বিষেরবাঁশী ডেস্ক: চুলের সাজের ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে পারে আপনার সার্বিক আউটলুক। আধুনিক পোশাকের সঙ্গে যদি পুরনো দিনের চুলের সাজ থাকে, তাহলে সেটা মানাবে না কোনোভাবেই। আবার বিয়ের পার্টি আর অফিসের পার্টিতে চুলের সাজ হবে না এক। চুলের এ সাজসজ্জা নিয়েই কাজ করে থাকেন হেয়ার স্টাইলিস্টরা। পেশা হিসেবেও একে গ্রহণ করছেন অনেকেই।
হেয়ার স্টাইলিস্ট
আজকের এ কেতাদুরস্ত যুগে রোজকার জীবনে ৮ থেকে ৮০ সবাই চায় ফ্যাশনেবল থাকতে। আর এ ফ্যাশনের সঙ্গে থাকার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে চুল। চুলের দারুণ একটি কাটিং কিংবা চুলের বাহারি সাজ-পোশাকের সঙ্গে মানানসই হলে তার প্রশংসা আপনি পাবেনই। তাই নিজেকে সাজানোর অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে চুল। ফেমিনিন কার্ল হোক বা স্ট্রেইট লুক, কোনটা আপনার জন্য মানানসই হবে, সেটা হয়তো আপনিই বুঝতে পারবেন। কিন্তু সেটাকে নিজের চুলে নিয়ে আসতে হলে দ্বারস্থ হতে হবে ওই হেয়ার স্টাইলিস্টের কাছেই। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চুল নিয়ে মানুষের সচেতনতা যেভাবে বেড়েছে, তাতে হেয়ার স্টাইলিস্টদের চাহিদা এখন অনেক উপরের দিকেই। তাই পেশা হিসেবেও এখন হেয়ার স্টাইলিস্টদের বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
কাজের ধরন
হেয়ার স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করতে গেলে চুল সংক্রান্ত ‘এ’ টু ‘জেড’ জ্ঞান থাকতে হবে। অর্থাৎ চুল সম্পর্কিত সবই জানতে হবে আপনাকে। চুল কাটা, কালারিং বা পার্মিং ইত্যাদির পাশাপাশি চুলের বিভিন্ন ধরনের স্টাইল সম্পর্কেও জানতে হবে আপনাকে। স্ট্রেইট বা কার্লÑ কোনটা কার জন্য প্রযোজ্য, সে সাধারণ বোধ ও জ্ঞানটা রাখতে হবে আয়ত্তে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চুল বাঁধার ধরনও থাকতে হয় হেয়ার স্টাইলিস্টদের নখের ডগায়। হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্টগুলোর সঠিক প্রয়োগপদ্ধতি সম্পর্কেও জ্ঞান থাকতে হবে। মোট কথা, আপনার কাছে যিনি আসবেন, তার চুল নিয়ে সব সমস্যার সমাধানই থাকবে আপনার কাছে। চুলকে কেটেছেঁটে এমন একটি রূপ দিতে হবে, যেন তার লুকটা অনন্য হয়ে ওঠে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট হতে চাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতাটি বড় নয়। এ পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই। এ পেশায় যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার, সেটা হলো পেশাগত দক্ষতা বা কাজের দক্ষতা। তবে চুল সম্পর্কিত অনেক জ্ঞানই আপনাকে যেহেতু রাখতে হবে এবং একইসঙ্গে দেশি বা আন্তর্জাতিক স্টাইল ও ফ্যাশন সম্পর্কেও জানতে হবে, তাই মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলে সুবিধা হবে।
কাজের সুযোগ
প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেয়ার পর পেশাদার স্তরে কাজ করতে চাইলে হেয়ার স্টাইলিস্টদের জন্য সুযোগ রয়েছে প্রচুর। অত্যাধুনিক বিউটি পার্লারে কাজ করার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংও করা যায়। চাইলে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে কাজ করা যেতে পারে। এর জন্য অবশ্য আপনার নিজস্ব গ্রাহকের একটা বড় তালিকা থাকতে হবে। এর বাইরে বিনোদন জগতে পেশাদারি হেয়ার স্টাইলিস্টদের