শুক্রবার ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ শুক্রবার

‘করোনার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প’ (পার্ট ০১)

অনলাইন ডেস্ক:-দেশের স্বনামধন্য একটি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান মাইক্রোফাইবার গ্রুপ। এ গ্রুপের একটি বড় খাত হচ্ছে গার্মেন্টস। ড. কামরুজ্জামান কায়সার এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের (অর্থ) দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশীয় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলসহ আন্তর্জাতিক অনেক মিডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলে থাকেন। দেশের অনেক টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতেও অংশ নেন।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ তার বাইরে থাকতে পারে নি। ফলে অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও একটা বিরূপ প্রভাব পড়ে। গার্মেন্টস খাতে লাগে বড় ধাক্কা। কিন্তু এরইমাঝে বেড়েছে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং প্রবাসী আয়। করোনাভাইরাস দেশে অতটা মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে না পড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা, চড়াই-উৎরাইয়ের সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারটেক্স নিউজ দেশের অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতের বর্তমান অবস্থা, করোনায় ক্ষয়-ক্ষতি, আমাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছে ড. কামরুজ্জামান কায়সারের সঙ্গে। দীর্ঘ এ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে দেশের অর্থনীতির নানা চিত্র, নানা তথ্য। ভারটেক্স নিউজের পাঠকদের জন্য এখানে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। আজ উপস্থাপিত হলো প্রথম পর্ব।

ভারটেক্স নিউজ: ড. কামরুজ্জামান কায়সার, অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে গত কয়েক শতকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও সদূরপ্রসারী যে মন্দাটি ঘটবে বাংলাদেশেও তার বিরাট ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এতে বাংলাদেশের সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জিডিপি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। করোনাভাইরাসের সাত মাস পেরিয়ে এখন পরিস্থিতি কী?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: ধন্যবাদ আপনাকে সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অবতারণা করার জন্য। আপনারা জানেন যে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে একটা বিরূপ মন্দা অবস্থা তৈরি হয়েছে এই করোনা মহামারীর সময়ে আমরাও সেই মহামারীতে আক্রান্ত একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি।  আমরা যে শিল্প নিয়ে কাজ করি সেটা হলো পোষাক শিল্প। তৈরি পোষাক শিল্পের সম্প্রসারণ, রপ্তানি এবং উন্নয়ন- এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করি। আমাদের মেইন যে বাজার সেটা হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা। ইউরোপ ও আমেরিকাতে প্যানডেমিক সিচুয়েশনটা প্রথম দিকেই আঘাত করে। সে আঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অর্থনীতির যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি তা অনেক বাধাগ্রস্ত হয়, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। সেখানে অর্থনৈতিক একটা ধস নামে। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে একটা  বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে এবং এটা এখনো চলমান আছে। এই চলমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের যারা বাইয়ার বা ক্রেতা দেশ আছে তারাই কিন্তু প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত। স্বাভাবিকভাবেই ভোক্তারা যদি ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় সেটার প্রভাব কিন্তু আমাদের দেশে এসে পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। তারপরেও আপনাকে জানিয়ে রাখি, সবকিছুর মধ্যে যেটাকে বলা হয়- আপস অ্যান্ড ডাউন, জোয়ার-ভাটার একটা বিষয় কিন্তু থাকেই। সেটাকে সাথে নিয়েই সাত মাস আমরা এগুচ্ছি। চলতি অর্থনৈতিক বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস) আমাদের এক্সপোর্টের যদি টোটাল একটি পরিসংখ্যান দিই তাহলে দেখবেন যে, আমাদের থ্রি পার্সেন্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তার মধ্যে গার্মেন্টসের ওয়ান পার্সেন্ট প্রবৃদ্ধি। আর ওভারঅল প্রবৃদ্ধি হলো টু পার্সেন্ট। সব মিলিয়ে থ্রি পার্সেন্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেখানে আমাদের গার্মেন্টসের প্রবৃদ্ধি প্রতি কোয়ার্টারে সাত/আট বা দশের মধ্যে রাখতাম। আমাদের আশংকা ছিল এই প্রবৃদ্ধি মাইনাসে চলে যাবে। আল্লাহর অশেষ রহমত যে, আমরা এই প্রান্তিকে সেই মন্দাবস্থায় পড়ি নি। হয়ত সংখ্যাগত দিক দিয়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছে তবে আমরা নেগেটিভ প্রবৃদ্ধিতে যাই নি। গত এপ্রিল থেকে জুন মাসের যে কোয়ার্টার সেই সময়ই বেশি প্রভাব পড়েছিল। তখন করোনার প্রভাবটাও বেশি ছিল, আমাদের বাইয়ারদের যে ইকোনোমিক হাব- সেগুলো বন্ধ ছিল। যার কারণে আমরা সেই প্রান্তিকে ভালো কিছু করতে পারি নি। তারপরেও আমরা কটিয়ে উঠেছি।

