বিষেরবাঁশী ডেস্ক: আজ স্বশিক্ষিত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের ৩৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মেডিকেলের ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য তার দেহ শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর এনাটমি বিভাগে দান করেন। এমন দানের ঘটনা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব! অত্যন্ত সাদামাটা জীবনের মানুষ হয়েও আরজ আলী মাতুব্বর কর্মকান্ড আজো আলোচনায়।
আরজ আলী মাতুব্বরের জন্ম ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৩ পৌষ বরিশালের নিভৃত লামচরি গ্রামে। জন্মের চার বছরের মাথায় পিতা এন্তাজ আলী মাতুব্বর মারা যান। পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে আরজ আলীর মা লালমন্নেসা বিবি মানুষের বাড়ি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।
সামান্য অক্ষরজ্ঞান নিয়ে আরজ আলী লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিতে বই পড়ে সময় কাটাতেন। বরিশালের পাবলিক লাইব্রেরি, মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত বরিশাল শহরের অন্য একটি লাইব্রেরি এবং বরিশাল বিএম কলেজের লাইব্রেরি- এই সব লাইব্রেরি-ই হয়ে ওঠে আরজ আলী ঠিকানা।
বিশেষ করে বিএম কলেজের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি আরজ আলীকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছিল। এই লাইব্রেরিই আরজ আলীকে দিয়েছিল অপার জ্ঞানের সন্ধান। ছিয়াশি বছরের জীবনে জ্ঞান সাধনাতেই কাটিয়েছেন প্রায় সত্তর বছর।
অভাবের সংসারে বেঁচে থাকার জন্য আরজ আলী এক সময় আমিনের কাজও (জমি জরিপকারী) করেন। লোকের জমি মেপে যে পয়সা পেতেন তা সংসারের খরচ মিটিয়ে বাকি টাকা দিয়ে নিয়মিত বই কিনতেন। এভাবেই তিল তিল করে বই কিনে ১৩৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’।
আরজ আলীর রচিত পান্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। এর মধ্যে তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল ৪টি। এই বইগুলো হলো- ‘সত্যের সন্ধান’, ‘অনুমান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’ ও ‘স্মরণিকা’। এসব বই তার সত্যানুসন্ধানেরই পরিচায়ক।
কারো কাছে তিনি ছিলেন নাস্তিক, আবার কারো কাছে মানবতাবাদী। তবে তার চিন্তা-ভাবনা ছিল দার্শনিকদের মতো। তিনি আজীবন সত্যানুসন্ধানে ব্যাপৃত ছিলেন। সত্যানুসন্ধান করতে গিয়েই তিনি মানবতাবাদী হয়েছেন, চিন্তাবিদ লেখক হয়েছেন। যা তাকে দার্শনিকে পরিনত করেছে।
অনেকেই মনে করেন, আরজ আলী মাতুব্বরে ছিলেন মুক্তবুদ্ধির চর্চায় অগ্রসর এক অসাধারণ মানুষ। তিনি অত্যন্ত সরল ও সহজ ভাষায় প্রাণের আর্তিগুলোকে প্রকাশ করে গেছেন তার রচনাসম্ভারে।
বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়