শনিবার ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ শনিবার

ক্যাসিনোতে কোটি টাকা খুইয়েছেন প্রকৌশলী রকিব

বিষেরবাঁশি.কম: বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) উত্তরা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাতক রকিব উদ্দিন অনলাইনে ক্যাসিনো খেলে প্রায় কোটি টাকা খুইয়েছেন। গত ডিসেম্বরে রকিব একবার নিখোঁজ হলে কয়েকদিন পর আবার ফিরে আসেন। সেসময় নিখোঁজ থাকার সময় তার মোবাইল ফোন বাসায় ছিল। অনেক লোক ফোন করে তার কাছে টাকা পাওয়ার কথা বলেছিল। তখনই স্বজনরা তার এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বিষয়টি জানতে পারেন। কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে বাসায় ফিরে আনার পর তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন সদুত্তর দেয়নি। সেসময় নিখোঁজের পর রাকিব যখন ফিরে আসেন তখন পরিবারের লোকজন তাকে চাপ দিলে বাড়িওয়ালি (ডলি বেগম) তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে বলে জানিয়েছিলেন। রকিবের নোটবুকেও ডলি বেগমের নামে কিছু কথা লেখা রয়েছে। এসব তথ্য মামলার তদন্তকারী সূত্রের। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কে সি মডেল স্কুলের পেছনে দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকায় একটি বাড়ির পাঁচতলায় রকিব উদ্দিন ভূঁইয়া লিটনের বাসায় তার স্ত্রী মুন্নি বেগম (৩৭), তাদের ছেলে ফোরকান উদ্দিন (১২) ও মেয়ে লাইভার (৪) লাশ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকেই গৃহকর্তা রকিব লাপাত্তা। এ ঘটনায় রকিবকে আসামি করে শনিবার রাতে দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত মুন্নির ভাই মুন্না রহমান। গতকাল মামলার বাদী ও নিহত মুন্নি রহমানের ভাই মুন্না রহমান বলেন, যেভাবেই হোক রকিবকে খুঁজে বের করতে হবে। তাকে ছাড়া হত্যা রহস্যের জট খুলবে না। এ ঘটনার নেপথ্যে বাড়িওয়ালীরও কিছু ভূমিকা আছে। আমরা চাই খুনি যেই হোক তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নাহলে আমরাও বিপদমুক্ত হবো না। খুনি যদি রকিব হয় তাহলে আমাদের উপরও হামলা চালাতে পারে। কারণ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করতে তিনি আমাদের কাছেও টাকা ধার চেয়েছিলেন। তবে টাকা না দেওয়ায় আমাদের উপরও তার ক্ষোভ ছিল। আর এ কারনে তিনি স্বজনদের উপরও হামলা চালাতে পারেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, ওই বাড়ি থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা জব্দের পর সেখানে কোনও ফুটেজ সংরক্ষিত পাওয়া যায়নি। এতে মনে হচ্ছে খুনি বা তার লোকজন পরিকল্পনা মাফিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ মুছে দিয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআরটি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে মুছে ফেলা ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ওই বাড়ির মালিক মনোয়ার হোসেন জানান, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে রাকিব ভাড়ায় তার বাসায় ওঠেন। এত বছরে পারিবারিক বিবাদের কথা তিনি শোনেননি। তবে কিছুদিন আগে রাকিবের ঋণগ্রস্ততার কথা শোনেন তিনি। গত বুধবার দিনের বেলায় রাকিবের সঙ্গে তার কথোপকথন হয়েছে বলেও জানান মনোয়ার। এ ব্যাপারে র‌্যাব-১ এর পরিচালক লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, রকিবকে সর্বশেষ গত ১২ ফেব্র“য়ারি দেখা গেছে দক্ষিণখান এলাকায়। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ। তার ফোনও বন্ধ। ঘটনার আলামত, পারিবারিক আত্মীয়-স্বজনদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে এটা স্পষ্ট যে, তিনজনই হত্যার শিকার। আমরা রকিবের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছি। গতকাল সোমবার নিহতের একাধিক স্বজন ও তদন্ত সংশিষ্ট পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটি টাকার ঋণ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতেই এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাতে পারেন রকিব। সেই সঙ্গে তারা আশঙ্কা করছেন, রকিব নিজেও আত্মহত্যা করতে পারেন। কারণ নিজ হাতে লেখা ডায়েরির পাতায় রেল লাইনে পড়ে থাকার সেই ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। এ কারণে দেশের কোনস্থানে রেলে কাটা পড়ে কেউ নিহত হয়েছেন কী-না তাও খোঁজ রাখছে দক্ষিণখান ও ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশ। বিষেরবাঁশি.কম/আলমগীর হোসেন/মৌ দাস

Categories: অপরাধ ও দুর্নীতি,সারাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.