ভারটেক্স নিউজ: এই যে বলছেন, সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন কিন্তু করোনা তো শেষ হয়ে যায় নি। কীভাবে সেটা সম্ভব হলো?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: কাটিয়ে উঠতে পেরেছি এই কারণে যে, আমাদের অনেক বাইয়ার তারা আমাদের প্রতি অনেক সহনশীল ছিলেন। আমাদের এই ক্রান্তিকালে তারা কিন্তু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বা প্রফেশনাল অ্যাটিচিউড তারা দেখিয়েছেন। এমনকি বিশ্বের অন্যতম সেরা বাইয়ার এইচএনএম তারা তাদের কোনো অর্ডার ক্যান্সেল করে নি। তারা বলেছে, আমরা যে অর্ডারগুলো প্লেস করেছি তা আমরা নেবো। তারা বলেছে, আমাদের রানিং অর্ডার উইথড্র করব না, যদি পরে সমস্যা বেশি হয় তখন সে পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাবে কিন্তু এখনকার অর্ডার বাতিল করব না। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো দিক ছিল।

 পাশাপাশি অন্য কয়েকটা বাইয়ার আবার সাডেনলি কিছু অর্ডার ক্যান্সেল করে দিয়েছে। শিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের পারচেজ অর্ডার ক্যান্সেল করেছে। সেটা আমাদের জন্য একটা নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া ছিল। সব মিলিয়ে আমাদের আট বিলিয়ন ইউএস ডলারের টার্নওভারের মধ্যে আমরা ছয় বিলিয়ন ডলারের টার্নওভার করতে পেরেছি। দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমরা সাকসেসফুলি এক্সপোর্ট করতে পারি নি। সেটাও আমরা মনে করি, যত বড় আশংকা করেছিলাম তত কিছু হয় নি।  আমরা মনে করেছিলাম ফিফটি পারসেন্ট এক্সপোর্টও হয়ত হবে না। কিন্তু বাইয়ারদের সহানুভূতি, তাদের ভালো দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা সেই মন্দাবস্থা থেকে কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।

ভারটেক্স নিউজ: করোনা মহামারীতে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি খাত থেকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: আগামী দিনে আমরা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করব, আমরা কীভাবে ঘুরে দাড়াব, তার কোনো কৌশল আছে কিনা- এসব যদি বলতে হয় তাহলে বলব যে, আমরা এমন একটা শিল্প নিয়ে কাজ করি যে শিল্প মৌলিক চাহিদার তিনটির মধ্যে একটি। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়ের মধ্যে আমাদের বস্ত্রটা অন্যতম একটি বিষয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই বস্ত্র লাগবেই। হয়ত আপনি আগে পাঁচটি ব্যবহার করতেন দু মাসে, এখন সেখানে আপনি দুটো ব্যবহার করবেন। কিন্তু আপনাকে ব্যবহার করতেই হবে। আপনি বস্ত্র ছাড়া চলতে পারবেন না।

