বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

মন্ত্রীসভার রদবদলের চাঁদ কি সত্যিই ফুটছে?

  • অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,‘মন্ত্রীসভায় শীঘ্রই রদবদল হচ্ছে।’দেশ জুড়ে চলছে কানাঘুঁষা কে আসছেন কে যাচ্ছেন?বর্তমান মন্ত্রীসভায় অধিষ্ঠিত মন্ত্রী বর্গের মধ্য হতেই কি দপ্তর বদল হচ্ছে নাকি নতুন মুখও আসছে।যেসব মন্ত্রী নিজ নিজ বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য নিজেরা সমালোচিত হচ্ছেন,সরকার ও দলকেও সমালোচিত করে চলেছেন তাদের শুধুই দপ্তর বদল হলে কি এ রদবদল অর্থহীন হবে না?

দেশহিতৈষীদের প্রত্যাশা দপ্তর বদল নয়,তাদের মন্ত্রীসভা হতে অপসারণ করা হোক।মন্ত্রীসভার এক দপ্তরে যে বিতর্কিত হন অন্য দপ্তরে গিয়েও তিনি তা-ই হবেন।কোন মন্ত্রীর বক্তব্য বিবৃতি ঘিরে যদি দেশজুড়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয় তখন আর মন্ত্রীসভার কোন ইজ্জত থাকেনা।বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভিন্ন সময়ে অনেক মন্ত্রীর অসংলগ্ন ও অসৌজন্যমূলক আচরনের খবর বেরিয়েছে।দেশের রাজনীতি,উন্নয়ন,মানুষের জীবন-জীবিকা ও আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে মন্ত্রীদের কর্মকান্ডের উপর নির্ভর করেই।

মন্ত্রীসভায় রয়েছে আওয়ামী লীগ,ওয়ার্কার্স পার্টি,জাসদ ও জাতীয় পার্টি।কোন দলের মন্ত্রীদের কর্মকান্ডে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে ও এ প্রসঙ্গে দলের ব্যাখ্যা কী জাতির সামনে তা দৃশ্যমান হওয়া উচিত।ওবায়দুল কাদের বলেছেন,রদবদলে কারা আসছেন,কারা যাচ্ছেন তা প্রধানমন্ত্রীই জানেন।তিনি এ-ও বলেছেন,আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখবে।তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগেও বলেছিলেন,আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখবে।অবশেষে তিনিই চাঁদ হয়ে ফুটলেন।মানুষ এখনও তা দেখে চলেছে।ওবায়দুল কাদের নামক চাঁদটির আলোয় মানুষ দেখেছে হাইব্রিড,মৌসুমী পাখি,কাউয়া,ফার্মের মুরগী।

অতি অাসন্ন ঈদের চাঁদ।সে চাঁদের আগে না পরে ফুটবে মন্ত্রীসভার রদবদলের চাঁদ?জানিনা সেই অনাগত চাঁদে কী দেখবে মানুষ।কোন কোন কালিমাখা চাঁদেরা কলঙ্কের কালি হয়ে মন্ত্রীসভা হতে বিদায় নিচ্ছেন আবার কোন কোন কালিমাখা চাঁদেরা নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে পুরনো হতে আবার নতুন হয়ে ফুটবে আকাশে?এ প্রশ্ন হাওয়ায় উড়ছে।হয়তো এমনও ঘটতে পারে যারা কখনো চাঁদ হওয়ার সুযোগ পায়নি তারাও আসন্ন মন্ত্রীসভার রদবদলে ফুটবেন নতুন চাঁদ হয়ে।মন্ত্রীসভার রদবদল হচ্ছে অবশ্যই রাজনৈতিক সুফল সৃষ্টির প্রত্যাশাতেই।কিন্তু এ রদবদল প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও সঠিক যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন না হলে এ চাঁদে জাতি আলোকিত হবেনা।মন্ত্রীদের তাদের মন্ত্রীত্বকালীন সময়ে বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভূমিকা ও আচরণের চুলচেরা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়েই এ রদবদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত।

মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা, দল ও সাধারণ মানুষের পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন সাপেক্ষেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অসংলগ্ন, অপ্রাসঙ্গিক,অনাদর্শিক ও অযৌক্তিক বক্তব্যের অভিযোগ জনসমক্ষে দৃশ্যমান হয়েছে।এমনকি অসাম্প্রদায়িক দল দাবীদার আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রী থাকা সত্বেও অনেকের কন্ঠে সাম্প্রদায়িক বক্তব্যও ফুটেছে।মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় রাজনৈতিক প্লাটফরম এ থাকা সত্বেও অনেকের বেলায় রাজাকার মিত্রতার ঘটনাও ঘটে চলছে।

আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, মন্ত্রীসভার রদবদল কেবল প্রধানমন্ত্রীর উপরই নির্ভরশীল হবে সেটাও ঠিক নয়।সেটা দল ও জোটের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত।বিষয়টা এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি লবিং করে পদলাভে তৎপর হতে পারে।মন্ত্রীত্ব পেয়ে ক্ষমতার দম্ভে এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিরা নিজের দল,দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণ কাউকেই গুরুত্ব দেন না।সামান্য কারনে ত্যাগী নেতার মাথা ন্যাড়া করা,হাত পা ভাঙ্গা,পতাকাবাহী গাড়িতে বারবনিতা নিয়ে ঘোরা,ঘরভর্তি লোকেদের সামনে নারীর সঙ্গে অশালীন আচরণ প্রভৃতিও ঘটে।মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেলেও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না।মানুষ মুক্তি পায় এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির মৃত্যুতে।এসব ব্যক্তি যেন হয়ে ওঠে দল,জোট ও দেশের ঊধ্বে।

তাই ক্ষমতায় যেহেতু ১৪ দলীয় জোটের সরকার তাই মন্ত্রীসভার রদবদলটাও ১৪ দলীয় সভাতেই চূড়ান্ত হওয়া কাম্য।মন্ত্রীদের দল ও জোটের কাছে জবাবদিহীতা প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে।তারা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কাউকে এপিএস বানিয়ে সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কুক্ষিগত করে চলেছে।এমনও দেখা যায় মন্ত্রীর এপিএস তার দলের কেউ নয়, এমনকি এলাকারও কেউ নয়।প্রধানমন্ত্রীর উচিত নয় এর সকল দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়া।গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে সবকিছুর গণতান্ত্রিক রীতিতেই মীমাংসা হওয়া কাম্য।আমরা চাইনা আকাশে যে চাঁদ উঠবে তা কলঙ্কের কালিতে ঢেকে যাক।আমরা সৌন্দর্যে ভরপুর, নিষ্কলঙ্ক ও সুঠাম চাঁদ চাই।

এস.এফ/ক্যানি

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.