শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

শুভ্র হত্যাকাণ্ডঃ তিন দিনের রিমাণ্ড শেষে কাল আদালতে হাজির করা হবে ৩ আসামীকে

  • নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ

মাসদাইরের প্লামি ফ্যাশনে মার্চেন্ডাইজার শাখাওয়াত হোসেন শুভ্র হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারকৃত তিন আসামীকে ৩দিনের রিমাণ্ড শেষে কাল রোববার আদালতে হাজির করা হবে। আসামীরা হলো নাজমুল ইসলাম, বাবুল সাহা জীবন, সঞ্জয় দাস ওরফে মনা এরমধ্যে নাজমুল অটো চালক ও মনা গার্মেন্টস এর কাটিং মিস্ত্রি।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, আটো চালক  ও কাটিং মিস্ত্রি নিখুদ পূর্ব পরিকল্পনা করে হত্যাকাণ্ডটি সমাপ্ত করেছে। নিহতের ভাই রাশেদুল হক জানান, একজন অটোচালক যে কিনা ঠিক মতো নিজের নাম লিখতে পারেনা সে কিভাবে হত্যাকাণ্ডের আগে ইংরেজীতে নিহতের মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠায়।  “Money is nothing, men power is everything ” আর “Kawsor Vai ur awesome, are u sure” এই দু’টি ম্যাসেজকে ঘিরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য লুকিয়ে আছে বলে রাশেদুল আরও জানান।

উল্লেখ্য, গত  ১৫ আগষ্ট শাখাওয়াত হোসেন শুভ’র লাশ নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় আসামী মিলন ও বশির। সেই সুত্র ধরে গত বুধবার পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে মাসদাইরের নাজমুল, জীবন ও মনাকে গ্রেফতার করে ৫৪ ধারায় আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করার আদেশ দেন এবং বৃৃৃহস্পতিবার পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত আসামিদেরকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে খুনের আলামত পাওয়ায় সাত দিন পর মামলাটি নেয় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। শুভ্র’র পিতা শাহাদাত হোসেন শিকদার বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করে গত মঙ্গলবার ২২ তারিখ রাতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ৮১।

মামলার আসামীরা হলো দেওভোগ আখড়ার গনেশ সাহার বাড়ির ভাড়াটিয়া দানেস সাহার ছেলে বাবুল সাহা জীবন (৩৩), মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরীর আমির হোসেনের ছেলে নাজমুল ইসলাম (২৮), জামতলা হীরা কমিউনিটি সেন্টার এলাকার গোপাল চন্দ্র দাসের ছেলে সঞ্জয় দাস ওরফে মনা (৩০), মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরির তোতা মিয়ার মেয়ের জামাই মিলন (৩২), একই এলাকার বশির (৩১), মাসদাইর বাজার পাবনা পট্টির যতীন্দ্র’র ছেলে সমীর (৩০) শহরের খানপুর মেইন রোডের ডন চেম্বার এলাকার মৃত ডাক্তার মো: হামিদের ছেলে কাউছার (৩৪) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩জন।

শাহাদাত হোসেন শিকদার মামলায় উল্লেখ করেন, ১৫ আগস্ট বিকেলে বাবুল সাহা জীবনসহ সকল আসামীরা তাহার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন শুভ্রকে বাসা থেকে মাসদাইর আদর্শ স্কুলের উত্তর পাশের মায়ের আচল নামক নির্মানাধীন ১২ তলার ৭ম তলায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে আসামীরা শুভ্রকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথার পিছনে, থুতনির নিচে আঘাত করিয়া ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পরে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শুভ্র’র মৃত দেহ রাত ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রেখে চলে যায়। পরে তানি নামে এক লোক যার মোবাইল নং-০১৬৮৬৯১০২৬৮ নাম্বার হতে শুভ্র ছোট ভাই সৌরভকে ফোন করে জানায়, তোমার ভাই হাসপাতালে আছে। এমন সংবাদ পেয়ে সকল আত্মীয় স্বজন হাসপাতালে ছুটে গিয়ে শুভ্রকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসাপাতালে প্রেরণ করে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শুভ্রকে আঘাত করে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আর মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, আসামীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর বাবুল সাহা জীবনের কাছ থেকে শুভ্র’র মোবাইল সেট, মানি ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু শুভ্র’র ব্যবহৃত মোবাইলের সিম মেমোরী কার্ড ও মানি ব্যাগে থাকা টাকাসহ অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়নি।

এদিকে নিহত শুভ্র ফতুল্লার উত্তর নরসিংপুর এলাকাতে অবস্থিত রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট কারখানা প্লামি ফ্যাশনে চাকরি করতো। গত  ১৫ আগস্ট রাতে তার লাশ শহরের খানপুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তার বন্ধুরা । ঘটনার পর মামলার আসামী  নাজমুল, জীবন ও মনাকে পুলিশ আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখায়।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন মামলা দায়েরের বিষয় সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে খুনের আলামত পাওয়া গেছে। শুভ্রকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমি চাই শুভ্র হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হোক। আমি সব সময় শুভ্রর পরিবারের পাশে থাকবো।   গত বৃৃৃহস্পতিবার আদালত আসামিদের কে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে । কাল রবিবার আসামীদেরকে আদালতে হাজির করা হবে ।

উল্লেখ্য, শাহাদাত হোসেন শুভ মাসদাইর নিবাসী শিকদারের বড় ছেলে সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে সদ্য বিবাহ বন্ধনে আবধ্য হয়েছিল। সে  প্লামি ফ্যাশনে মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কর্মরত ছিল।

 

 

 

 

অনলাইন ডেস্ক/ক্যানি

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,নারায়ণগঞ্জের খবর

Leave A Reply

Your email address will not be published.