪১, ৪২) ও গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসন। এ আসনে হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ৩০৪১৩৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১৫০৬১৫ জন ও পুরুষ ১৫৩৫১৯ জন। আর ওই সংখ্যক ভোটারের মন জয় করতে আওয়ামী লীগ থেকে যেমন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে, তেমনি শোনা যাচ্ছে বিএনপি থেকেও।

আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় মহাজোট : ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি আবারও প্রার্থী হতে চান। তিনি ২০০৮ সালে নবম ও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার সংরক্ষিত নারী আসনে মহিলা এমপি ছিলেন। তার প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ মসলিন কটন মিলস বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হা-মীম প্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

একসময়ের ঝিমিয়ে পড়া কালীগঞ্জ বর্তমানে কর্মচঞ্চল। উন্নয়ন হয়েছে যোগাযোগ ও শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠানেও। প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বাবা শহীদ ময়েজউদ্দিনও এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এবং বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি শহীদ হন।

বাবার কথা উল্লেখ করে চুমকি প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, বিগত দিনের মতো এ আসনটি ধরে রাখতে স্থানীয়ভাবে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে পাড়ায়-মহল্লায় উঠান বৈঠক শুরু করেছেন এবং তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তিনি। তিনি আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী তাকেই মনোনয়ন দেবেন।

চুমকি ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন ডাকসুর দুবারের সাবেক জিএস, একবারের ভিপি, বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আখতারউজ্জামান। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আখতারউজ্জামান বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সৎ ও জনপ্রিয়তা দেখে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তাই সাধারণ মানুষ আসন্ন নির্বাচনে তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছে। দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশাবাদী।

বাংলার ‘মিয়া ভাই’খ্যাত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন—এমন কথাও শোনা যাচ্ছে তার কর্মী-সমর্থকদের মুখে। চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, ‘চার শ বছর ধরে এ এলাকায় আমার বাপ-দাদারা বসবাস করে আসছেন। সবার আগে এখানে নির্বাচন করার অধিকার আমারই রয়েছে। যেখানে ৫৭ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে আসছি, সেখানে নতুন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই। এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে চেনেন। এখন নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে দলের জন্য কাজ করতে চাই।’

বিএনপি বা ২০ দলীয় ঐক্যজোট : ২০ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্রদল নেতা, সাবেক এমপি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলনের নামই নেতাকর্মীদের মুখে। ২০০১ ও ২০০৬ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীরা দাবি করেন, ক্ষমতাসীন দলের নানা কর্মকা-ে মানুষ অসন্তুষ্ট। আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হলে মানুষ মিলনকেই নির্বাচিত করবেন।

ফজলুল হক মিলন বলেন, বিএনপি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। বর্তমানে তারা দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত। এখন দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে, তিনি এ আসনটি পুনরায় উদ্ধারের সব প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।

বিএনপি থেকে এ আসনে আরো দুই প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন, অন্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি আহমেদ সাইমুম।

মনির হোসেন বলেন, তৃণমূলের প্রত্যাশা পূরণ করতে এ আসনে আমি নির্বাচন করতে মনোনয়ন চাইব। আশা করি দল বিবেচনা করবে। কারণ এই ক্রান্তিকালে দলে যাদের গেইন ইমেজ আছে, তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা আছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দল ওই ধরনের সিদ্ধান্তই নেবে আশা করি। আরেক প্রার্থী আহমেদ সাইমুম বলেন, ‘দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে আছি এবং কাজ করছি। দলের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। এখন দল যদি মনে করে আমাকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেবে, তবে আমি প্রস্তুত।’ তবে এই দুই প্রার্থীই দলীয় সিদ্ধান্তের প্রাধান্য দেবেন বলে ব্যক্ত করেন।

জাতীয় পার্টি : জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে দলটির স্থানীয় নেতা ও প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) বা নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনেরও প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আজম খানের স্ত্রী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রাহেলা পারভীন খান শিশির এ আসনে প্রার্থী হবেন।

আজম খান বলেন, তিনি আগামী নির্বাচনে গাজীপুর-৫ ও নরনিংদী-২ আসন থেকে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি তার রয়েছে।

অন্যদিকে ১৯৮৬ সালে সংরক্ষিত মহিলা এমপি ও জাপা (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারা বেগমের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে বর্তমানে তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনে প্রার্থী নাও হতে পারেন।

অন্যান্য দল : এ ছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জেলা কমিটির সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান ভূঁইয়াও নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। তবে তার দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ায় বিষয়টা নিয়ে নতুন করে হিসাব করতে হবে। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে দলীয় হাইকমান্ড চাইলে অবশ্যই তিনি দলের ডাকে সারা দিয়ে নির্বাচনে যাবেন। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে তার।

বিগত দিনগুলোয় এ আসনে জামায়াত-শিবিরের কোনো কার্যক্রম না থাকলেও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটি কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, জেলা জামায়াতের সম্পাদক ও জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. খাইরুল হাসান প্রার্থী হবেন বলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রার্থী হবেন বলে প্রকাশ হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক জনসভায় দলটির আমির চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করিম এই ঘোষণা দিয়েছেন।

একই আসনে জাকের পার্টি বাংলাদেশের প্রার্থী হতে চান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক, ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম মহাসচিব, গাজীপুর মহানগর ও জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এন এম মনিরুজ্জান লাল মিয়া। ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির সহসভাপতি এ বি এম জিয়াউর রহমার ওরফে ফেলু হাজি।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.