# তেজগাঁওয়ে বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় মামলা
বিষেরবাঁশী ডেস্ক: কে এই সিরিয়াল কিলার? যার টার্গেট কেবল নারীরা। একের পর এক চার নারীকে খুন করে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এই খুনী। তদন্তে দেখা গেছে, একই কায়দায় প্রতিটি খুন করে। তার টার্গেট নারী। খুনের পর কোন প্রমাণও রাখছে না। খুনী খুবই সচেতন এবং সতর্ক। বাসা ভাড়া নেয়ার নাম করে বাড়ির মালিককে খুন করে পালিয়ে যায় এই ঘাতক। প্রতিটি খুনের শিকার হচ্ছেন নারী। রাজধানীর উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া পৃথক চারটি খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে ঘাতক সিরিয়াল কিলার। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার নাখালপাড়ায় বাসায় ঢুকে বাড়ির মালিক বৃদ্ধা আমেনা বেগমকে গলা কেটে হত্যার ঘটনাটিও উত্তরখান এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে।
পূর্বের খুনের ঘটনায় সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘাতকের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। গায়ের রং ফর্সা। মাথার চুল ছোট। কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো। খুনের পর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কৌশল তদন্ত করে পুলিশ ধারণা করছে ঘাতক একজন সিরিয়াল কিলার।
অপরদিকে, নাখালপাড়ায় বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে বাবু হাসান রাসেল বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় হত্যার কারণ ও আসামিরা অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘এই ঘটনাটি তদন্ত করে এখন পর্যন্ত তেমন কোন তথ্য মিলেনি।’ তবে খুনের দিন বৃহস্পতিবার এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘উত্তরখান এলাকায় পৃথকভাবে চার নারী খুনের শিকার হন। তারা বাড়ির মালিক ছিলেন। বাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলে ফ্ল্যাট দেখার সময় মালিক গৃহকর্ত্রীকে গলা কেটে অথবা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনার সঙ্গে বৃদ্ধা আমেনা খাতুন খুনের মিল রয়েছে।’
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই উত্তরার দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বলে গৃহকর্ত্রী শাহিদা বেগমকে (৫০) হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত ওই সিরিয়াল কিলার। এই খুনী ওই বছরের ২১ আগস্ট দক্ষিণখানের তেঁতুলতলা রোডে গৃহকর্ত্রী সুমাইয়া বেগমকে (৫২) একই কায়দায় হত্যা করেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এরপর ওই বছরের ৩১ আগস্ট দক্ষিণখানের মুন্সী মার্কেট এলাকায় জেবুন্নিছা চৌধুরীকে (৫৬) কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। একই কায়দায় এরপর এই খুনী খুন করে ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে গৃহকর্ত্রী ওয়াহিদা আক্তারকে (৪৮)। এসব খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর এখনও কোন কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ প্রতিটি ঘটনার তদন্তে দেখতে পেয়েছে, খুনী একইভাবে নারীদের খুন করেছে।
নাখালপাড়ায় ৭০ বছরের বৃদ্ধা আমেনা বেগমকে কেনো খুন করা হয়েছে-তার পরিবারের সদস্যরা কোনো ধারণাই করতে পারছেন না। তারা বলছেন-হত্যার তো একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকবে। তেমন কোনো কারণই তাদের জানা নেই। আমেনা একজন গৃহিণী। তার কোনো শত্র“ নেই। তার ছোটো ছেলে রাসেল বাবু বলেন-‘আত্মীয়-স্বজন তো বটেই, বাড়ির আশপাশেও কারো সঙ্গে আমার মায়ের বিরোধ ছিলো না। কিন্তু কেনো, কারা খুন করলো বুঝতে পারছি না।’
পারিবারিক সূত্র জানায়, ২৮৮, রসুল ভিলা নামের পাঁচতলা বাড়িটি আমেনার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। বাড়ির ™ি^তীয় তলায় ছোট ছেলে রাসেল বাবু, বাবুর স্ত্রী ও তাদের সন্তানের সঙ্গে থাকতেন আমেনা। ৩য় তলায় থাকেন তার বড় ছেলে আব্দুল হান্নান। দুই ইউনিটের এই বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। তবে সম্প্রতি নিচতলার একটি ও চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট খালি হয়। ভাড়া দেওয়ার জন্য ‘টু-লেট’ টাঙানো হয় বাড়ির ফটকে।
আমেনা বেগমের ছোট ছেলের স্ত্রী বর্ষা বলেন, দুপুরে কলিংবেলের শব্দ শুনে আমার শাশুড়ি ঘরের দরজা খোলেন। এক যুবক বাসা ভাড়া নিতে আসে। কোন তলায় ভাড়া হবে জানতে চায়। শাশুড়ি জানান, নিচতলা ও চার তলায় ভাড়া হবে। ছেলেটি শাশুড়িকে নিচতলা দেখাতে বলে। তখন আমি আর আমার শাশুড়ি ঘরে ছিলাম। তিনি ওই ছেলের সঙ্গে নিচতলায় যান। ২০ মিনিটের বেশি সময় পরেও তিনি আসছেন না দেখে আমি নিচে যাই। নিচতলার ডান পাশের খালি ফ্ল্যাটের দরজা খোলা ছিল। ভেতরে গিয়ে দেখি রান্নাঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় আমার শাশুড়ি পড়ে আছেন। মেঝেতে ছিল রক্ত। তবে ওই ছেলেকে পাইনি। গতকাল বাদ জুম্মা নিহতের লাশ নাখালপাড়া পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ভবনের নিচতলায় খালি ফ্ল্যাটের রান্না ঘরে ধারালো ও ভারি অস্ত্র দিয়ে আমেনা বেগমের মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছে। এতে তার মাথা অনেকখানি থেঁতলে যায়। তবে কি কারণে তাকে খুন করা হয়েছে সে বিষয় জানতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।
বিষেরবাঁশী ডেস্ক/এসপি/হৃদয়