বৃহস্পতিবার ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

রাশিয়াকে কীভাবে শাস্তি দিতে পারে ব্রিটেন?

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: সাবেক এক রুশ গুপ্তচরের ওপর বিষ প্রয়োগের ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করেছে ব্রিটেন। একই সঙ্গে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে মস্কোর কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা না পেলে রাশিয়াকে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।

স্ক্রিপাল গোপনে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআই সিক্সকে তথ্য সরবরাহ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বন্দি গুপ্তচর বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পেয়ে ব্রিটেনে আশ্রয় পেয়েছিলেন তিনি। গত ৪ মার্চ ইংল্যান্ডের স্যালসবেরি শহরে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়েকে বিষাক্ত নার্ভ গ্যাস প্রয়োগে হত্যার এক চেষ্টার পর দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের এই টানাপোড়েন শুরু হয়।

তদন্তের পর গতকাল সোমবার রাতে সংসদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই বিষের উৎস রাশিয়া। তাই মঙ্গলবারের মধ্যে পুতিন সরকারের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পেলে রাশিয়াকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, পুতিন এই হুমকিকে কোনো পাত্তাই দেবেন না। ইতিমধ্যেই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক সার্কাস’ বলে পরিহাস করেছেন।

ডাইরেক্ট অ্যাকশন
ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পেলে রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করতে পারে ব্রিটেন। এর আগে ২০০৬ সালে অ্যালেক্সান্ডার লিতভিয়েঙ্কো নামে আরেক রুশ ডাবল এজেন্টকে বিষ প্রয়োগে হত্যার পর ব্রিটেন তেমন পদক্ষেপই নিয়েছিল। সন্দেহভাজন কয়েকজন রুশ নাগরিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু তেমন কোনো চাপ তাতে তৈরি হয়নি। বরং প্রধান সন্দেহভাজন অন্দ্রে লুগোভোই এখন রাশিয়ার একজন এমপি।

তাহলে আর কী করতে পারে ব্রিটেন?
# রুশ রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসে যেসব কর্মকর্তাকে গোয়েন্দা বলে সন্দেহ করা হয় তাদের বহিষ্কার করতে পারে।

# ব্রিটেনে বসবাসরত রুশ ধনকুবেরদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। তাদের সম্পদের উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত সেগুলোকে সাময়িকভাবে বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

# রাশিয়ায় আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবল বয়কট করতে পারে ব্রিটেন, কিন্তু মিত্র দেশগুলো তাতে আগ্রহী হবে তা মনে হয়না।

#রাশিয়ার টিভি চ্যানেল আরটি’র সম্প্রচার ব্রিটেনে নিষিদ্ধ করতে পারে।

রাশিয়ার ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞার বিস্তার?

২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া দখল করে নেওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা চাপায়। প্রায় ১৫০ জন রুশ নাগরিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়, এবং ৩৮টি রুশ কোম্পানির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। তবে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইইউ সদস্যদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইতালি, গ্রীস এবং হাঙ্গেরি এই নিষেধাজ্ঞা ওঠানোর পক্ষে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ব্রিটেন যেখানে ইইউ জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সেখানে রাশিয়ার ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ব্যাপারে তাদের অনুরোধে সাড়া না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

নেটো সামরিক জোট ব্যবস্থা নিতে পারে?

ব্রিটেন এই বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টাকে তাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘অবৈধ শক্তি প্রয়োগ’ হিসাবে দেখছে। নেটো সামরিক জোটের সংবিধানের ৫ ধারায় রয়েছে- কোনো সদস্য দেশের বিরুদ্ধে হামলাকে জোটের বিরুদ্ধে হামলা হিসাবে দেখা হবে। এই ধারা একবারই কার্যকরী করা হয়েছিলো আমেরিকায় ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর। তবে ব্রিটেন এখনও স্যালসবেরির ঘটনাকে আর্টিকেল ৫ বিষয় বলে দেখাতে চাইছে না। তবে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী সদস্য দেশগুলোতে অতিরিক্ত সৈন্য এবং অস্ত্র মোতায়েন করতে পারে নেটো জোট।

মিত্র দেশগুলোর সমর্থন কতটা?
ফরাসী প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গতানুগতিক বক্তব্য দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্র। আমেরিকা স্যালসবেরির ঘটনার নিন্দা করেছে তবে রাশিয়ার নাম উচ্চারণ করেনি। রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্রিটেন পশ্চিমা মিত্রদের কতটা পাশে পাবে তা দিয়ে অনেক পর্যবেক্ষকের সন্দেহ রয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

বিষেরবাঁশী.কম/ সংবাদদাতা/ হীরা

Categories: আন্তর্জাতিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.