আমাদের এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে…আমরা তো সস্তা শ্রমের দেশ। আগে এটা চায়না নির্ভরতা ছিল। কিন্তু এখন বাইয়ারদের চায়না নির্ভরতা অনেক কমে গেছে। এইজন্য যে, চীনে এখন শ্রমবাজার অনেক উঁচ্চমূল্যের। সেখানে এখন লো ওয়েজেজ- সেটাও অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ ডলার। আমরা কিন্তু এখনো একজন শ্রমকিকে ১০০ থেকে ১২০ ডলার দিয়ে থাকি। ১২০ থেকে শুরু হয়েছে, মূলত ১২০ নয়; ১২০ থেকে ২০০ ডলারের মধ্যে আমাদের মজুরির রেঞ্জটা বিরাজ করে।  এ ক্ষেত্রে বাইয়ারদেরও পছন্দের একটা ব্যাপার থাকে, তাদের আর্থিক সুবিধা ও লাভের একটা প্রশ্ন আছে।

ভারটেক্স নিউজ: নিটওয়্যার খাতে চীন বিশ্বের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। এ খাতে বাংলাদেশের অবস্থান কী এবং আমাদের অর্জন কতটা আশাব্যঞ্জক?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: আপনারা জানেন যে, গার্মেন্টেসের যে নিটওয়্যার ডিভিশনটা, এই নিটওয়্যার ডিভিশনে চায়নার পরেই কিন্তু আমাদের অবস্থান। চায়না ওয়ার্ল্ড মার্কেট শেয়ারের ৩৩ পার্সেন্ট দখল করে রেখেছে আর আমাদের দখলে ৯ পার্সেন্ট। যদিও প্রথম থেকে দ্বিতীয়ের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য তারপরেও আমরা সেকেন্ড পজিশনে আছি। আমাদের পরে ভারতের অবস্থান। তাদের অবস্থান কিন্তু আমাদেরও প্রায় চার/পাঁচটা কান্ট্রির পরে। তারা মাত্র ৬ পার্সেন্ট নিটওয়্যার রপ্তানি করে সারাবছর। আমাদের এই অর্জনটা একদিনে হয় নি। এটা আপনার তিন যুগের অর্জন। ৮০’র দশক থেকে এর শুরু; ৮০’র দশক থেকে এই ২০২০-এ এসে আমরা বাইয়ারদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি বিভিন্ন কারণে। সস্তা শ্রমই আস্থা অর্জনের অন্যতম উপকরণ আমি তা মনে করি না। আমাদের কোয়ালিটি ডেভলপ করেছি, আমাদের অবকাঠামো ডেভলপ করেছি, আমরা সুইফ্‌ট ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া, বাইয়ারদের রিপিট অর্ডারগুলো এক্সিকিউট করার সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। আমরা অটোমেশন অর্জন করেছি। সবকিছু মিলিয়ে বাইয়াররা যে কম্পিটিটিভ প্যারামিটারগুলো চায় সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর এগিয়ে আছি বলেই আমাদেরকে তারা তাদের পছন্দের তালিকায় রেখেছে। তবে আমাদের এখনো অনেকদূর যেতে হবে, আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে।

