মঙ্গলবার ৫ চৈত্র, ১৪৩০ ১৯ মার্চ, ২০২৪ মঙ্গলবার

তুরাগে মা ও তিন সন্তানের লাশ উদ্ধারঃ রেহেনার ঝুলন্ত লাশ নিয়ে পুলিশের সন্দেহ

 

  • স্টাফ রিপোর্টার

তিন সন্তানের লাশ এক রুমে। তাদের মায়ের লাশ অন্য একটি রুমে। পুলিশ যখন চারজনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ওই বাড়িতে যায়। তখন রেহেনা পারভীনের লাশ মেঝেতে নামানো ছিল। পুলিশ যাওয়ার পর রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামাল বলেন, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা রেহেনার লাশ নামিয়ে আনেন তিনি নিজেই। আর এতেই সন্দেহটা বেড়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এঘটনায় নিহতের ভাই বাদি হয়ে তুরাগ থানায় মামলা করেছেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে গতকাল র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ওই বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন আলমত জব্দ করেছেন। রেহেনা যে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে যে ফ্যান ও ওড়নাটি গতকাল জব্দ করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

শুক্রবার সকালে তুরাগের কালিয়ারটেক এলাকার একটি টিনশেড বাড়ি থেকে রেহেনা আক্তারের (৩৮) লাশ গত শুক্রবার উদ্ধার করে। আর তিন শিশু সন্তান শান্তা (১২), শেফা (৮) ও আট মাসের ছেলে সাদকে গলায় ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। নিহতের স্বামী মোস্তফা কামালের অভিযোগ তার স্ত্রী তিন সন্তানকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে।

এর আগে শুক্রবার বিকালে ময়না তদন্তকারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার সোহেলে মাহমুদ বলেন, প্রাথমিক ভাবে তিন শিশু মেয়ে শান্তা (১৩), শেফা (৮) ও ১১ মাসের ছেলে সাদকে শ্বাসরোধ করে হত্যার প্রমান পাওয়া গেছে। তবে মায়ের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে তা সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তিনি বলেন, মায়ের মৃত্যুর কারণ জানতে ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট এলে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মামলার তদন্তকারীদের এক কর্মকর্তা বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মূল বিষয় বস্তু এখন শিশুদের মা রেহেনাকে নিয়ে। কারন সবাই বলছেন রেহেনা তাদের ছেলে-মেয়েদের হত্যার পর তিনি নিজিই আÍহত্যা করেছেন। কিন্তু এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে অনেক রহস্যজনক বিষয় পাওয়া গেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, যে ঘরে রেহেনা আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেই ঘরে উচু কোনও চেয়ার পাওয়া যায়নি। চেয়ার ও প্লাষ্টিকের একটি চকি পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ফ্যানের উপর পর্যন্ত হাত যাওয়া অসম্ভব। এছাড়াও ফ্যানে ওড়না বা রশি জাতীয় কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করলে অবশ্যই তার ছাপ থাকবে। কিন্তু কোনও ছাপ পাওয়া যায়নি ফ্যানে। গতকাল রেহেনার স্বামী পুলিশের কাছে বলেন তিনি নিজেই লাশ নামিয়েছেন। আজ (গতকাল) জিজ্ঞাসাবাদে লাশ নামানোর সময় আরও একজন ছিল বলে মোস্তফা কামাল বলেন। ওই ব্যক্তিকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বিস্তারিত জানা যাবে। আসলে রেহেনা আত্মহত্যা করেছে না কি তাকে হত্যার পর নাটক সাজানো হয়েছে এই নিয়ে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিন সন্তানসহ এক নারীর লাশ পাওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত রেহেনার ভাই সামছুল আলম বাদী হয়ে তুরাগ থানায় শুক্রবার রাতে এ হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে থানার ওসি মাহবুবে খোদা জানান।

তিনি বলেন, মামলার এজাহারে রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামাল ও কামালের বোন কুহিনূরের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে লেখা হয়েছে। রাতে মামলার পর মোস্তফাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এসএস/ক্যানি

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.