বৃহস্পতিবার ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

শীতকালীন স্বাস্থ্য সমস্যা

ডা. মহসীন কবির : দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। রাজধানীর বাইরে গ্রামাঞ্চলে এখনই পাওয়া যাচ্ছে শীতের ঠাণ্ডা আমেজ। শীতে সাধারণত রোগবালাই কম দেখা দিলেও অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত শীত ও শীতকে অবহেলার কারণে এসব রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের এ ঋতুতে বিশেষ সাবধানে থাকা উচিত।

* যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের শীতকালে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ধুলাবালি, গাড়ির ধোঁয়া নাকে ঢুকে গেলে অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এতে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ প্রভৃতি উপসর্গের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন নাকে অ্যালার্জি থাকলে পলিপ হতে পারে। পলিপ হলে নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং সঙ্গে সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অপারেশনের পর আবারও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আধুনিক এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারির মাধ্যমে চিরতরে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশে বড় বড় হাসপাতালে নিয়মিতভাবে এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারি হচ্ছে।

* শীতকালে শিশুদের কানে সমস্যা দেখা দিতে পারে। শীতকালে নানা উপসর্গের কারণে হঠাৎ করেই মধ্যকর্ণে প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। এ রোগের কারণে কানে ব্যথা হয়, কান বন্ধ হয়ে যায়। সঠিক সময়ে এ রোগের চিকিৎসা না করলে এমনকি কানের পর্দাও ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। এ রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

* শীতকালের আরেকটি সমস্যা নাকের ইনফেকশন। নাকের দুই পাশের সাইনাসে ইনফেকশন দেখা দেয়, যাকে সাইনোসাইটিস বলা হয়। সাইনোসাইটিসের কারণে নাকের দুই পাশে ব্যথা এবং মাথাব্যথা হতে পারে। সাইনাসের ব্যথা তীব্র হলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সাইনাস প্রদাহে প্রথমে ওয়াশ এবং পরে এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

* শীতে অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। বিভিন্ন কারণেই নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াও নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। শিশুদের বেলায় সাধারণত আঙুল দিয়ে নাক খোঁচানোর কারণেও রক্তপাত হতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে অনেক সময় হাইব্লাডপ্রেসারের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। নাকের ভেতরের রক্তনালি শুকিয়ে গেলেও রক্তপাত হতে পারে। তাই নাক দিয়ে রক্তপাত হলে দেরি না করে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

* শীতকালে যেসব রোগ দেখা দিতে পারে তার মধ্যে টনসিলের প্রদাহ বা গলাব্যথা অন্যতম। শীতকালে গলাব্যথা হয়ে টনসিলে তীব্র প্রদাহ দেখা দিতে পারে। তীব্র প্রদাহের জন্য গলাব্যথা, জ্বর এবং ঢোঁক গিলতে অসুবিধা হয়। জ্বর যদি ভাইরাসজনিত হয়, তাহলে হালকা গরম লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করলে এবং প্যারাসিটামল খেলে ভালো হয়ে যাবে। আর টনসিল প্রদাহ যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো, সঠিক সময় ও মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে।

* ঠাণ্ডা লেগে কণ্ঠনালিতে ইনফেকশনের কারণে গলার স্বর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন খাওয়া যেতে পারে। তবে মেন্থলের গরম ভাপও এক্ষেত্রে উপকার বয়ে আনে।

এছাড়া শিশুদের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এতে শিশুর শ্বাসনালিতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে- এমনকি নিউমোনিয়াও হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লেগে গেলে শিশুকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেয়া উচিত।

শীতকালে শিশু ও প্রবীণদের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন। এছাড়া শীতকালে অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদেরও নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও ইনহেলার ব্যবহার করা উচিত।

ডা. মহসীন কবির
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেখক ও গবেষক
ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন
বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ, ঢাকা

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: স্বাস্থ্য

Leave A Reply

Your email address will not be published.