শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় বেড়েছে

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাজেটের মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ সময় অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ব্যয় হয়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।

বাজেটে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক সবক্ষেত্রেই অব্যাহত আছে ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা। চলতি অর্থবছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি জাতিসংঘের সিডিপি সচিবালয়ের একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করে নিশ্চিত করেছে যে, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত সিডিপি রিভিউ সভার আগেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়োজনীয় তিনটি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, ‘আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রার এ মাহেন্দ্রক্ষণকে পুঁজি করে আমরা আরো অগ্রসর হতে চাই। ইতোমধ্যেই ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছি এবং তা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছি। একই সঙ্গে বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের কর্মপরিকল্পনাসমূহকে এসডিজির সঙ্গেও সমন্বয় করে নিয়েছি।’

অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক।

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছর আমাদের সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছর। দুই মেয়াদের প্রায় এক দশকে আমাদের সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক উন্নয়ন কৌশল দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি এনেছে। শেষ বছরটিতে আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছি, এক দশকের অর্জনকে সুসংহত করে একটি সুদৃঢ় ভিত রচনা করার জন্য, যার ওপর দাঁড়িয়ে আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের পথে অগ্রসর হতে পারবে। এ ছাড়া আর্থিক খাতের গুণগত পরিবর্তন আনতে আমরা সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, যা অদূর ভবিষ্যতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

অর্থমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, দ্রুত ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সহজাত সক্ষমতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বৈশ্বিক রোল মডেল। বিশ্বসভ্যতা ও জাতীয় উন্নয়নের প্রধান আশঙ্কা জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থি মনোভাব থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতা নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও যোগাযোগসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ। উন্নয়নের এই মহা আয়োজনে প্রয়োজন সবার কার্যক্রম অংশগ্রহণ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী জানান, এ সময়ে এনবিআর কর রাজস্ব আয় আদায় ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।

মন্ত্রী জানান, রফতানি আয় বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ৮ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে বেড়ে ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, বিগত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানি ব্যয় ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে; বিগত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আমদানি ঋণপ্রবাহ ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। বিগত অর্থবছরে একই সময়ে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরে ৩২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বার্ষিক গড় মুদ্রাস্ফীতি সেপ্টেম্বর ২০১৬-এর ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে কমে সেপ্টেম্বর ২০১৭ সময়ে সাড়ে ৫ শতাংশ হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী প্রথম প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবেদনে বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উচ্চহারের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এই লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি বিবৃতিতে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়িত্বশীল অর্থায়ন সহায়ক মুদ্রা ও আর্থিক নীতি অনুসরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, দেশের উৎপাদন সক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে আমরা সক্ষম হব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত আরো বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ভোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমদানির চাহিদা বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের মোট আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি।’

সংসদে উপস্থাপিত বাজেট প্রতিবেদনে সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকাকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর অনুন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ শতাংশ। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৪৬ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এসব ব্যয়ের মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ৩৬ হাজার ১২৯ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে ১০টি বৃহৎ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি বছর তাদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট বাজেটের ৫৬ দশমিক শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ মন্ত্রণালয়গুলো মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

১০ বৃহৎ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট ব্যয়ের চিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। ১৮ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার মধ্যে ৬ হাজার ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে এই মন্ত্রণালয়।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: অর্থনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.