অনলাইন ডেস্ক: আজ ভোর থেকেই দিনভর ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকাগামী যাত্রীদের জটলা লেগেই ছিল। দূরপাল্লার কোন গাড়ি না থাকায় পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও লেগুনাসহ অন্যান্য ছোট যানবাহনগুলো তিনগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করছে যাত্রীরা।
কোনো গণপরিবহন না থাকায় বেশি ভাড়া দিয়েই শিল্পী উঠেছিলেন একটি পিকআপ ভ্যানে। কিন্তু সেখানে বাঁধসাধে পুলিশ। গাড়ি থেকে সকল যাত্রীকে নামিয়ে জরিমানা করা হয় চালককে। যাত্রিদের আর গাড়িতে ওঠা হলো না। আবার হাঁটা শুরু মহাসড়ক ধরে। যেখানে গাড়ি পাবে সেখান থেকে গন্তব্যে পৌছার জন্য গাড়িতে উঠবেন সবাই। মহাসড়কে জটলা দেখলেই কিছুক্ষণ পর পর ধাওয়া দিয়ে যাত্রীদের সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
দুপুরে তাদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয়, ত্রিশালের সীমান্তবর্তী এলাকা ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই গ্রামের স্বামীহারা চল্লিশোর্ধ শিল্পী আক্তার। তিনি জানান, তিন সন্তানের জননী বসবাস করেন ঢাকার সাভারে। চাকরি করেন একটি গার্মেন্টসে। গত ২৫ মার্চ গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে চলে এসেছিলেন নিজ গ্রামে। রোববার থেকে আবার খোলা হবে অফিস। যানবাহন না থাকায় প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন ঢাকায় যাওয়ার জন্য।
স্বামীহারা চল্লিশোর্ধ বয়সী পোশাক কর্মী শিল্পী আক্তার বলেন, জীবিকার তাগিদে আতঙ্কের মধ্যেই রওনা হয়েছি। সব ভয়কে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছি। চাকরি চলে গেলে তিন সন্তান নিয়ে কী খেয়ে বেঁচে থাকব।
রাস্তায় অপেক্ষারত অধিকাংশ যাত্রীদের রোববার থেকে খোলা ছিল অফিস। সময়মত কর্মস্থলে পৌছার জন্য ৫/১০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে মহাসড়ক পর্যন্ত পৌছে দুর্ভোগ আর চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ঢাকামুখী যাত্রীরা। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের টহল টিম থাকায় আরো এক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে গুলশান সিনেমা হলের সামনে।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা আপনাকে কেন ঘরে আটকে রাখতে পারল না তা জানতে চাইলে শিল্পী বলেন, ‘ঠিকসময়ে অফিসে না গেলে চাকরি হারাবো। পেটের তাগিদেই ঢাকা রওনা হয়েছি। সব ভয়কে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছি। কারন চাকরি চলে গেলে তিন সন্তান নিয়ে খাবো কি আর বাঁচবো কীভাবে?’
এসময় উপজেলার পোশাক কর্মী করিম মোল্লা, আনোয়ারসহ অনেকেই বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছিল। তবু আমরা বের হয়েছি। এখন যেহেতু অফিস খোলা, আমাদেরকে যোগদান করতেই হবে। দুরপাল্লার যানবাহন বন্ধ, বাইরে বের হয়ে গাড়ি পাচ্ছিনা। যত কষ্টই হউক, যেকোন যানই হউক আমাদেরকে ঢাকায় পৌছতে হবে। সময়মত যোগদান না করলে চাকরি চলে যাবে। আমাদের মতো অসহায় তো আর সবাই না। ভাগ্যের ওপর সব ছেড়ে দিয়েছি।
দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ত্রিশাল থানার এসআই আবদুল কাইয়ুম জানান, ‘সকাল থেকেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। আমরা মানুষের জটলা দেখলেই তাদেরকে সরানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ধাওয়া খেয়ে যাত্রীরা এদিক ওদিক ছোটাছোটি করে আবার একসঙ্গে জড়ো হয়ে আবার গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।’
সূত্র: আমাদের সময়
বিষেরবাঁশি.কম/ডেস্ক/মৌ দাস