শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

খামখেয়ালের বেড়াজালো দুদেশের হাজার কোটির বাণিজ্য

বেলাল চৌধুরী(কমিশনার,বেনাপোল কাস্টমস): বেনাপোল দিয়ে দুমাস ধরে ভারতীয় পণবোঝাই ট্রাক ঢোকা বন্ধ। অপেক্ষমাণ পাঁচ হাজার ট্রাকে সবই আমাদের পণ্য। এগুলোর এলসির টাকা পরিশোধ হয়েছে। কালিতলাসহ বিভিন্ন পার্কিংয়ে রক্ষিত ট্রাকের প্রতিদিন ভাড়া যোগ হচ্ছে। ভুগছে দেশের আমদানিকারক, বাজার, ভোক্তা।

অক্সিজেন, ওষুধের কাঁচামাল, পাট, ধান, ভুট্টাবীজ, শিশুখাদ্য, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মসলা, ফলমুল, শিল্পের কাঁচামাল পড়ে আছে। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে খোলা আকাশের নিচে। ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষায়, ওপারের স্থানীয় কিছু সমাজপতির নির্দয় লোভের ভাগাভাগির অবনিবনায় এ ভোগান্তি।

পণ্য ট্রাকে উঠলেই মূল্য পরিশোধ! এলসিতে প্রাপকের মূল্য পরিশোধের শর্তে এমনই থাকে। আমাদানিকারকরা ভারতীয় পণ্যের জন্যেই এলসি খুলেছে। অন্যদেশের পণ্য সমুদ্রপথে সময়মতো চলে আসছে। আসেনি ভারতীয় পণ্য। ফলে, লোকসানের সাথে বাজারে কৃত্রিম সংকটের সম্ভাবনা থাকলেও আমাদের নীতিনির্ধারকদের পরিণামদর্শিতায় সেটা হয়নি।

বিজ্ঞাপনটি দেখতে ক্লিক করুন

সকল প্রতিবাদের পরিণতি ট্রাক বন্ধে। বলা নেই কওয়া নেই, একজন বললো, বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকবে না। আর বন্ধ হয়ে গেল। গত আড়াই বছর দেখছি। বিনা নোটিশে কৃত্রিম সংকটে ট্রাক বন্ধের যতো অজুহাত। কর্মচারী, ড্রাইভারের ঝগড়া, দুই সংগঠনের বিরোধ, শ্রমিক কর্মচারী ড্রাইভার ধর্মঘট, নতুন টীমের যোগদান, যাই নতুন ঘটুক আগে ট্রাক ঢোকা বন্ধ! আর্থিক ক্ষতি গুনছে আমাদের আমাদানিকারক, ভোক্তারা।

করোনা দুর্যোগ বাণিজ্য সচল করতে দুদেশের সরকার বদ্ধপরিকর। স্বাস্থ্য সতর্কতা বজায় রেখে বাণিজ্য চলবে। প্রতিদিন যোগাযোগ করেছি। দফায় দফায় সভা হয়েছে। সেই ২৩মার্চ থেকে লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছি! ট্রাকে বোঝাই জরুরী পঁচনশীল পণ্যগুলো অন্তত পাঠিয়ে দিক। বীজগুলো নষ্ট হচ্ছে। বীজতলার সময় যাচ্ছে। ফলগুলো পঁচে যাচ্ছে। দেব, দিচ্ছি করে, দিল না। দেব না, কখনো বলে না। অথচ আজ পর্যন্ত হলো না। উভয় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেল না।

পণ্য ট্রাকে ওঠার পর খালাস পর্যন্ত যাবতীয় খরচ আমদানিকারকের। শেষে পড়ে ভোক্তার ঘাড়ে। একটা দশ মে. টন পেঁয়াজের ট্রাকের প্রতি দিন অপেক্ষার ভাড়া দুহাজার রুপির বেশী। দুমাস অপেক্ষা ধরলেও ১লাখ ২০হাজার টাকা বা কেজি প্রতি ১২টাকা বেড়ে যায়। পঁচনের খরচও ভোক্তার ঘাড়ে।

কভিড১৯ প্রাদুর্ভারের কারণে দুদেশের বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শুরুর অগ্রাধিকার তাগিদ ছিল দুদেশের সরকারের। দিল্লী থেকে আদেশ এসেছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন নিবিড় তদারকি করছে। আমরা তৈরি আছি, নিশ্চিত করলাম। বাণিজ্য শুরুর সব প্রায় চুড়ান্ত। হলো না। বনগাঁর স্থানীয় কয়েক নেতার খামখেয়ালিপনায়।

অজুহাত হিসেবে বনগাঁয় কিছু তৈরি গুজব রটানো হয়েছে। বেনাপোলে করোনায় শতাধিক মৃত্যু, রাজ্যসরকারের আইনি বাধা, ড্রাইভার সংকট, সিএন্ডএফ অনুপস্থিতি, লেবার নেই, আজ সন্ধ্যা হয়ে গেছে, কাল সকাল হয়েছে ইত্যাদি।

তবু আশা ছাড়িনি। সভা হচ্ছে। আলোচনা চলছে। আজ হবে, কাল হবে। দুমাসেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শুরু হয়নি। এ টালবাহানা ২৮ মার্চ থেকে শুরু। ৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল প্রতিদিনই ট্রাক ঢোকার কথা। ১৩এপ্রিল অবশ্যই আসবে। আসেনি। ৩০এপ্রিল পাট ও ভুট্টাবীজের দুটো ট্রাক ঢোকে। ২এপ্র্রিল পাট ও ভুট্টাবীজের কয়েকটি গাড়ি ঢোকে। তারপর আকস্মিক আবার বন্ধ হয়ে যায়।

বিশ্ববাণিজ্যে ক্রেতা সর্বত্র অগ্রাধিকার। বেনাপোলেই একমাত্র ক্রেতা নিগৃহীত। আমাদের সর্বংসহা আমদানিকারকরা মেনেও নিয়েছেন।

তবে গত দুবছর বোনপোলের সাথে পাল্লা পেট্রাপোলে আগের চেয়ে বাণিজ্য ও যাত্রীসেবায় উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় মাননীয় হাইকমিশনারের ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যোগে। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।

স্বেচ্ছারিতায় অতিরিক্তেরও সীমা থাকবে। অনিয়ম বেশী হতে দিলে যেমন নিয়ম হয়ে যায়। ৩৫হাজার কোটি টাকার বৃহত্তম বাণিজ্য কিছু ব্যক্তির খামখেয়াল ও অনিয়ম নির্ভর চলতে পারে না। অনিয়ম বন্ধের সময় এসেছে। আইন, বিধি, নিয়মতান্ত্রিকতা মানার। ক্রেতার অবস্থান জানান দেয়ারও।

বিষেরবাশিঁ.কম/ডেস্ক/মৌ দাস

Categories: আন্তর্জাতিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.