শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

“জনতার মুখোমুখি” দাঁড়িয়ে মেয়র আইভী” জ্বলাময়ী ভাষণে সাফ জানিয়ে দিলেন, আমি বদলাই নি, (ভিডিও)

সুভাষ সাহা: মেয়র ডা.সেলিনা হায়ৎ আইভীর প্রায় ৪০ মিনিটের ছন্দময় ভাষণ উপস্থিত জনতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছেন। স্পষ্টভাষী মেয়র আইভীর মিষ্টি -ঝাঁঝাল বক্তব্যে সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ভাষণের পরতে পরতে চ্যালেঞ্জকে জয় করার প্রত্যয় ফোঁটে উঠেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
৯ জানুয়ারি মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীর স্মরণীয় দিন।২০১৬ সালের এ দিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

Image may contain: 6 people, people smiling, people standing
এক বছর পূর্তির এ বিশেষ দিনে মেয়র তাঁর পরিষদ নিয়ে জনতার মুখোমুখি হাজির হয়েছেন। পূর্বনির্ধারিত বিশেষ এ আয়োজনে মেয়রের বক্তব্য শোনার জন্য মানুষের অন্তহীন কৌতুহল। কখন নগরমাতা আসবেন।
হাতির ঝিলের আদলে নির্মীয়মাণ ‘জিমখানা ঝিলে’র পূর্ব প্রান্তে বিশাল জায়গার এক প্রান্তে নির্মিত স্থায়ী ‘উন্মুক্ত মঞ্চ’ নানা কারনে ইতিহাসের স্বাক্ষর হয়ে থাকবে। অবৈধ বস্তি আর আবর্জনার নোংরা স্তুপ থেকে দর্শনীয় এ স্থানের রূপকার মেয়র আইভী আবারো প্রমান করলেন,সদিচ্ছার কাছে অপশক্তির পরাজয় অনিবার্য।

বিকেল ৩ টার আগেই তিল ধারনের ঠাঁই নেই। মঞ্চে উপবিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের পরিষদবর্গ ও সামনের বিভিন্ন সারিতে অপেক্ষমাণ জনতার নিরবতা ভেঙে ধীর লয়ে দৃঢ় বীরকন্যা খ্যাত মেয়র মঞ্চে এলেন।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ,এফ,এম এহতেশামূল হকের চমৎকার সঞ্চালনার মধ্য দিয়ে প্রথমে কোরান তেলোয়াত ও গীতাপাঠের পর প্রধান আকর্ষণ মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী ডায়াসে দাঁড়িয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্যের শুরুতেই বলেন,”আমি বরাবরই জনতার মুখোমুখি হই। বিগত সময় আমরা কি করলাম,আগামীতে কি করব তা আপনাদের সামনে তোলে ধরব।  মেয়র আইভীর ক্ষুরধার পুরো ভাষণজুড়ে রয়েছে কৃতজ্ঞতা,স্বস্তি, ক্ষোভ আর চ্যালেঞ্জ।

Posted by সুভাষ সাহা on Tuesday, January 9, 2018

ভাষণের পুরো অংশ ও ভিডিও তোলে ধরা হলঃ বক্তব্যের শুরুতেই ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী উপস্থিত নাগরিকদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের বসার স্থান করে দিতে অনুরোধ জানান।
মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমি এখানে কারো নাম বলে; সকলের নাম যদি বলি অনেক সময় লেগে যাবে আপনারা সকলেই আমার এই নগরের সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ। আপনারা জানেন ২০০৫ সাল থেকে আমি এই জবাবদিহিতা চালু করেছিলাম । আমি প্রথম ২০০৫ এ নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারে যখন এটা পৌরসভা ছিলো তখন থেকে আমি বাংলাদেশে সর্ব প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা জনতার মুখমুখি হয়েছিলো,পরবর্তিতে অনান্য পৌরসভা জনতার মুখমুখি হয়। ২০০৫ থেকে আজ অব্দি আমরা প্রতিবছর এ জবাবদিহিতা করে যাচ্ছি। বিগত ৫ বছরে আমরা দুইটা করে অনুষ্ঠান করেছি। একটা করি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে আরেকটা করি জুলাই যখন বাজেট অনুষ্ঠান হয় বাজেটে। এখানে সাংবাদিক ভাইয়েরা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। আজকে আমরা সকল নারায়ণগঞ্জবাসীর সম্মুখিন হয়েছি আমার সিটি পরিষদকে নিয়ে, আপনারা দেখেছেন আমার পরিষদের সকল কাউন্সিলরগণ উপস্থিত আছেন । আপনারা যদি; যে কেউ যে বিষয় জানতে চান; যে কোন ওয়ার্ডের প্রশ্ন করলে তারাও এখানে আপনাদের জবাবদিহিতা করতে, যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে তারাও প্রস্তুত আছে। বিগত সময়ে আমরা কি করলাম এবং ভবিষতে কি করতে যাচ্ছি কয়েকটা জিনিস আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

