শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

চালের বাজার ঠিক হতে আরও ১০-১৫ দিন লাগবে

  • অনলাইন ডেস্ক

বিনা জামানতে চাল আমদানি ও শুল্ক কমিয়ে আনার সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আমদানি প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা না থাকলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে বিদেশি চাল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠা চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তাদের ধারণা।

চাল কল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি হাওরে বন্যা ও ব্লাস্ট রোগে দেশে ধান উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এছাড়াও সরকারি গুদামে চালের মজুদ দুই লাখ টনের নিচে নেমে এসেছে। এ কারণে হঠাৎ বেড়ে গেছে মোটা চালসহ সব ধরনের চালের দাম। বর্তমানে ৪৭ টাকার নিচে কোনো ধরনের চাল পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিশেনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছি সরকারকে। কিন্তু তা করা হয়নি। তবুও রেগুলেটোরি ডিউটি পুরোপুরি প্রত্যাহার ও শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনায় চাল আমদানিতে আগ্রহী হবে ব্যবসায়ীরা।

আপদকালীন সংকট মেটাতে ভারত থেকে চাল আমদানির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকে চাল আমদানি করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। কারণ জাহাজবোঝাই থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রক্রিয়া মেনেই চাল আনতে হবে। তাই আপদকালীন সংকট মেটাতে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে চাল আনতে হবে।

বিদেশে থেকে কি পরিমাণ চাল আমদানি করা হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যতো টন চাইবে ততো টনই আনবে ব্যবসায়ীরা। চাল আনতে পথে কোনো বাধা না থাকলে সকালে বললে বিকেলেই ভারত থেকে চাল আনা সম্ভব।

বিনা জামানতে চাল আমদানির সুযোগ দিয়ে গত ১৯ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরের দিন চাল আমদানিতে রেগুলেটোরি শুল্কসহ ১৮ শতাংশ শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এর ফলে চাল আমদানি বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কারণে অচিরেই বাজারে চালের দাম কমবে বলেন মনে করেন অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিশেনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান সাকি।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কারণ শূন্য মার্জিনে চাল কেনার সুযোগ ও শুল্ক কমিয়ে দেয়ায় ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমদানিকারকরা ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে।

চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও নারায়নগঞ্জের ফিউচার কালেকশন চালকলের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, শুল্ক প্রত্যাহার ও বিনা জামানতে চাল কেনার যে সুযোগ দিয়েছে সরকার তা ব্যবসায়ীরা অবশ্যই কাজে লাগাবে। আমার ধারনা এই সুযোগে দেশে প্রচুর পরিমাণে চাল আমাদনি হবে।

‘‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে চাল আমদানি পরিকল্পনা নিয়েছি। বাজারে চালের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব; কত টন আমদানি করবো।’’

সংকট মোকাবেলা করতে সরকারি উদ্যোগেও থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ থেকে চাল আনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
তবে হাওরে বন্যার সুযোগে ব্যবসায়ীরাই বেশি লাভবান হবে তাই সরকারি উদ্যোগে চাল আমদানির পাশাপাশি সরকারকেও কিছু কৌশল গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, হাওরে বন্যার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে মিল মালিকেরা। বন্যার অজুহাতে তারা চাল আটকে রেখেছিল এতদিন। যখন বোরো মৌসুমেও চাল আশানুরূপ হয়নি; তখন তারা বেশি দামে পাইকারদের কাছে বাজারে চাল বিক্রি করা শুরু করেছে। এর ফলে ভোক্তা পর্যাায়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছে চালের দাম। যার কারণে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষেরা।

গোলাম রহমান বলেন, সরকার এখন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আরো আগেই এই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল।

“এখন চাল আমদানির পাশাপাশি আগামীতে সংকট মোকাবিলা করতে মিল মালিকদের থেকে আপাতত পুরাতন চাল কেনা বন্ধ রাখা উচিত। এতে তাদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি হলেও তা কাজে আসবে না। এক সময় তারাই ন্যায্য দামে বাজারে চাল ছাড়তে বাধ্য হবে।”

 

বি.বা/ডেস্ক/ক্যানি

Categories: অর্থনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.