শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

অভিনেতা প্রবীর মিত্রের জমি দখল নিতে মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা নাটক!

# ৫০ বছর ধরে এক মামলা চলমান

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: রাজধানীর তাঁতীবাজারের কথিত পীর আলাউদ্দিন শাহ সাহেব মাজারের খাদেম মনির হোসেনের মৃত্যুর সাত মাসেও রহস্যের কোন কুল কিনারা হয়নি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট মিলেনি বলে পুলিশ চার্জশিট দিতে পারেনি। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁতীবাজারের ১, উচ্ছব পোদ্দার লেনের টিনশেড বাড়িতে পীর আলাউদ্দিন শাহ সাহেব মাজারের খাদেম মনির হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পৌণে ২ কাঠা এই জমির মালিক দাবি করেছেন প্রখ্যাত অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও তার ছোট ভাই সুবীর মিত্র। জমিটি দখল করতেই সেখানে কথিত মাজার গড়ে তোলা হয় বলে অভিযোগ প্রবীর মিত্রের পরিবারের। আর জমির দখল পাকা পোক্ত করতে কথিত ওই মাজারের খাদেম মনিরের স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যার অভিযোগ এনে তারই বোন আদালতে একটি মামলা করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জানে আলম মুন্সী বলেন, লাশ পুন: উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ মামলার চার্জশিট দেয়া সম্ভব নয়।
রুমা ইসলাম বলেন, পৌণে ২ কাঠা জমিতে কয়েকটি টিনশেড ঘরে তারা বসবাস করতেন। এই জমির মালিক পীর আলাউদ্দিন শাহ সাহেব। জমির এক কোনায় মাজারটি অবস্থিত। এই মাজারের খাদের ছিলেন তার বাবা আলী হোসেন। ২০০৩ সালে তার বাবা মারা গেলে বড় ভাই মনির হোসেন মাজারের খাদেম নিযুক্ত হন। চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি মাজারের সামনে মনিরের স্ত্রী হেলেনা বেগম ও তার দুই সন্তান আসিফ হোসেন বাবু ও মেহেনুর সোনামনি ইট দিয়ে আঘাত করে মনিরকে হত্যা করে। এসময় তারা ইট দিয়ে মাথা থেতলিয়ে দেয়। তাকে হত্যার পর লাশ বিনা ময়নাতদন্তে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে। এ ঘটনায় তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে লাশ পুন:উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করা হয় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে।
রুমা ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। মামলার আসামীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর তার মা করিমন নেছা, বোন সালমা ইসলাম, ফাতেমা ইসলাম ও ভাই আমীর হোসেন হাওলাদারকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ক্যাডারদের ভয়ে তারা ওই চিঠির কোন জবাবও দেননি।

প্রবীর মিত্রের ছোট ভাই সুবীর মিত্র বলেন, মনিরের চাচা আলাউদ্দিন প্রবীর মিত্রের চাচাতো ভাই সুধেন্দ্র কৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে টিউবওয়েল মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করতেন। সুধেন্দ্রের কয়লা বিক্রির প্রতিষ্ঠানে আলাউদ্দিন কর্মচারী হিসাবে কাজ করতেন। তাঁতীবাজারে হরিপ্রসন্ন মিত্র রোডটি প্রবীর মিত্রের দাদার নামে। ১৭, হরিপ্রসন্ন মিত্র রোডে ‘মিত্র ভবন’ টি প্রবীর মিত্রদের। ১৯৫২ সালের দিকে এই ভবনের পাশে ১, উচ্ছব পোদ্দার লেন হোল্ডিংটিতে আলাউদ্দিনকে থাকতে দেয়া হয়। পৌণে ২ কাঠা জমির ওপর টিনশেড ঘর তুলে আলাউদ্দিন তার স্ত্রী আমিনা বেগম ও আলাউদ্দিনের ভাই আলী হোসেনকে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৬৮ সালে আলাউদ্দিন ওই জমির মালিকানা দাবি করেন। ওই বছরে প্রবীর মিত্র, তার ছোট ভাই সুবীর মিত্র, চাচাতো ভাই দীলিপেন্দ্র নারায়ণ মিত্র ও অমর জিৎ মিত্র বাদী হয়ে আদালতে একটি উচ্ছেদ মামলা করেন।

অভিনেতা প্রবীর মিত্র বলেন, মামলাটি বেশ কয়েবার নি¤œ আদালত থেকে উচ্চ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই মামলাটি পরিবেশ আদালতে বিচারাধীন। ৪৯ বছর পরও এই মামলাটির আমরা কোন রায় পাইনি। জমির মালিকানার সকল কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। যে পক্ষটি জমি দখল করে আছে, তাদের একটি কাগজও নেই। সেখানে একটি কথিত মাজার স্থাপন করে জমিটি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, পীর আলাউদ্দিন শাহ সাহেব নামে যে মাজার গড়ে তুলে পৌণে ২ কাঠা জমি দখল করা হয়েছে, তার প্রকৃত মালিক অভিনেতা প্রবীর মিত্রের পরিবারের। জমির দখল পাননি বলে প্রবীর মিত্র এখন এলাকায় বসবাস না করে সেগুনবাগিচায় বসবাস করছেন। এই জমির এসএ রেকর্ড প্রবীর মিত্র ও সুবীর মিত্রের নামে। আরএস ভূক্ত করা আছে প্রবীরের চাচাতো ভাই সুধেন্দ্র কৃষ্ণ মিত্রের নামে। সিটি জরিপ রয়েছে প্রবীরের বড় চাচার নামে। আলাউদ্দিন ও তার পরিবারের কোন সদস্য এই জমির কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাদের কাছে কোন কাগজপত্র নেই। ওই জমিতে প্রবীরের পরিবার আলাউদ্দিনকে থাকতে দিয়েছিলেন। এখন আলাউদ্দিনের ভাতিজা মনিরের পরিবারটি সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে এই আভ্যন্তরীণ কোন্দল বেঁধেছে। মনির হোসেনকে হত্যা করা হয়নি। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/এসএস/হৃদয়

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি

Leave A Reply

Your email address will not be published.