আমার বক্তব্য: বেঙ্গল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের এমন লোক নাই যারা চেনেন না বা জানেন না। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উনি এবং ওনার টিম আমাদের একটা উপস্থাপনা দেবেন; প্রেজেন্টিশন দেবেন। সেটা ‘সিটি প্লান’ নারায়ণগঞ্জ যে যানজট, যানজটসহ নারায়ণগঞ্জ এর উপরে ভবিষ্যতে আমরা এই শহরের মানুষ আমাদের জীবন ব্যবস্থা কেমন হয়,নারায়ণগঞ্জটা কেমন হবে এ রকম একটা প্রেজেন্টিশন তাঁরা দেবে। আমার বক্তব্যের আগে দিলে ভালো হতো, আমি তাঁদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম। যেহেতু আপনাদের অনেকেরই তাড়া আছে, চলে যেতে পারেন আমি অনুরোধ করবো আমার এ অনুষ্ঠানটা আপনারা সবাই উপোভোগ করবেন। এই যে আমরা এত কষ্ট করে আপনাদের সামনে উপস্থিত হলাম সেটা সার্থক হবে। আপনারা যেখানে বসে আছেন সেটা এখনো পর্যন্ত কিন্তু শেষ হয়নি। শুরু হয়েছে কাজ, সেই ভাঙ্গাচুরা অবস্থায় আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই জায়গায় শুরু করলাম। আমি আমার কিছু কিছু বক্তব্য শুরু করছি। আপনারা জানেন, আমি এই কথার ফাঁকে ফাঁকে আমার বক্তব্য শেষ করে ফেলবো।

Posted by সুভাষ সাহা on Tuesday, January 9, 2018

আমি প্রথমেই নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাচ্ছি। আমি আবারো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ২০১৬ তে পুনরায় ২২ ডিসেম্বর আমাকে নির্বাচিত করেছিলো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা তুলে দিয়েছিলেন। নারায়নগঞ্জবাসীর প্রতি আস্থা রেখে এবং সেই আস্থার প্রতিদান নারায়ণগঞ্জবাসী দিয়েছিলো ব্যালটের মাধ্যমে। আমাকে নির্বাচিত করে। আমি আপনাদের প্রতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা আজকের দিনটিকে কেন বেঁছে নিলাম আপনাদের কাছে জবাবদিহিতা করার জন্য।

Image may contain: 7 people, people standing

এই ৯ জানুয়ারী আমরা দায়িত্ব গহণ করেছিলাম। ৫ জানুয়ারী আমারা শপথ নিয়েছিলাম এবং ৯ ই জানুয়ারী আপনাদেরকে সাথে নিয়ে আমার বাসভবন দেওভোগ; আমার নয় আমার বাবার, আলী আহম্মেদ চুনকার বাড়ি থেকে হেঁটে আমি নগর ভবনে যেয়ে আমি দ্বায়িত্ব গ্রহন করেছিলাম। আজকে আমার সেই এক বছর। সেই এক বছরে আমি কি করলাম আপনাদের জন্য, আর কি করবো আগামী চার বছরে যদি আল্লাহ্ হায়াতে বাঁচিয়ে রাখে। সেটার জন্যই আজকে এখানে দাঁড়ানো। একটু পিছনে যদি যাই- তাহলে বলতে চাই ২০০৩ সালে যখন আমি নির্বাচন করতে আসলাম তখন এটা পৌরসভা ছিলো। আপনারা সকলেই জানেন, কিন্তু আমি একটু মনে করিয়ে দিচ্ছি। ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ পরিস্থিতি অবস্থা কি ছিলো তা আমার চেয়ে বেশি আপনারাই জানবেন। আমি তখন দেশে ছিলাম না। ১৭ বছর পরে আমি দেশে ফিরেছি। বিদেশে ছিলাম এসে নির্বাচন করেছিলাম। জনগন পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখানে অনেক নেতাকর্মীরা দেশের বাহিরে ছিলেন । দেশের পরিবেশ- পরিস্থিতির কারনে। সেই সময় ১৬ জানুয়ারী ২০০৩ এ নির্বাচিত হয়ে দ্বায়িত্ব গ্রহন করি। অত্যন্ত নাজুক খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা চালিয়েছি আট বছর। ২০১১ তে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫ মে নারায়ণগঞ্জকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষনা করলেন তারও চার মাস পরে নির্বাচন হয়েছিলো ৩০ অক্টোবর। সেই ৩০ আক্টোবরে নির্বাচনে আমি কেন্ডিডেট ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই সময় আমি দলীয় সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ ছিলাম। আমার হয়ত কিছু কমতি ছিলো।

