বুধবার ৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ বুধবার

স্মৃতির পাতায় কিংবদন্তি নায়ক মান্না

তুহিন খান নিহাল: ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক মান্না। পুরো নাম এস এম আসলাম তালুকদার হলেও মান্না নামেই অধিক জনপ্রিয় প্রয়াত এই চলচ্চিত্র অভিনেতা। ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। যিনি তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পরই ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন মান্না। এরপর থেকে একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজেকে সেরা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি প্রায় সাড়ে তিন শ ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রে মান্না বঞ্চিত মানুষের কথা পর্দায় তুলে ধরেছেন।

নব্বই দশকে অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা শুরু হলে যে কজন প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন নায়ক মান্না। রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন অশ্লীল চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে। এসব চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন তিনি। দাঙ্গা, লুটতরাজ, তেজী, আম্মাজান প্রভৃতি চলচ্চিত্রে চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থানটি ছুঁয়েছিলেন মান্না। তার অভিনীত আম্মাজান চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।

মান্না অভিনীত প্রথম ছবি ‘তওবা’ হলেও সবার আগে মুক্তি পায় ‘পাগলি’ ছবিটি। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন মান্না। এর আগে সব ছবিতে মান্না দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। কাসেম মালার প্রেম ছবিটি দর্শকের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলার কারণে মান্না একের পর এক একক ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দাঙ্গা’ ও ‘ত্রাস’ ছবির কারণে মান্নার একক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

পরে মোস্তফা আনোয়ারের অন্ধ প্রেম, মনতাজুর রহমান আকবরের প্রেম দিওয়ানা, ডিস্কো ড্যান্সার, কাজী হায়াতের দেশদ্রোহী, আকবরের বাবার আদেশ ছবিগুলো চলচ্চিত্রে মান্নার অবস্থানকে সুদৃঢ় করে। নব্বই দশকের শেষের দিকে মুক্তি পায় তার ‘কে আমার বাবা’, ‘আম্মাজান’, ‘খবর আছে’ এবং মান্না প্রযোজিত দ্বিতীয় ছবি ‘লাল বাদশা’র মতো সুপারহিট ছবি। মান্না শুধু চলচ্চিত্র অভিনেতাই ছিলেন না, একজন প্রযোজক হিসেবেও ছিলেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত অধিকাংশ ছবিই ছিল ব্যবসাসফল।

এগুলোর মধ্যে লুটতরাজ, লাল বাদশা, আব্বাজান, স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, মনের সাথে যুদ্ধ, মান্না ভাই ও পিতা-মাতার আমানত উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটু একটু করে আঁধার নামতে শুরু করে তখন মান্নার ছবিগুলো ছিল প্রযোজক ও পরিচালকদের একমাত্র আশার আলো এবং ব্যবসায় টিকে থাকার শক্তি।

মান্না শতাধিক পরিচালক ও অর্ধশতকেরও বেশি নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। মান্নার পরিচালকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, কাজী হায়াৎ, মমতাজুর রহমান আকবর, ইস্পাহানি আরিফ জাহান, ইফতেখার জাহান, এফ আই মানিক, বদিউল আলম খোকন, শাহাদত হোসেন লিটন, নূর হোসেন বলাই, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, মালেক আফসারী ও শহিদুল ইসলাম খোকন। অন্যদিকে নায়িকাদের মধ্যে সেই ৮০-এর দশকের সুনেত্রা, নিপা মোনালিসা থেকে শুরু করে চম্পা, দিতি, রোজিনা, নতুন, অরুণা বিশ্বাস, কবিতার মতো সিনিয়র নায়িকাদের পাশাপাশি মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা, মুনমুন, সাথী, স্বাগতা, শিল্পী, লিমাসহ অনেক নায়িকার সঙ্গে অভিনয়ে সফল হয়েছিলেন।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে সিপাহী, যন্ত্রণা, অমর, পাগলী, দাঙ্গা, ত্রাশ, জনতার বাদশা, লাল বাদশা, আম্মাজান, দেশ দরদী, অন্ধ আইন, স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ, অবুঝ শিশু, মায়ের মর্যাদা, মা বাবার স্বপ্ন, হৃদয় থেকে পাওয়া, বড় লোকের জামাই ইত্যাদি।

মান্না অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৩ সালে ‘বীর সৈনিক’ চলচ্চিত্রে জন্য ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কারসহ মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৮ সালের এই দিনে তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতা আকস্মিকভাবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। আজ ১৭ ফেব্রæয়ারি তার দশম মৃত্যুবার্ষিকী। মহান এই অভিনেতাকে আমরা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। দিনটি উপলক্ষে আজ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন মিলাদ মাহফিল ও স্মরণসভার আয়োজন করেছে। আমরা আশা করি, এমন আরেকজন মান্নার আশায় পুরো বাংলা চলচ্চিত্র আবার জেগে উঠবে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: বিনোদন

Leave A Reply

Your email address will not be published.