শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

বিমানে চড়ুন ৩০ টাকায়!

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: ঘাসের গালিচা বিছানো সবুজ মাঠ। মাঠ পেরোলেই ইটের ওয়াকওয়ে। সামনে এগোলে চোখে পড়ে সারি সারি বিমান। কোনোটা যাত্রীবাহী, কোনোটা আবার যুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ বিমান। দেখে মনে হবে রানওয়েতে অপেক্ষায় রয়েছে ডানা মেলার। দৃশ্যটি রাজধানীর আগারগাঁও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জাদুঘরের। জাদুঘরের প্রবেশপথ ধরে একটু এগোলে চোখে পড়ে বিশাল যাত্রীবাহী বিমান। এটি বাংলাদেশের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান ‘বলাকা’। পাশেই সাইনবোর্ডে লেখা ‘বলাকায় উঠুন, ইতিহাসের অংশীদার হোন’। মাত্র ৩০ টাকায় এই বিমানে চড়তে পারেন। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই বিমানের সামনে লাগানো সাইনবোর্ডে পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। আগ্রহী হয়ে দর্শনার্থীরাও টিকেট কেটে বিমানে উঠছেন। কেউ কেউ নানা ভঙ্গিমায় ক্যামেরায় পোজ দিচ্ছেন।

উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট বিমান আবিষ্কার করেছিলেন ১৯০৩ সালে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে প্রথম যাত্রীবাহী বিমান বলাকা আসে ১৯৫৮ সালে। ১৯৭১ সালের উত্তাল সময়ে স্বল্প সম্পদ আর জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ ও সংকটকালীন সময়ে অবদান রাখা বিমানবাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ইতিহাসের সাক্ষী এই বিমানগুলো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে বিমানবাহিনী জাদুঘরে। এখানে রয়েছে স্মৃতিবিজড়িত প্রথম যাত্রীবাহী বিমান। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন কাঁপানো যুদ্ধবিমানগুলোও রয়েছে।

বিমানবাহিনীর এই জাদুঘরে রয়েছে ১৯টি বিমান। এরমধ্যে তিনটি মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া রয়েছে ছোট ছোট বিমানের রেপ্লিকা। ৩০ টাকার টিকিটে জাদুঘরের মনোরম পরিবেশে বিমানগুলো ঘুরেফিরে দেখতে পারেন দর্শনার্থীরা। ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজরিত বিমানগুলো দেখলে শরীরে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সঞ্চার হয়। পাশাপাশি সুযোগ না পাওয়া মধ্যবিত্ত মানুষের সিটে বসে বিমানের ভেতর দেখার সুযোগ রয়েছে।

বিমান জাদুঘরের স্কাই পার্কের সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের ‘ডাকোটা বিমান’ আপনাকে স্বাগত জানাবে। পাঁচ হাজার পাউন্ড বোম্ব নিয়ে শত্রু মোকাবিলা করত বিমানটি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ৩০ টাকার বিনিময়ে এতেও দর্শনার্থীরা উঠতে পারেন। এই জাদুঘরে দেখতে পাবেন হান্টার বিমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে শত্রু থেকে রক্ষা করতে এই বিমানটি ব্যবহার করে। ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে এটি উপহার দেয়। এখানে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত প্রথম যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে। বিমানটি তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে রয়েছেন নূরুল হুদা। তিনি বলেন, বিমানটিতে উঠলে মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ পাওয়া যাবে। শিশুরা যুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে। বিমান জাদুঘরে অন্য রাইড থাকলেও বিমানগুলোতেই মানুষের আগ্রহ বেশি।

বিমান জাদুঘরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন সোহান ও তার বন্ধুরা। দেশের প্রথম বিমান বলাকাকে দেখে তাদের ভেতরে গুঞ্জন তৈরি হয়। টিকিট কেটে তারা বিমানে উঠে বসলেন। নানা ভঙ্গিমায় ছবি তোলা তো রয়েছেই।

সোহানা জানান, আজকে প্রথম এই জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন। খুব ভালো লাগছে ঐতিহাসিক বিমানগুলো দেখে। বিমানে ওঠার শখও মিটল, ইতিহাসও জানা হলো। বিমানবাহিনী জাদুঘরের ভেতরে রয়েছে স্কাই পার্ক। সবুজ তৃণ আচ্ছাদিত স্কাই পার্কের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। এতে রয়েছে জিরাফ, ঘোড়া, বাঘসহ শিশুদের জন্য নানা রকম বিনোদনের মাধ্যম। আলাদা টিকিট কেটে রেঞ্জার, সুইংচেয়ার, ব্রেক ডান্স, জ্যাম্পিং ফ্রগ, স্পিড কার, বেবি ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইডে ওঠার সুযোগ রয়েছে। বোটে করে লেকে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। বিশেষ আর্কষণ সেভেন ডি মুভি থিয়েটার। দেখতে পাবেন হরর, ফ্যান্টাসি ও অ্যাডভেঞ্চার মুভি। আপনাকে নিয়ে যাবে ভয়ংকর ভূতের আস্তানায় বা কঠিন মৃত্যুপথে। থিয়েটার টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।

জাদুঘরটি সোম থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। কর্মব্যস্ত নগর জীবনের অবসাদ কাটাতে ছুটির দিনটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বিমান জাদুঘর থেকে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: জাতীয়

Leave A Reply

Your email address will not be published.