শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

খেঁজুর পাতার তৈরি সেন্সরে পানির দূষিত বস্তু শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: সৌদিআরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষক ড. মো. আবদুল আজিজ। গবেষণা করছেন পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রোক্যামিক্যাল শিল্প থেকে প্রাপ্ত পরিবেশ দূষণকারী সনাক্তকরণের জন্য ন্যানো মেটারিয়ালস বেজড ইলোকট্রোক্যামিক্যাল সেন্সর তৈরি নিয়ে। ১৯৭৭ সালের ১০ জুলাই যশোর জেলার কেশবপুরের মোমিনপুর গ্রামে জন্ম নেয়া তরুণ এ বিজ্ঞানী ইতোমধ্যে সাফল্য পেয়েছেন। মরুর দেশের বহুল ব্যবহৃত ও সহজ লভ্য খেঁজুর পাতা দিয়ে তৈরি করেছেন ইন্টারকারেন্ট ন্যানো স্ট্রাকচার কার্বন ইলেকট্রেড সেন্সর।

সৌদিআরবে অবস্থানরত এই বিজ্ঞানী তার গবেষণাকর্ম ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেণ কিভাবে তিনি খেঁজুর পাতার তৈরি সেন্সরে পানির দূষিত বস্তু শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, কিভাবে এটা কাজ করে। ড. আবদুল আজিজ বলেন, এটি একটি ন্যানো মেটারিয়ালস ইলোকট্রো কেমিক্যাল সেন্সর, যা ব্যবহার করে খুব সহজে ও কম খরচে পরিবেশ দূষণকারী ফেনোলিক যৌগ শনাক্ত করা যাবে। এটা পানিতে মিশ্রিত সকল দূষিত যৌগকে চিহ্নিত করবে। এটা পানির দূষণ রোধে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া সেন্সরটি ব্যবহার করে পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রোক্যামিক্যাল শিল্প থেকে প্রাপ্ত পরিবেশ দূষণকারী যৌগ শনাক্ত করা যাবে।

তিনি বলেন, এই কার্বন ইলেকট্রন ব্যবহার করে ভবিষ্যতে কম খরচে নানা প্রকার সেন্সর তৈরি করা যেতে পারে। এটা থেকে অন্যান্য কৃষি বর্জ্য থেকে সেন্সর তৈরির একটা ধারণা পাওয়া গেছে। এই ধারণার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা আরো সেন্সর তৈরি করতে পারে যেটা দেশের জন্য উন্নয়নমূলক হবে।

বিদেশে সুনাম কুড়ানো আবদুল আজিজ জানান, তার ছেলেবেলার পথ চলাটা মসৃণ ছিল না। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে চতুর্থ আবদুল আজিজ ছোটবেলায় পিতাকে হারান। তারপরও অদম্য আবদুল আজিজ এগিয়ে চলেছেন মা ও বড় ভাইয়ের সহযোগিতায়। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় এসএসসি ও এইচএসসিতে স্টার মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর বিজ্ঞানে আগ্রহী আবদুল আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে ফলাফল খারাপ করেন। তবে তৃতীয় বর্ষ থেকে পুরাতন ছন্দে ফিরে আসেন। বিভাগীয় অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এমএসসি থিসিস সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০৫ সালে বৃত্তি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে চলে যান। ২০০৯ সালে এনালিটিক্যাল ক্যামেস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর গবেষণার জন্য জাপানের কুয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। সেখান থেকে আবদুল আজিজ বর্তমান কর্মস্থল কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলসতে পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তৈরি করেন ন্যানোম্যাটেরিয়াল-মডিফায়েড এক্সট্রোড পেন্সিল। পোস্ট ডক্টোরাল ফেলোসিপ শেষে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এখানেই ড. আবদুল আজিজ সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন ন্যানোটেকনোলোজিতে যোগদান করেন। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় আলো ছড়াচ্ছেন। তিনি ও তার দল মিলে তৈরি করেছেন ইনডিয়াম টিন-অক্সাইড ন্যানোপার্টিক্যাল-মডিফাইড ইনডিয়াম অক্সাইড। তার এ গবেষণা উইলি পাবলিকেশনস গ্রুপার ইলেকট্রো অ্যানালাইসিস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এত বস্তু থাকতে কিভাবে চিন্তা করলেন যে খেঁজুর পাতা থেকে এমন কিছু উদ্ভাবন করা যেতে পারে—এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. আবদুল আজিজ বলেন, আমার মা ছোটবেলায় খেজুর পাতা দিয়ে পাটি তৈরি করতেন। এটা ভঙ্গুর হলে বেশিদিন টিকতো না। ঠিক তেমনভাবে শুধু কার্বন তৈরি করলে হবে না, কার্বন যদি ভেঙে যায় তবে তা সরাসরি ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। উল্লেখ্য, খেজুর পাতায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সেলুস্লোজ আছে যা থেকে সহজে কার্বন বানানো যায়। সেখান থেকে মনে হয়েছে এ থেকে যদি কার্বন বানায় তাহলে কার্বণ সহজে ভেঙে যাবে না। যেটা থেকে সেন্সর বানানো যেতে পারে। এভাবেই আইডিয়া পেয়েছিলাম।

আবদুল আজিজ জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার ৫৬টি গবেষণাপত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তার দুটি গবেষণা আমেরিকা ও সৌদিআরবে প্যাটার্ন হয়েছে। তিনি তার গবেষণা কর্ম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি। বিদেশে গবেষণায় সাফল্য লাভ করলেও ড. আবদুল আজিজ দেশের জন্য নিজের মেধা প্রয়োগ করতে চান। যে গবেষণা করে তিনি বিদেশে অবদান রাখছেন সেটা করতে চান দেশের জন্যে। বলেন, আমি দেশে ন্যানোটেকনোলোজি গবেষণার কাজে আসতে চাই। আমি যেহেতু আধুনিক ন্যানোটেকনোলোজি নিয়ে কাজ করছি, আমি এ কাজে দেশকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য করতে পারেবা। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সস্তা ধাতবকে মূল্যবান ধাতবে রুপান্তর করতে সাহায্য করতে পারবো। তার মতে বাংলাদেশ ন্যানোটেকনোলোজি গবেষণায় সাফল্য লাভ করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন গবেষণাগার। তিনি বলেন, দেশে একটি আধুনিক ন্যানোটেকনোলোজি ইনিস্টিটিউট খোলা প্রয়োজন। এটা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোটেকনোলোজি বিভাগ আকারেও খোলা যেতে পারে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: প্রবাস,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

Leave A Reply

Your email address will not be published.