বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

শিশুদের ব্যাগে অনুমোদিত বই ছাড়া অন্য কিছু নয়

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাগে সরকার অনুমোদিত বই ও উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু না দিতে সবাইকে সতর্ক করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তাফা কামালের স্বাক্ষরিত পরিপত্রে এ সতর্কের কথা জানানো হয়েছে। ওই পরিপত্রে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ব্যাগে অনুমোদিত বই-উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু বিদ্যালয়ে আনতে নিরুৎসাহিত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, আট বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপপরিচালক; জেলা, উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের জন্য যেসব বই অনুমোদন করেছে, তা পরিবহনে কোনো ছেলে-মেয়ের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যেসব ছাত্র-ছাত্রী ব্যাগে বই বহন করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তার ওজন বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি যেন না হয়; সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভারী ব্যাগ বহনের কারণে যাতে পিঠে ব্যথা বা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মতো সমস্যা দেখা না দেয়, সেজন্য অনুমোদিত বই, উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু ব্যাগে করে বিদ্যালয়ের বয়ে আনা নিরুৎসাহিত করতে হবে।

ব্যাগের ওজন শিশুদের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি যাতে না হয় পরিপত্রে তা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা পর্যদ এবং অভিভাবকদের বলা হয়েছে।

প্রাথমিকে শিশুর শরীরের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করতে ছয় মাসের মধ্যে আইন প্রণয়নে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন না করতে এবং করাতে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের সব স্কুলে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করতেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পাঁচ মাস পর গত মে মাসেও শিশুদের ভারী ব্যাগ নিয়ে চলা ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয় সবার জ্ঞাতসারে শিশুদের ভারী ব্যাগ নিয়ে চলতে দেখা যায় তখন। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ২৫ শিক্ষার্থীর ব্যাগের ওজন করে তাদের গড় ওজনের ২৫ শতাংশের বেশি পাওয়া যায়। সরকারের দেওয়া বইয়ের সঙ্গে স্কুল থেকে দেওয়া সহায়ক বই ও প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনটি পর্যন্ত খাতা বা ডায়েরি দেখা যায় তাদের ব্যাগে। পাশাপাশি ব্যাগের ওজনের সঙ্গে যোগ হয় টিফিন বক্স ও কমপক্ষে ১ লিটার পানি। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে স্কুলের আগে-পরে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য কোচিং সহায়ক বই ও খাতা থাকায় ওজন অতিরিক্ত হয়।

চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, ৫ বছরের একটি ছেলে শিশুর আদর্শ ওজন ১৮ দশমিক ৭ কেজি, আর মেয়ের ১৭ দশমিক ৭ কেজি। ৬ বছরের একটি ছেলে শিশুর আদর্শ ওজন ২০ দশমিক ৬৯ কেজি, আর মেয়ের ১৯ দশমিক ৯৫ কেজি। সে হিসেবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ব্যাগের ওজন সর্বোচ্চ ২ কেজি হওয়ার কথা (শরীরের ওজনের ১০ শতাংশ)। সেখানে ঢাকার খ্যাতনামা স্কুলগুলোর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাগের ওজন সর্বনিম্ন ৪ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও হিসেবটা এরকমই।

অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগের কারণে শিশুরা মেরুদ- ও হাড়ের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে বেড়ে উঠছে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু রোগ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সমাধান হিসেবে বই কমিয়ে আনা অথবা বিভিন্ন দেশের মতো বই-খাতা স্কুলে রেখে আসার ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ তার।

এবার সরকার অনুমোদিত বই ও উপকরণের বাইরে কোনো কিছু না আনতে সতর্ক করে পরিপত্র জারি করা হলেও এতে সরকারের দেওয়া পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অনুমোদিত উপকরণ কোনগুলো, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তাফা কামালকে ফোন করা হলে মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে কথা বলেননি তিনি।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: শিক্ষা

Leave A Reply

Your email address will not be published.