শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত

বিষেরবাঁশী ডেস্ক: লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক।’ অর্থাৎ-‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এই ধ্বনিতে মুখরিত সৌদি আরবের পবিত্র মিনা নগরী। তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজি) মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন। মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি।

হজের জন্য নির্ধারিত পাঁচ দিনের প্রথম দিন ছিল গতকাল বুধবার। সেদিন মিনায় হজযাত্রীরা অবস্থান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। রাতে পুনরায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয় আরাফার ময়দানে। আজ বৃহস্পতিবার সেখানে জোহর ও আসর নামাজ আদায় করবেন। আরাফাত ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামেরা থেকে খতিব সাহেব হজের খুতবা পাঠ করবেন এবং জোহর ও আসর এক আজানে দুই ইকামাতে কসর অর্থাৎ দুই রাকাত জোহর ও দুই রাকাত আসর নামাজ আদায় করবেন। আর তাঁবুতে অবস্থানরতদের মধ্যে মুকিমরা জোহরের সময় জোহর ও আসরের সময় আসর আদায় করবেন। আর মুসাফিররা এক আজানে দুই ইকামাতে জোহর ও আসর কসর করে আদায় করবেন। এরপর মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান করে জীবনের যাবতীয় গুনাহের ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর দরবাকে আকুল আকুতি জানিয়ে মোনাজাত করবেন। এ ছাড়া দেশ-দশের উন্নতি, অগ্রগতি, বালা-মুসিবত থেকে নাজাত এবং মৃত-জীবিত নিকটাত্মীয়দের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হবে। আরাফাতে অবস্থানকেই মূলত হজ বলা হয়। মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল-হাজ্জু আল-আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থানই হচ্ছে হজ। যারা আরাফাতের সীমানায় অবস্থান করবে না তার হজ হবে না।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করে চলে হাজিরা চলে যাবেন মুজদালিফায়। হেঁটে বা গাড়িতে চড়ে আরাফাহ থেকে মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করতে হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপই নির্দেশ দিয়েছেন। হজের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন জামারাতে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় (৪৯টি) পাথর এখান থেকেই অনেকে সংগ্রহ করে থাকেন। মিনাতেও প্রয়োজনীয় পাথর পাওয়া যায়। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে মাথা না ঢেকে ঘুমিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে নিতে হবে পরের দিনের কার্যক্রম সহজভাবে করার স্বার্থে। বাদ ফজর মুজদালিফা থেকে মিনায় ফিরতে হবে। তবে সঙ্গে মাজুর (বিভিন্ন সমস্যায় থাকা) ব্যক্তি থাকলে রাত্রী দ্বিপ্রহরের পরও মুজদালিফা ত্যাগ করা যায়।

হজের তৃতীয় দিন আগামীকাল ১০ জিলহজ শুক্রবার মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডানদিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। হাজিরা মক্কায় ফিরে কাবা শরিফ ‘তাওয়াফ’ ও ‘সাঈ’ (কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো) করে আবার মিনায় ফিরে যাবেন।

হজের চতুর্থ দিন জিলহজের ১১ তারিখ (২ সেপ্টেম্বর) শনিবার মিনায় রাতযাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত।

পরদিন ১২ জিলহজ (৩ সেপ্টেম্বর) রোববার, অর্থাৎ হজের শেষ দিন মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। আর মক্কায় পৌঁছার পর হাজিদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ী তাওয়াফ। স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ী তাওয়াফ অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজব্রত পালন।

বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদদাতা/হৃদয়

Categories: আন্তর্জাতিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.