শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

নতুন ওয়ার্ড নিয়েই ডিএনসিসি নির্বাচন

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে জটিলতা রয়েছে কি না—তা খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখা। নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ড রেখে নির্বাচন হলে কী ধরনের সমস্যা হবে কিংবা এগুলো ছাড়া তফসিল দিলে ইসির সামনে কোনো সংকট হাজির হবে কিনা—এসব বিষয়ে পরামর্শ দেবে আইন শাখা।

আইন শাখার পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ শুরু হবে। আরো জটিলতা এড়াতে দরকার হলে স্থানীয় সরকারের পরামর্শ নিতে পারে ইসি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, নতুন যোগ হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা না থাকলেও আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের আগে এখানে ভোট আয়োজন সম্ভব নয়। জানুয়ারিতে ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ, দাবি-আপত্তি নিষ্পতির পর ৩১ জানুয়ারি এ বছরের হালনাগাদ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে। আর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা শুরু হবে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা তৈরি করেছে কমিশন সচিবালয়। এতে দুই সিটিতে নতুন সাড়ে ১০ লাখ ভোটার যুক্ত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচনে নতুন ভোটাররাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। জানতে চাইলে ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন ১৮টি অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ড নির্বাচনের বাইরে রাখার সুযোগ নেই; তাদের আমলে নিয়েই নির্বাচন ভাবছে কমিশন। এই কাজটি সহজ উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য কী ধরনের সংকট ও শঙ্কা রয়েছে তার উপায় বের করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইন শাখাকে। এ শাখার মতামত পেলে কমিশন বসে এই সিটির উপনির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করবে।

এর আগে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন করতে ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে ভোট আয়োজনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আমাদের অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের পত্রের পর এ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। এমনকি আপাতত আইনি কোনো জটিলতা নেই’—যোগ করেন সচিব।

হেলালুদ্দীন আহমেদ আরো বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট করেছে। এখনো কমিশন কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেনি। আশা করছি, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কীভাবে করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হলে সেগুলোতে নির্বাচনের সময়সীমার বিষয়ে স্পষ্ট বিধান নেই। ওই আইনের ৩৪ অনুচ্ছেদ এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন কখন করতে হবে তার বর্ণনা রয়েছে। সেখানে নতুন সিটি করপোরেশন গঠনের ক্ষেত্রে ১৮০ দিন, করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া করপোরেশন গঠন বাতিল ও করপোরেশন বিভক্তির ক্ষেত্রেও ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্তের ক্ষেত্রে সেগুলোতে কত দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং সেসব ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধির মেয়াদ কত দিন হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মূলত এ কারণেই ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনগত জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কারণ এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন ১৮টি ও দক্ষিণ সিটিতে ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত করে গত জুলাইয়ে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২০ আগস্ট ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদ কত দিন হবে তা আইনে উল্লেখ নেই। এ কারণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে মামলাজনিত আইনি জটিলতার আশঙ্কায় দুই সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি ইসি।

কিন্তু উত্তর সিটির মেয়র মারা গেলে উপনির্বাচন করার বাধ্যবাধকতার মধ্যে চলে আসে ইসি। তখন নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর সমস্যা সামনে চলে আসে। এ নিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সমাধানের উপায় বের করতে কমিশনের আইন শাখা কাজ করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ সালে একটি সংশোধনী আনা হলেই ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনের জটিলতা কেটে যাবে। ওই সংশোধনীতে সংযুক্ত হওয়া ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেয়রদের কার্যকাল হবে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ পর্যন্ত। অর্থাৎ বর্তমান পরিষদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে—এমন বিধান যুক্ত করা হলেই নির্বাচনের জটিলতা কেটে যাবে।

উল্লেখ্য, ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন মারা যান ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক। ১ ডিসেম্বর থেকে পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইন অনুযায়ী শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে ওই পদে উপনির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.