শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

গাজীপুরে মন্দির ও শ্মশানের ভাওয়াল রাজাদের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল!

 

  • গাজীপুর সংবাদদাতা

গাজীপুর জেলা শহরের প্রবেশপথে শিববাড়ী মোড়ে অবস্থিত ভাওয়াল রাজাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী ইন্দ্রশ্বর শিবমন্দির ও মহাশ্মশানের দেবোত্তর সম্পত্তি এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে প্রভাবশালীরা শ্মশানের শবদাহ করানোর কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মিত পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। এসব অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মন্দিরের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ কুমার দাস গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর ও জয়দেবপুর থানায় লিখিত আবেদন করেছেন।

লিখিত আবেদন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুইশত বছর পূর্বে ভাওয়াল রাজা ইন্দ্রনারায়ণ রায়ের নামে তত্কালীন জয়দেবপুর প্রবেশ পথে শিববাড়ী মোড় এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শবদাহ করার জন্য শ্রী শ্রী ইন্দ্রশ্বর শিব মন্দির ও মহাশ্মশান প্রতিষ্ঠা এবং পাশেই একটি পুকুর খনন করে পাকা সিঁড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। বর্তমানে উক্ত শ্মশানে গাজীপুরসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃতদেহ দাহ করা হয়। এছাড়া মন্দিরে প্রতিদিন নিত্যপূজাসহ বাত্সরিক বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ কুমার দাস অভিযোগ করে বলেন, এলাকার চিহ্নিত কতিপয় ব্যক্তি উক্ত পুকুরটি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা পুুকুরের পাশে ছাপড়া ঘর উঠিয়ে হোমিও প্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নামে সাইনবোর্ডও লাগিয়েছে। ইতোপূর্বে এসব প্রভাবশালী ব্যক্তি মন্দিরের বেশ কিছু দেবোত্তর সম্পত্তিও দখল করে নিয়েছে। তাদের এ অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলে গালাগাল এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। গত ২ এপ্রিল তারা পুকুরের উত্তর পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করলে মন্দির কমিটি বাধা দেয় ও থানায় লিখিত অভিযোগ করে। এছাড়া গত ২৯ মে পুনরায় তারা স্থাপনা নির্মাণের অপচেষ্টা চালায়। এর বিরুদ্ধে আবারও জয়দেবপুর থানায় অভিযোগ করা হলে পুুলিশ ওই প্রভাবশালীদেরকে দখলকৃত জমির কাগজপত্র নিয়ে থানায় হাজির হতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু নির্ধারিত দিনে তারা থানায় হাজির তো হয়নি, এমনকি কোনো কাগজপত্র দেখাতেও ব্যর্থ হয়। লিখিত আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাই মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে অবিলম্বে দখলদারদের উচ্ছেদ এবং দখলকৃত জমি ও পুকুরটি উদ্ধারে জোর দাবি জানানো হয়।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসের একটি তদন্ত দল কয়েকদিন আগে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মন্দিরের যাবতীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। তদন্তশেষে তদন্তকারী দলের কর্মকর্তা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

সিএ/ক্যানি

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.