সেই সময় আমি আমার দলীয় সমর্থন আদায় করতে পারি নি। কিন্তু আমি নির্বাচন করেছিলাম প্রতিবাদ করার জন্য। এই শহরের মানুষের জন্য, এই শহরের মানুষ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। কথা বলার শক্তি এবং সাহস যেন সঞ্চয় করতে পারে। সেই সাহস এবং শক্তির প্রতীক হয়ে আমি আপনাদের অনুরোধে, আপনাদেরকে সাথে নিয়ে ২০১১ তে নির্বাচন করেছিলাম। আপনারা আমাকে বিপুল ভোটে সাড়া দিয়ে ৩০ আক্টোবর নির্বাচিত করেছিলেন। আমি পাঁচ বছর আপনাদের সেবা করেছি।চেষ্টা করেছি। অত্যন্ত প্রতিকুলতার মাঝে থেকেও এই শহরকে, এই নগরকে কাঙ্খিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য- কি করেছি তা আপনারা দেখেছেন। আমি এখানে সেই বেখ্যাটা দিতে চাই না। তারপরে ২০১৬ আমার পথচলা আপনাদেরকে সাথে নিয়ে। ২০১১ তে আমার পাশে সর্ব প্রথম যারা এসে দাঁড়িয়ে ছিলো সেই মুক্তিযোদ্ধারা।সেই দামাল সন্তানরা। যারা এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন ৭১ এ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে এই দেশ যারা স্বাধীন করেছিলো। সেই বীর সন্তানরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কারণ আমিও আপনাদের একজন সন্তান। আলী আহম্মেদ চুনকা মুক্তিযোদ্ধা ছিলো। সর্ব প্রথম সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা।আমি আজকে এখানে সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক মুক্তিযোদ্ধা দেখতে পাচ্ছি।তাদেরসহ আমি এই নগরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

*এখানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আছেন। উনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। উনি সেই সময় আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করেছে। প্রচন্ড ভাবে পর্দার আড়ালে অন্তরালে উনি সকল মুক্তিযোদ্ধাকে আমার জন্য কাজ করার জন্য বলেছেন। যদিও আমার ভাই মাঝে মাঝেই আমার পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা বোধ করেন। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুলও করেন না। তবে ইদানিং অনেক সাহসী কাজের থেকে বিরত থাকতে কেন জানি পছন্দ করেন সঠিক জানি না। আমি ওনাকে অনুরোধ করবো যে ৭১ এ যে নেতৃত্ব আপনি হাতে নিয়েছিলেন, আপনি এখনো সেই নেতৃত্ব দেবেন আপনাকে আমার সাহসী ভ’মিকায় দেখতে চাই। কোন নিগোসিয়েশন এর ভুমিকায় নারায়ণগঞ্জবাসী আপনাকে পছন্দ করে না । আপনাকে সেখানে সেই জিনিষটায় মানায়ও না। আপনি আমাদের সাথেই থাকুন। আলী আহম্মেদ চুনকার আপনি একজন অনুসারী ছিলেন।আমার বাবা সব সময় আপনার বাড়িতে যেতেন। আমি আপনাকে সেই মোহাম্মদ আলী ভাই দেখতে চাই । আপনি যেই ৭১ এ যেমন ছিলেন সেইভাবে। আমার মনে হয় মুক্তিযোদ্ধারা সকলে খুশি হয়েছেন।*

আমি মনে হয় অন্য প্রসঙ্গে চলে গিয়েছিলাম। যাই হোক এই কঠিন সময়গুলো পার করেছি নারায়ণগঞ্জবাসীকে সাথে নিয়ে । এমন কোন জায়গা নাই কোন সেক্টর নাই আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি, সাংষ্কৃতিক জোট এই শহরের গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। একজন রিক্সা ওয়ালা থেকে শুরু করে, ঠেলাগাড়ি থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতা সকলেই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি দলমত

নির্বিশেষে যেমন সকলের জন্য কাজ করেছি ঠিক জনমত নির্বিশেষে সকলেই আপনারা আমাকে অন্তত সিটি কর্পোরেশনের কাজে সহযোগিতা করেছেন। আমিও কোনদিন আপনাদের কাছে দলীয় পরিচয় নিয়ে দলীয় মনে করিনি আপনারাও আমাকে সে ভাবে কখনো নেন নি। মাটি ও মানুষের আলী আহম্মেদ চুনকার মেয়ে হিসেবে আপনারা আমাকে গ্রহণ করেছিলেন । আমিও আপনাদের সেই ভাবে আপনাদের সাথে কাজ করেছি। আমি কি কাজ করেছি সেই ফিরিস্তি আপনাদের কে দিতে চাই না। যেহেতু আপনারা অনেকেই জানেন।

আমার পরিকল্পনা যদি এই মূহুর্তে ওই ভিডিওটা দেখানো শুরু করেন তাহলে মনে হয় সবচেয়ে ভালো হয়। আপনারা জানেন আমি বিগত সময়ে প্রায় ৬ শত কোটি টাকার কাজ করেছি। বিগত পাঁচ বছরে। এই বছরে, এই এক বছরে প্রায় ৩ শ কোটি টাকার কাজ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১ শত ৮২ কোটি টাকার প্রথম একটি প্রজেক্ট পাশ করিয়েছেন। তারপর আর একটি প্রজেক্ট কিছুদিন আগে দিয়েছেন ১ শ ১১ কোটি টাকার। বর্জ্যব্যবস্থাপনার জন্য ১ শ ৯০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট দেওয়ার জন্য তাকে আরো একবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।(অসমাপ্ত) অবশিষ্টাংশ আসছে——

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: খোলা বাতায়ন,জাতীয়,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.