ভারটেক্স  নিউজ: গার্মেন্ট শিল্পের আরো উন্নয়নে আমাদের কী করণীয় আছে?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: ধন্যবাদ, সুন্দর একটি প্রশ্ন করার জন্য। আসলে আমাদের এই শিল্পখাতে অনেক ভালো করার সুযোগ আছে। বন্দর কাঠামো আমাদের ঢেলে সাজাতে হবে। ডীপ সি পোর্টের (গভীর সমুদ্রবন্দর) একটা দাবি আমাদের আছে। সেটা না থাকার কারণে আমরা লিড টাইমে অনেক পিছিয়ে আছি। ইউরোপ ও আমেরিকাতে প্রায় এক থেকে দেড় মাস লাগে আমাদের পণ্য যেতে কিন্তু ভিয়েতনাম ও চায়না থেকে মাত্র ১৫ দিনে চলে যায়। বাইয়াররা দেখবেন যে, সস্তা হলেই তো হবে না; অনেক সময় দুই সেন্ট বা পাঁচ সেন্ট বেশি দিয়েও বাইয়ার পণ্য নিয়ে নেন কারণ তিনি দেখছেন যে, এতে তার সাপ্লাই চেইন কয়েকবার রি-জেনারেট করা সম্ভব। আর বাংলাদেশ থেকে যদি এক মাস বা দেড় মাসে পণ্যটা যায় তাহলে আমাদের সাপ্লাই চেইনে তারা অনেক পিছিয়ে থাকেন। সেজন্য  আমাদের এই অন্যান্য যে উন্নয়ন বা উন্নতিগুলো ঘটেছে তার পাশাপাশি আমাদের সেইলিং পিরিয়ডটাকে কমাতে হবে। সেইলিং পিরিয়ড কমাতে হলে বন্দরের উন্নয়নের দিকে আমাদের বেশি নজর দিতে হবে।

ভারটেক্স নিউজ: মুদ্রার অবমূল্যায়নের একটা দাবি আপনাদের রপ্তানিকারকদের আছে। এটা কেন?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: আমাদের কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশনের কথা যেটা বলা হয়- আমাদের কারেন্সি এক্সেচঞ্জ রেটটা অনেক দিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যান্য দেশে কিন্তু সেই স্থিতিশীলতা নেই। চায়নাতে কারেন্সি অনেক শক্তিশালী হওয়ার কারণে ইউরোপিয়ান বাইয়ার, আমেরিকান বাইয়াররা অসুবিধায় পড়েন, কম্পিটিটিভনেসে তারা অনেকটা পিছিয়ে যান। সে ক্ষেত্রে আমাদের মুদ্রার বর্তমান যে স্থিতিশীলতা- এটা ঠিক আছে তবে এক্সপোর্টারদের যে দাবি ছিল, এখানে যদি দুটো বিনিময় হার করা হতো তাহলে আরো বেশি সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হতো, বাংলাদেশ আরো বেশি স্ট্রং পজিশনে থাকতো। দুটো বিনিময় হার হলো- রপ্তানি যারা করবেন তাদের জন্য এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হারটা একটু বেশি হলে এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। আর যারা প্রবাসী, বাইরে যারা থাকেন তাদের জন্য যে বিনিময় মূল্যটা সেটা আরেকটা হতে পারে। ইনজেনারেল যে বিনিময় হার সেটা একটা হোক, আর আরকেটি হোক রপ্তানিকারকদের জন্য। আমরা যে পণ্যটা রপ্তানি করব তার দরুন আমাদের বাইয়ারদের কাছ থেকে যে সেল প্রসিডে  অর্থটা আসবে সেটার বিনিময় হারটা একটু বাড়িয়ে দিলে আমাদের ইকনোমি আরো সাবলীল হবে। আমাদের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সেটা বাড়বে। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যেই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ফরটি বিলিয়ন ইউএস ডলার। এটা এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি রিজার্ভ বলে চিহ্নিত হয়ে আছে। এখানে আমাদের রপ্তানিকারকদের একটা বড় কন্ট্রিবিউশন আছে। প্রবাসীদেরও একটা বড় কন্ট্রিবিউশন আছে।