চাহিদা অনেক বেশি। থিয়েটার বা নাটকের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিক বা চলচ্চিত্র জগতেও হেয়ার স্টাইলিস্টদের প্রয়োজন। তারকাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত হেয়ার স্টাইলিস্ট থাকে। কাজেই শুধু যে পার্লারেই কাজ করতে পারবেন হেয়ার স্টাইলিস্ট, সে ধারণা এখন বদলে গেছে। যদি ভালো কাজ করতে পারেন, তা হলে দেখা যাবে আপনার এলাকায়ই হেয়ার স্টাইলিস্ট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনরাও নির্ভর করতে শুরু করবে আপনার ওপরই। উপার্জনের পথটাও তাই বেশ সুগম।
যা লাগবে আপনার
চুলে সাজসজ্জা করতে স্টাইলিং সেন্সের পাশাপাশি দরকার কিছু যন্ত্রপাতি ও প্রসাধনী। এ সংক্রান্ত হাজারো পণ্যের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় কয়েকটি কথা তুলে ধরা হলো এখানে।
চিরুনি : চুল নিয়ে যখন কাজ করবেন, তখন ভালো মানের চিরুনি যে থাকা প্রয়োজন, তা বলাই বাহুল্য। সাধারণ চিরুনির পাশাপাশি আপনার প্রয়োজন একটা ব্রেসেল ও নাইলনযুক্ত চিরুনি, যা চুলের জট খুলতে সাহায্য করবে।
তেল : সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্বল চুলের জন্য তেল অপরিহার্য উপাদান। এমনকি যাদের চুল খুব পাতলা, তাদেরও তেল দেয়া জরুরি। একটা ভালো ব্র্যান্ডের তেল চুলের আগা পর্যন্ত পলিশ করে এবং চুলের কোঁকড়ানো ভাব কমিয়ে চুলে সোজা ও চকচকে ভাব আনে। এমন তেল খুঁজে বের করুন, যা চুলের আর্দ্রতা বজায় রেখে রুক্ষতা কমিয়ে আনে।
ব্লো ড্রাইয়ার : একটা ভালো মানের ব্লো ড্রাইয়ার চুল শুকানোর সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে। চুলের সেটিং যদি পার্লারের মতো চান, তাহলে পার্লার গ্রেডের ব্লো ড্রাইয়ার ব্যবহার করুন। হয়তো দাম একটু বেশি পড়বে, কিন্তু সুন্দর চুলের সেটিং চাইলে একটু বেশি খরচ করতেই হবে।
হিট প্রটেক্ট্যান্ট স্প্রে : চুলে স্টাইল করতে গিয়ে যদি চুলের ওপর তাপ প্রয়োগ করেন, তাহলে অবশ্যই হিট প্রটেক্ট্যান্ট ব্যবহার করতে হবে। বাজারে অনেক হিট প্রটেক্ট্যান্ট স্প্রে পাওয়া যায়, যা চুলকে শুধু আর্দ্রতা ও তাপ থেকেই রক্ষা করে না, চুলের গোড়াও শক্ত করে।
শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার : শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দুইটি পণ্য। চুলের রকমফের অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয় শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার। বাজারের নানা ধরনের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার থেকে বেছে নিতে হবে প্রয়োজনীয়টি। আপনার গ্রাহকদের জন্যও প্রয়োজনে আপনাকেই সংগ্রহ করে রাখতে হবে এগুলো।
ফ্লাট আয়রন : কোঁকড়ানো চুলকে সোজা, নমনীয় বা ঢেউ খেলানো ভাব আনতে ফ্লাট আয়রনের বিকল্প নেই।
কার্লিং আয়রন : চুলে ঢেউ খেলানো ভাব আনতে বা রিং রিং স্টাইল করতে আপনার দরকার কার্লিং আয়রন। ১ বা দেড় ইঞ্চি কার্লিং আয়রন বেশ প্রচলিত। অল্প অল্প চুল নিয়ে কার্লিং করুন। তাহলে চুলে টান টান ভাব থাকবে। একবারে বেশি পরিমাণ চুল নিয়ে আয়রনে ৩ মিনিট পেঁচিয়ে রাখুন। নিমিষেই পাবেন ঢেউ খেলানো চুল।
হেয়ার স্প্রে : যে কোনো হেয়ারস্টাইলে এটা হলো ফাইনাল ধাপ। যে কোনো স্টাইলকে অনেকক্ষণ অক্ষত রাখতে হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করুন।
বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়