শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

বিএনপির চতুর্মুখী তৎপরতা

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দেশে ফিরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তার। ওই সময় বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে সুষমা স্বরাজের। ভারতের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে এমন উদ্যোগ নিতে চাইছেন বলে জানা গেছে। তবে গত তিন দিনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে তিনটি গ্রেফতারি পরোয়ানায় বেশ চিন্তায় ফেলেছে বিএনপির হাইকমান্ডকে। এছাড়া দেশব্যাপী দলের নেতাকর্মীদের নতুন করে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই প্রেক্ষাপটে, নেত্রীর গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজপথে সরব ছিল দলটির নেতাকর্মী। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ১৭টি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধান বিচারপতিকে জোরপূর্বক ছুটিসহ সামগ্রিক বিষয়ে অবহিত করেছেন।

বিএনপির ধারণা, রাজপথে পাশাপাশি অন্দর মহলেও তারা যথেষ্ট সক্রিয়। তাই বিএনপিকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা সফল হবে না বলে মনে করছেন দলের নেতারা। তারা মনে করছেন, দেশের যেকোনো জটিল পরিস্থিতিতেই তারা তৎপর থাকবে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীরা একটু নড়েচড়ে উঠেছেন। দলীয় প্রধানের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আগের তুলনায় বেশি ছিল বলে জানা যাচ্ছে। দলের সূত্রগুলো বলছে, কূটনীতিক পর্যায়েও বিএনপির অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক কিছুটা কাটিয়ে উঠছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নভেম্বরে দেশে ফেরার পরিকল্পনা থাকলেও মূলত সুষমা স্বরাজের সঙ্গে ২৩ অক্টোবর বৈঠকের শিডিউল হওয়ার পর তার ফেরার তারিখ পরিবর্তন করে এগিয়ে আনা হয়েছে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো করে একাই নির্বাচনের দিকে হাঁটছে সরকার। তাই নতুন করে মামলা ও গ্রেফতার কার্যক্রম বাড়িয়ে দলের নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে চায়। দলের প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তারই একটি অংশ। সামনে সিনিয়র নেতাদেরও আটক করতে তৎপর হবে সরকার। একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরি করতেই যাবতীয় কাজ করা হচ্ছে। সরকারের এসব কৌশলের একটাই লক্ষ্য-বিএনপিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখা।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটার পর একটা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার কী করতে চায় এটা আমরা যেমন বুঝেছি, দেশের মানুষও সেটা বিশ্বাস করে। সবকিছুই করছে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে। বিএনপিসহ অন্য দলগুলো নির্বাচনে গেলে নিজেদের সাজানো পরিকল্পনা কাজ না-ও করতে পারে। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে যা করার দরকার, সেদিকেই হাঁটছে সরকার।’

গত সোমবার কুমিল্লার একটি আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় একটি নৈশকোচে পেট্রলবোমা হামলায় আট যাত্রী নিহত ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেসমিন আরা এ আদেশ দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার ঢাকার নিম্ন আদালতে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকাকে অপমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দায়ের করা মানহানির মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই দিনে রাজধানীর আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিশেষ আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতির মামলায় খালেদার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারের আদেশ দেন। এ নিয়ে সর্বমোট তিনটি মামলায় পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছে। চেয়ারপারসন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সেই বিষয়ে যাবতীয় কিছু কোর্টকে অবহিত করা হয়েছে। তারপরও তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ অক্টোবর এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বিএনপি নেত্রী দেশের উদ্দেশে রওনা দেবেন। ফেরার পথে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতিতে দেশটির প্রবাসী বিএনপি নেতাদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

পরদিন শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেখানে বেগম জিয়াকে দলের পক্ষ থেকে বড় ধরনের সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান কার্যালয় পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সারিবদ্ধভাবে বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। শুধু তাই নয়, বিএনপি নেতারা আশা করছেন, বেগম জিয়া নিশ্চয়ই দলের নেতাকর্মীদের জন্য কিছু নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে ফিরছেন। ফলে বেগম জিয়া দেশে ফেরার পর দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট দ্রুত পাল্টে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগামী নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরবে দলটি। ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে কমিশন সংলাপে যাবে বিএনপি—এমনটাই জানিয়েছে চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি সূত্র।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: রাজনীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.