শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

রোজার প্রতিদান আল্লাহ দেবেন

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: জীবনের ব্যস্ততাকে অবসান দিয়ে, অন্তরমমকে প্রসন্ন করে, হৃদয়মিনারে বাতি জ্বালিয়ে মুসলমান বরণ করে পবিত্র রমজানকে। পাপ-পঙ্কিলতার নিষিদ্ধ দেয়ালে লেপ্টে দেয় শুদ্ধতার পলেস্তরা। জীবনের দোকানে বিপণনী সাজায় ইসলামী তাহজিব-তমদ্দুন এবং আল্লাহর নির্দেশিত নীতিমালার। ত্যাগের তরী ভাসিয়ে দেন পুণ্যের সাগরে। পুণ্যের ঊর্মিমালায় দোলে ওঠে পবিত্র মন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সংগম ও সব ধরনের অশ্লীল অনৈতিক কর্মকা- থেকে বিরত থাকে মুসলমান। তখন তার নাম রোজাদার। ত্যাগ কোরবান, আত্মসমর্পণ, বিসর্জনে সে বনে যায় খোদাভীরু ও রাব্বে কারিমের খুব কাছের বন্ধু। জগৎ অধিশ্বরের ভালোবাসার চাদরে আচ্ছাদিত হয় তার জীবনযাপন, কাল এবং সময়।

রোজা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল। রবের কাছে সহজে পৌঁছার বড় মাধ্যম। সন্তুষ্টি অর্জনের উজ্জ্বল সোপান। রোজাব্রত পালনের ফজিলত ও প্রতিদান দেন আল্লাহ নিজেই। অন্য সব আমলের সওয়াব ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌঁছান কিংবা আমলের সওয়াব পূর্বনির্ধারিত থাকে। কিন্তু রোজাই একমাত্র আমল, যার সওয়াব আল্লাহ নিজেই দান করবেন। কেননা মানুষের সব আমল তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আল্লাহর জন্য। মানুষের সিয়াম সাধনা জগতের মালিকের জন্য। আল্লাহর কথা প্রিয় নবীর কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে, ‘সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুণ।’ (বোখারি : ১৮৯৪)।

বান্দার আমল তাকে আটটি জান্নাতের একটিতে বাসিন্দা বানাবে। কোনো বিশেষ আমলের জন্য জান্নাতের নির্ধারিত প্রবেশদ্বার নেই। তবে রোজাই একমাত্র আমল, যার জন্য রয়েছে নির্ধারিত জান্নাতের দরজা, যার নাম ‘রাইয়্যান’। যে দরজা দিয়ে শুধু রোজাব্রত পালনকারী ব্যক্তি প্রবেশ করবে। রোজাভঙ্গকারী ব্যক্তি রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। রোজার বিশেষত্ব বান্দাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়, বান্দাকে করে মহিমান্বিত ও মর্যদার সুউচ্চ আসনে সমাসীন। হাদিসে বিধৃত হয়েছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে, যাতে এ দরজাটি দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ না করে।’ (বোখারি : ১৮৯৬)। ইবনে হিব্বান কিতাবে আছে। আবু উমামা (রা.) রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দেন, যার কারণে আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি বলেন, ‘তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো আমল নেই।’
মানুষের পেটে দীর্ঘ সময় ধরে খাবার না পৌঁছলে পেটে এক ধরনের বাষ্প তৈরি হয়। বাষ্প থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। সেই বাষ্প যখন ঢেঁকুর অথবা ‘হাইয়ের’ সঙ্গে মুখ দিয়ে বের হয় তখন সেটা দুর্গন্ধ হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধটা নাকে বিষাদ ঠেকে। অস্বস্তি লাগে। একজন রোজাদার ব্যক্তি দিনের পুরোটা সময় পানাহার থেকে বিরত থাকায় তার মুখের শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

এ দুর্গন্ধটা আমাদের কাছে যদিও অস্বস্তি লাগে, কিন্তু আমাদের মালিক আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয়। এই গন্ধে আল্লাহ বিমোহিত হন। এই ঘ্রাণে সুভাসিত হন। ঘ্রাণের মোহে আন্দোলিত হয়ে বান্দার প্রেমে পড়েন। আল্লাহর পছন্দের কথা হাদিসে এভাবে রাসুল (সা.) ব্যক্ত করেন, ‘রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে কস্তুরির ঘ্রাণের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়।’ (মুসলিম : ১১৫১; ইবনে মাজাহ : ১৬৩৮)।

মানুষ গোনাহের ভেতর জীবনযাপন করে। স্বাদে-অস্বাদে গোনাহ করে। পাপ-পঙ্কিলতায় জীবনের দেয়ালে কলঙ্কের শ্যাওলার আবরণ ফেলে দেয়। তখন জীবন থেকে শুদ্ধ সভ্য জীবন পালিয়ে বেড়ায়। গোনাহের বোঝাকে সরিয়ে জীবনকে পবিত্রতার সমুদ্দুরে স্নাত করে রোজা। রোজা মানুষের গোনাহকে ধুয়ে মুছে দেয়। গোনাহকে ক্ষমা করে দেয়। রাসুল (সা.) বলেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বোখারি : ১৯০১)।
জাহান্নাম শাস্তি দেয়ার প্রধান জায়গা। জাহান্নাম অপরাধীর আবাসস্থল। সুস্থ বিবেকবান মানুষ দৃঢ়ভাবে প্রার্থনা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তির, জাহান্নামের নিকৃষ্ট আজাব থেকে পরিত্রাণের। রোজা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়। নরকের সামনে ঢাল হয়ে প্রতিরোধ গড়ে। ব্যক্তিকে জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। রাসুল (সা.) বলেন ‘যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, সিয়ামও তদ্রƒপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।’ (ইবনে মাজাহ : ১৬৩৯; বায়হাকি : ৪/২১০)।
অপর একটি হাদিসে বিধৃত হয়েছে ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি রোজা রাখে, তার এই একটি দিনের বদৌলতে আল্লাহ তাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন।’

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: লাইফস্টাইল,স্বাস্থ্য

Leave A Reply

Your email address will not be published.