শুক্রবার ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ ২৯ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার

করোনাকালে দেশের একটি মানুষও যেন কষ্ট না পায়: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক: জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী করেছে। করোনার কারণে দেশের অনেক কিছু স্থবির হয়ে যায়, যারা দিনে এনে দিন খায়, তাদের অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ে। তাঁদের প্রত্যেককে খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্য পৌঁছে দিয়েছি, অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। দেশের একটি মানুষও যেন কষ্ট না পায়, খাদ্যের অভাবে না থাকে- সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। অন্যান্য দেশ না পারলেও এই করোনাকালের মধ্যে সরকার বাজেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আজ বুধবার সংসদে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই আলোচনায় আরো অংশ নেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা ও সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ।

আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে দেশের চরম দুঃসময়ে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা একে একে মৃত্যুবরণ করছেন, মনে হচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে একটা একটা করে পাতা ঝড়ে পড়ছে।

তিনি আরো বলেন, চরম এই দুঃসময়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিনিয়ত এ দুঃসময়ে সাহসের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন, এদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

বিজ্ঞাপনটি দেখতে ক্লিক করুন

করোনাভাইরাসের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আমফান মোকাবেলা করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের সময়ে প্রায় ২৪ লাখ লোককে আমরা নিরাপদ জায়গা সরিয়ে নিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিপুল সংখ্যেক মানুষকে নিরাপদ শ্লেল্টারে সরিয়ে ফেলায় ঘূর্ণিঝড় আমফান অনেক কিছুর ক্ষতি করতে পারলেও আমরা অনেক মানুষের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।

করোনার দুঃসময়ে কষ্টে থাকা মানুষকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও অনেক বিত্তশালী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে নিজেদের আত্মীয়ের লাশ ভয়ে ফেলে চলে গেছেন, পুলিশ ছাড়াও আমার ছাত্রলীগের ছেলেরা সেই লাশ দাফন করছেন। ভীত হয়ে আত্মীয়ের লাশ ফেলে যাওয়া- এটা একটা অমানবিক কাজ। আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগের ছেলেরা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে ধান কেটে দিয়েছে, ধান মাথায় নিয়ে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেয়, সেই কাজটুকু করতে হবে। সেই কাজ যতক্ষণ শেষ না হবে, ততক্ষণ আমি কাজ করে যাব। যখন সময় শেষ হয়ে যাবে আমিও চলে যাব। এনিয়ে চিন্তার কিছু নাই। সংসদ বাজেট এই দুর্যোগের সময় অনেক দেশ দিতে পারছে না। আমি বলেছি, না একদিকে করোনা মোকাবেলা করব, অন্যদিকে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনটা যাতে চলে, তারা যেন কষ্ট না পায়, সেজন্য যা করণীয় সেটা আমি করে যাব। আমি তো এখানে অনন্তকাল বেঁচে থাকার জন্য আসি নাই। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতেই এসেছি। কাজেই এটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চলুন সবাই মিলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি এই করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানব জাতি যেন রক্ষা পায়।

চলতি সংসদের প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর যাঁদেরকে সবসময় পাশে পেয়েছে প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা তাঁদের একজন। অত্যন্ত সাহসী, ত্যাগী ও সাহসী নেতা ছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম কাতারে থেকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। একে একে অনেককেই আমরা হারিয়ে ফেলছি, কিন্তু বর্তমান এমন একটা পরিস্থিতি তাতে মৃত্যুর পর অনেক পরিচিতদের দেখতে পর্যন্ত যেতে পারছি না। অপর সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন অসুস্থ্য থেকেও এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সহায়তা দিয়েছেন। আমি মানা করা পরও শুনেননি, উল্টো বলেছেন মানুষের কাছে না গেলে তাঁর ভাল লাগে না।

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন অনার্সে পড়ি, তখন মাস্টার্সের ছাত্রী ছিলেন মমতাজ বেগম। একসঙ্গে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল করেছি। ওয়ান ইলেভেনে আমি বিরোধী দলের নেতা হলেও আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আমার বিরুদ্ধে বিএনপি ছাড়াও ওয়ান ইলেভেনের সময় অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। আমাকে যখন আদালতে আনা-নেওয়া করা হয়, তখন মমতাজ বেগমকে দেখেছি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে, সবসময় উনি আমার পাশে ছিলেন।

প্রয়াত সংসদ সদস্য কামরুন নাহার পুতুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে অনেককেই জিয়াউর রহমান হত্যা করেছে। সাবেক এমপি পুতুলের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান পটলকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

নিজের প্রিয় শিক্ষক এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী বা যাই-ই হই না কেন, আসাদুজ্জামান স্যারকে আমি সবসময় নিজের শিক্ষক হিসেবেই সম্মান করতাম। তাঁর বয়স হয়েছিল। তাঁর চিকিৎসার সব ধরণের ব্যবস্থাও করেছিলাম। এই দুঃসময়ে অনেক বিশিষ্টজনকে আমরা হারিয়েছি। কাকে ছেড়ে কার কথা বলবো। প্রকৌশল জামিলুর রেজা চৌধুরী পদ্মা সেতু নির্মাণে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন, সবসময় খোঁজ-খবর রাখতেন। তাঁর অবদান সকলে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আলোচনার শেষ পর্যায়ে চলতি সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুনের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র: কালের কন্ঠ

বিষেরবাশিঁ.কম/ডেস্ক/মৌ দাস

Categories: জাতীয়

Leave A Reply

Your email address will not be published.