ভারটেক্স নিউজ: আচ্ছা ড. কায়সার, এই যে করোনাকালে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লো, এর কারণ কী?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: এই করোনাকালে আমরা অনেক আমদানী থেকে দূরে আছি বলেই রিজার্ভের পরিমাণটা বেড়ে গেছে। তবে এই মন্দাবস্থায় অনেক খারাপের মধ্যেও ভালোকিছু দিক আমরা দেখাতে পেরেছি। আমরা যেভাবেই হোক সেটা অর্জন করতে পেরেছি। সরকার প্রণীত কিছু প্রণোদনা আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। যেসব ইন্ডাস্ট্রি তাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যায় ছিল, সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে প্যাকেজ গার্মেন্টস শিল্পের জন্য দিয়েছে সেটা বিভিন্ন ফ্যাক্টরি নিয়ে তাদের শ্রমিকদের তিন বা চার মাসের বেতন ভাতা দিতে পেরেছে এতে কিন্তু আমাদের একটা সামাজিক অস্থিরতা দূর করতে পেরেছি। আরেকটা হচ্ছে আমাদের যে ফুড সিকিউরিটি বা খাদ্য নিরাপত্তা, এক্ষেত্রে কিন্তু আমরা এগিয়ে আছি। খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা এগিয়ে থাকার কারণে করোনাকালীনও আমাদের কোনো খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় নি। যার কারণে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর কোনো আঘাত আসে নি। মূলত এই বিষয়গুলোই আমাদের আগামী দিনগুলোর জন্য প্রেরণার শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

ভারটেক্স নিউজ: ড. কায়সার, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি প্রসঙ্গে আমরা আপনার কাছে জানতে চাইব যে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার কোনটি এবং সেখানে কত মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়?

ড. কামরুজ্জামান কায়সার: আমাদের রপ্তানিমূখী পোষাকশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার উত্তর আমেরিকা। ওই অঞ্চলেই আমাদের টোটাল এক্সপোর্টের ৫৩ পার্সেন্ট মার্কেট শেয়ারিং হয় সেখানে। আমাদের টোটাল রপ্তানির পরিমাণ হচ্ছে আট বিলিয়ন ইউএস ডলার। তার ভিতর প্রায় সোয়া চার বিলিয়ন ইউএস ডলারের পণ্য উত্তর আমেরিকা -ওই অঞ্চলে রপ্তানি হয়। আর বাকি ৪৭ পার্সেন্ট বা পৌণে চার বিলিয়ন ইউএস ডলারের পণ্য ইউরোপ এবং অন্যান্য অঞ্চলে যেমন- এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা, মিডল ইস্ট এসব অঞ্চলে যায়। তো আমাদের এই বাজারটি ইউরোপ এবং আমেরিকার মাধ্যমেই এত বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ আমরা ইতোমধ্যেই ব্র্যান্ড ইমেজ হিসেবে দাঁড় করিয়েছি। আমি সবসময় বলি যে, আমাদের বাংলাদেশকে বর্তমানে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে দুটো বড় দিক রয়েছে। এর একটা হচ্ছে গার্মেন্ট শিল্প আরেকটি হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। যারা ক্রিকেট খেলে, ক্রিকেট প্লেয়িং নেশন যারা, তারা আমাদেরকে চেনে। আমাদের চেনার কিন্তু বড় দুটো জিনিস। আগে হয়ত আমাদের ঝড়, আমাদের দুর্ভিক্ষ বা অন্যান্য ন্যাচারাল ক্যালামিটিজের কারণে আমাদের একটা খারাপ পরিচিতি ছিল, নেগেটিভ ইন্ট্রোডাকশন ছিল- সেটা আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তৈরি পোষাক শিল্পের বাজার দখল করে সস্তা, সুন্দর এবং মানসম্পন্ন তৈরি পোষাকশিল্প সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বেশ ভালো একটা পরিচিতি পেয়েছে বাংলদেশের গার্মেন্টস শিল্প। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো দিক। এজন্য আমাদের এই শিল্পের পেছনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অনেক শ্রম, অনেক মেধা, অনেক সময় এবং অনেক প্রচেষ্টা রয়েছে। তারপরই আজকের এ পর্যায়ে এসেছি। এজন্য রব্বুল আলামিনের কাছে আমি শুকরিয়া আদায় করি। (চলবে– কাল যাবে, পার্ট ০২)

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/আয়েশা

Categories: অর্থনীতি,শীর্ষ সংবাদ

Leave A Reply

Your email address will not be published.