বিষেরবাঁশী ডেস্ক: এক লিটার দুধের বিনিময়ে ৬০ কেজি আলু! এমন মাইকিং শুনে ঠাকুরগাঁওয়ের হাওলাদার হিমাগারে বোতলে দুধ নিয়ে ভিড় করছেন কৃষক ও খামারিরা। গতকাল রোববার দুপুর থেকে এক লিটার দুধ জমা দিয়ে ৬০ কেজির এক বস্তা আলু নিয়ে যাচ্ছেন তারা। পুরোনো আলুর স্টোর খালি করতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আলুর বস্তা দুর্গন্ধযুক্ত ও আলুগুলো পচা বলে জানান আলু নিতে আসা কয়েকজন খামারি। তারা বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুকে আলু খাওয়াবেন। তবে পচা আলু গরুর রোগ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
এদিকে সংগ্রহ করা দুধ অসহায় নারী ও শিশুদের মাঝে বিতরণ করেছেন ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ। হিমাগারের আশপাশের দুস্থ নারী ও শিশুরা তাদের বাচ্চাদের জন্য দুধ নিতে পেরে অনেক খুশি। জগন্নাথপুর গ্রামের আলিমা খাতুন ও আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। এখন দুধের অনেক বেশি দাম হওয়ায় বাচ্চাদের দুধ কিনে খাওয়াতে পারি না। এখানে এসে এক লিটার দুধ পাইলাম। বাড়ি ফিরে বাচ্চাদের আজ দুধ খাওয়াইতে পারব।’
সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম ও আকবর আলী বলেন, ‘নতুন আলু বাজারে আসায় পুরোনোগুলো এখন আর মানুষ নিচ্ছে না। হিমাগারে আলু রাখাতে গেলে খরচও লাগছে আবার আলু পচেও যাচ্ছে। তাই উপায় না পেয়ে এখন হিমাগার খালি করার জন্য এ ব্যবস্থা। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক কৃষক।’
ঠাকুরগাঁও হাওলাদার হিমাগারের মালিক সালাম হাওলাদার বলছেন, ‘বাজারে আলু বিক্রি না হওয়ায় তার হিমাগারে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ আলু কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তুলছেন না। স্টোর খালি করতে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় একশ লিটার দুধ নিয়ে হাজির হন এলাকার শতাধিক কৃষক ও গো-খামারি। সংগ্রহকৃত দুধ অসহায়, দরিদ্র নারী ও শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হয়।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, আলু গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়। আর পচা আলু ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত। এ আলু গরুকে খাওয়ালে পেট খারাপ হতে পারে। জেলার আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৮টি হিমাগারের মধ্যে ১৩টি বেসরকারি হিমাগারে গত মৌসুমে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল ১৩ লাখ ৬৯ হাজার বস্তা। আলুর দাম কম হওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণ করা এসব আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরা।
বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়