বৃহস্পতিবার ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ ২৮ মার্চ, ২০২৪ বৃহস্পতিবার

স্পর্শকাতর জিউস পুকুর বিতর্কের শেষ কোথায়?

সুভাষ সাহা: মেয়র আইভী’র পরিবারের বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাৎ অভিযোগের খবর এখন নারায়ণগঞ্জের ‘টক অফ দী টাউন’! গতকাল (১১ নভেম্বর) বুধবার স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে ‘মেয়র আইভী’র পরিবারের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়া মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি ‘জিউস পুকুর’ দখলের অভিযোগ তোলা হয়।বিশেষ করে, মানববন্ধনের ব্যানারে মূদ্রিত আকারে ‘মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী’র পরিবার কর্তৃক দেবোত্তর সম্পত্তি জিউস পুকুর দখল ও আত্মসাৎ’ লেখা অভিযোগটি সবার দৃষ্টি কেড়েছে!

উল্লেখ্য,বহুল আলোচিত শতবর্ষী শতকোটি টাকা সমমূল্যের মন্দির ঘেঁষা বিশাল ‘জিউস পুকুরটি’ দেবোত্তর সম্পত্তি হলেও স্বাধীনতাউত্তর কোন একসময় সবার অগোচরে ৩৬৭ শতাংশ আয়তনের এই বিশালাকার পুকুরের মালিকানা পরিবর্তন হয়ে যায়!

সূত্র জানায়, জনৈক সেবায়েতের কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে এই সম্পত্তির হাতবদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় অত্যন্ত সঙ্গোপনে! কিনে নেয় স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার। খবরটি প্রকাশের পর রহস্যময় কারণে সুদীর্ঘকাল জোড়ালো কোন প্রতিবাদ বা দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়েনি! পরবর্তীতে মালিকানা সত্ব নিয়ে মামলামোকদ্দমা হলেও দুর্বল প্রতিপক্ষের কারণে একতরফা রায়ে দেবোত্তর পুকুরটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

দলিলপত্রে অন্যতম মালিকদের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রয়াতঃ মাহাতাবউদ্দিন ও জমির আহমেদ ও বিএনপির যুবদল নেতা জাকির খানগং। উল্লেখ্য,প্রথমোক্ত দুই মালিক মরহুম মাহাতাবউদ্দিন আহমেদ ও জমির আহমেদ মেয়র আইভী’র নিকটাত্মীয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পরিচয়টিই বর্তমানে মেয়র আইভী’র ভাবমূর্তি রক্ষায় চরম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

এই প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশ থেকে মন্দিরের মালিকানাধীন ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়ে জেলাপ্রশাসকের দপ্তরে একটি স্মারকলিপিও হস্তান্তর করা হয়।

এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ পুকুরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোন সংস্রব নেই। এটি রাজনৈতিক নোংরামি মাত্র’।

তবে, একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে, ঐতিহ্যবাহী দেবোত্তর পুকুরটি দখলের অভিযোগ মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী’র বিরুদ্ধে কিন্তু করা হয়নি। অভিযোগটি মূলতঃ মেয়র আইভী’র পরিবারের বিরুদ্ধে?

বাপ-চাচা-জেঠাদের কোন দায় আইভী’র উপর চাপানো যায় কি না সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে?

এ ব্যাপারে মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

শেষকথা; সরকারের বিদ্যমান আইনে জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী এই জিউস পুকুরটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবর্জনার স্তুপে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভরাট হতে হতে এ মুহূর্তে বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

মালিকানা সংকটের সুরাহা হওয়ার আগেই পুকুরটি তার ঐতিহ্য ফিরে পাক এটাই এই মুহুর্তে পুকুরের চারপাশের বাসিন্দাদের প্রত্যাশা। এতে সামগ্রিক পরিবেশটাও বদলে যাবে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিষেরবাঁশী.কম/ডেস্ক/সুভাষ সাহা

Categories: নারায়ণগঞ্জের খবর,শীর্ষ সংবাদ

Leave A Reply

Your email address will not be published.